পবিত্র ঈদকে সামনে রেখে চাঁদপুরে সক্রিয় হচ্ছে মোবাইল প্রতারক চক্র ‘অফার পার্টি’। আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সিমকার্ড ব্যবহার করে এসএমএস এবং ফোন কলের মাধ্যমে অভিনব পদ্ধতিতে প্রতারণার জাল বুনছে। তারা সহজ-সরল মানুষকে লটারি জেতার প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণা করে বিপুল পরিমানের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
চক্রটি মোবাইল গ্রাহকদের ‘নামিদামি ব্রান্ডের গাড়ি এবং কোটি কোটি ডলার, ইউরো-পাউন্ড বিজয়ী হয়েছেন’ বলে ফোনকল এবং ম্যাসেজ পাঠিয়ে এহেন কর্মকান্ড চারিয়ে যাচ্ছে। এতে চতুর গ্রহকরা রক্ষা পেলেও সহজ-সরলরা ঠিকই তাদের প্রতারণার জালে পা দিয়ে প্রতারিত হচ্ছে।
তবে এ ক্ষেত্রে রবি, গ্রামীনফোন, এয়ারটেল, বাংলালিংসহ বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর এবং টাকা লেনদেন এর মাধ্যম বিকেশ ও রকেক সহ বিভিন্ন কোম্পানীগুলোর এজেন্ট ও কিছু কিছু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় চক্রটি এহেন কাজ চালিয়ে গেলেও কিছুতেই তারা এর দায় নিচ্ছে না।
রোববার (১১ জুন) তেমনি এক ঘটনা ঘটে চাঁদপুর সদর উপজেলার দেবপুর গ্রামে।
এদিন বিকেলে দেবপুর বাজারে টিপি স্টুডিওতে ১৪ হাজার ৫শ’ টাকা বিকেশ করে স্থানীয় মাদ্রাসা ছাত্র আল-আমি। টাকা বিকেশ করার পরে সে তার মুঠোফোনের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পরে টিপি স্টুডিও’র প্রতিনিধি তার কাছে বিকাশে প্রেরণকৃত ১৪ হাজার টাকা চাইতে গেলে আল-আমিন জানায় তার কাছে কোনো টাকা নেই। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মোবাইলে ২ লাখ টাকা আসবে, তখন সে টাকা পরিশোধ করে দিবে’। এক পর্যায়ে বাজারের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সহযোগিতায় টিপি স্টুডিও’র মালিক মাদ্রাসা ছাত্র আল-আমিনকে গণধোলাই দিয়ে বেঁধে রেখে তার পরিবারের লোকদের খবর দেয়। খবর পেয়ে রামপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়াম্যান মাহাবুবুর রহমান পাটওয়ারীসহ স্থানীয় গণমান্য ব্যাক্তিরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং মাদ্রাসা ছাত্র আল-আমিনের কাছে বিষয়টি জানতে চায়।
হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান আল-আমিন জানায়, সে স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়া-লেখা করে এবং রমজান মাসে সে স্থানীয় একটি মসজিদে তারাবিহ নামাজ পড়িয়ে থাকে। বোববার দুপুরে তার মোবাইল ফোনের ০১৭৪১০৩৩৮৮২ নাম্বারে একটি ফোন আসে। অপরপ্রান্ত থেকে তাকে জানানো হয় যে ‘আপনি সৌভাগ্যবান ব্যক্তি, লটারীতে আপনি ২লক্ষ টাকা পুরস্কার পেয়েছেন। এই টাকা পেতে হলে এখনই আমাদের নাম্বারে ১৪ হাজার ৫শ’ টাকা বিকেশ করেন। তবে বিষয়টি অন্য কারো সাথে সেয়ার করবেন না’। লটারীতে ২ লাখ টাকা পুরস্কার পেয়েছে শুনে সহজ-সরল আল-আমিন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। এরপর সে হতদরিদ্র পরিবারসহ একাধিক জায়গায় চেষ্টা চালিয়েও ১৪ হাজার ৫শ’ টাকা সংগ্রহ করতে না পেরে দেবপুর বাজারে টিপি স্টুডিওতে বিকেশ এজেন্সির কাছে যায়। এরপর তার কাছে টাকা নেই সেটি গোপন রেখে বিকেশ এজেন্সির মাধ্যমে ওই নাম্বারে ১৪ হাজার ৫শ’ টাকা বিকেশ করে।
আল-আমিন ভাবে যে, কিছুক্ষণের মধ্যেই তার মোবাইলে ২ লাখ টাকা চলে এলে সেখান থেকে বিকেশের টাকা পরিশোধ করে দিবে।
এদিকে আল-আমিনের পরিবারের লোকজন ছুটে আসার আগেই বাজারের দোকানদাররা আল-আমিনকে গণপিটুনী দিয়ে মারা´কভাবে আহত করে।
আল-আমিনের পরিবার জানায়, তাদের ছেলে সরল বলে প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে বিকেশ করেছে। তবে এক্ষেত্রে বিকেশ এজেন্সির কাস্টমারের কাছ থেকে টাকা বুঝে না নিয়ে এতোগুলো টাকা সে কেনো বিকেশ এর মাধ্যমে পাঠালো।
এদিকে গত কয়েক মাস পূর্বে মার্কেন্টাইন ব্যাংক এর পরিচালক এবং শিল্পপতি এমএ হান্নানের কাছ থেকেও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে জেলা প্রশাসকের নামে লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয় একটি একটি চক্র। ওই ঘটনার কিছুদিন পরে চাঁদপুর জেলা পুলিশ ৬ হাজার ভুয়া সিমসহ বাংলালিংক কোম্পানির এক ফিল্ড কর্মীকে আটক করে। পুলিশ জানায়, আটক যুবক বিভিন্ন গ্রাহকের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে একাধিক আঙুলের ছাপ নিয়ে সিমকার্ডগুলো রেজিষ্টেশন করে সেগুলো প্রতারক চক্রের কাছে বিক্রি করতো।
এ বিষয়ে জেলার সচেতন মহলের দাবি উল্লেখিত চক্রটি সুকৌশলে তাদের প্রতারণা চালালেও এ ক্ষেত্রে মোবাইল কোম্পানি এবং বিকাশসহ সংশ্লিষ্টরা তাদের দায় এড়াতে পারেন না।
তাদের দাবি, এ ক্ষেত্রে গ্রামীনফোন, রবি, বাংলালিংক ও এরয়ারটেলসহ বিভিন্ন মোবাইল অপারেটর কোম্পানীর পাশাপাশি সহজে টাকা পাঠানো বিকেশ ও রকেট এর কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় প্রতারক চক্রটি কাদের কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ বরারবরের মতোই কোম্পানীরগুলো এ বিষয়ে শুধুমাত্র গ্রাহকদের ঘাড়ে দোষ চাপাচ্ছে।
আশিক বিন রহিম
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২: ০০ পিএম, ১৪ জুন ২০১৭, বুধবার
ডিএইচ