ধূমপান সত্যি সত্যি বিষপানের শামিল। ধূমপানের ইতিহাস খুবই পুরনো। সে পুরনোকাল থেকেই এ সর্বনাশা অভ্যাসটি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে বিভিন্ন ঘাতকব্যাধি। তবু মানুষ ধূমপান করেই চলেছে।
পৃথিবীতে বর্তমানে ১২০ কোটি ধূমপায়ী,যা কি না পৃথিবীর জনসংখ্যার এক-পঞ্চমাংশ। প্রায় ৩০ লাখ লোক প্রতি বছর ধূমপানজনিত বিভিন্ন রোগের কারণে মৃত্যুবরণ করছে। যা হিসাব করলে দাঁড়ায় মিনিটে প্রায় ছয়জন।
এ হতভাগ্য ধূমপায়ীদের বৃহৎ অংশই বাস করে এ মহাদেশে। ধূমপানের কুফলে শরীরের প্রায় সব অঙ্গই সরাসরি আক্রান্ত হয়। তবে ফুসফুস এবং হৃদযন্ত্রই বেশি আক্রান্ত হয়। ফুসফুসসংক্রান্ত রোগের মধ্যে ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস অন্যতম।
এ রোগটির অনেক কারণ রয়েছে। তবুও ধূমপান হচ্ছে এর প্রধানতম কারণ। ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিসে ভোগা একজন ধূমপায়ী হারিয়ে ফেলে তার প্রাণশক্তি। সারা দিন কাশি আর শ্বাসকষ্ট লেগেই থাকে। এভাবে যে কত শ্রম দিবস নষ্ট হয়ে যাচ্ছে তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই।
বর্তমান বিশ্বে হার্ট অ্যাটাক হলো প্রধান প্রাণঘাতী রোগ। মুহূর্তের মধ্যে ছোবল মেরে নিয়ে যায় একটি জীবন। স্পষ্ট বোঝা যায় কী মারাত্মক এ হার্ট অ্যাটাক নামক ঘাতক ব্যাধিটি। এ হার্ট অ্যাটাকের যদিও অনেক কারণ রয়েছে তবুও ধূমপান করলে হার্ট অ্যাটাক হয়ে মরার ঝুঁকি থাকে বেশি। উচ্চ রক্তচাপের জন্যও ধূমপান কোনো কোনো ক্ষেত্রে দায়ী বলে বিবেচিত।
বেগ আর উদ্বেগের মধ্যে আমরা ছুটে চলেছি প্রতিটি মুহূর্তে। কে কার আগে বিত্তবৈভবের নাগাল পাবে তার চিন্তায় মগ্ন। আর এ মগ্ন থাকার সময় ধূমপান করলে নাকি সমাধান নামক গাছের গোড়ায় পানি ঢালা হয়। আমরা ভেবে দেখছি না যে, বেগ, উদ্বেগ, উচ্চ রক্তচাপ আর হার্ট অ্যাটাক সব মিলে সিগারেটের ধোঁয়া আমাদের কিভাবে বিষের বাঁশির মতো নাচাচ্ছে।
আজকাল প্যাসিভ স্মোকিং কথাটি ইতোমধ্যে বেশ প্রচলিত হয়েছে এবং ধীরে ধীরে মানুষও এ প্যাসিভ স্মোকিংয়ের ব্যাপারে সচেতন হয়ে উঠেছে। প্যাসিভ স্মোকিং অর্থই হচ্ছে একজন ধূমপায়ী পাশে বসে থাকা মানুষের নাক দিয়ে সিগারেটের ধোঁয়া প্রবেশকেই বোঝায়।
একজন ধূমপায়ী ধূমপানের ফলে নিজে তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চরমভাবে,সাথে সাথে তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এমনকি প্রিয় সন্তানের সে সর্বনাশ ডেকে আনছেন,সেটা একবার ভেবে দেখছেন কি?
ধূমপানের ফলে একজন ধূমপায়ী নিজে যেমন ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। তেমনি তার পাশে বসে থাকা অন্য লোকও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একজন ধূমপায়ী গর্ভবতী মা ধূমপানের ফলে তার পেটের সন্তানেরও মারাত্মক ক্ষতি করছেন।
ফুসফুসের ক্যান্সারের প্রধানতম কারণ এ ধূমপান। হিসাব করলে দেখা যাবে, হাতেগোনা ক’জন অধূমপায়ী ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন অথবা প্রতিটি ফুসফুসের ক্যান্সারের রোগীর ইতিহাস নিলে দেখা যাবে,গোটা ইতিহাসই ধূমপানের কালো ধোঁয়ায় ভরা।
একজন ধূমপায়ীর শরীরে বার্জার ডিজিজ হয়ে হাত-পা পচে যেতে পারে- যার নিশ্চিত পরিণতি এক পা কিংবা দুই পা কেটে ফেলে দেয়া। জিহ্বা,মুখগহ্বরের ক্যান্সার,ফুসফুসের ক্যান্সার,বার্জার ডিজিজ,স্ট্রোকের মতো সাঙ্ঘাতিক ও ভয়ঙ্কর রোগ থেকে আমরা ধূমপান না করে অনায়াসেই বেঁচে যেতে পারি।
তাই আসুন,আমাদের প্রতিটি ঘরকে ধূমপানমুক্ত করে তুলি এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে আমাদের দায়িত্ব সচেতনতার পরিচয় দিই। একটি কথা মনে রাখতে হবে , ধূমপান করলে কখনোই আপনার সন্তানকে ধূমপানে বারণ করতে পারবেন না।
তাই আজই এ সর্বনাশা অভ্যাসটি ছেড়ে দিন এবং নিজে সুস্থ থাকুন ও অন্যকে সুস্থ থাকতে দিন।
লেখক : অধ্যাপক ডা:ইকবাল হাসান মাহমুদ
:আপডেট,বাংলাদেশ সময় ৮:৩৫ পিএম,১৪ জুলাই ২০১৭,শুক্রবার
এজি