চাঁদপুর সদর উপজেলা বালিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মিলাদ ও অভিভাবক সমাবেশে শনিবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ১০টায় শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে জুতা নিক্ষেপ করেছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।
এই ঘটনায় বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই নেতাকে মারধর করে শ্রেণিকক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন। খবর পেয়ে চাঁদপুর মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনেন।
প্রতক্ষ্যদর্শী ও বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী জানায়, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় বালিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের মিলাদ ও অভিভাবক সমাবেশ পূর্বক শিক্ষক কক্ষে ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি, দাতা সদস্য প্রধান শিক্ষক ও ইউনিয়নের চেয়াম্যানসহ অন্যান্য শিক্ষকরা বসে আলোচনা করছিলেন।
এসময় হঠাৎ করে বিদ্যালয়ের প্রক্তণ ছাত্র ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ওমর ফারুক তালুকদার শিক্ষকদের উদ্দেশ্য নিজের জুতা ছুঁড়ে মারেন। এতে করে ওই কক্ষে হট্টগোল বেঁধে গেলে তাৎক্ষনাত ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি, দাতা সদস্য ও প্রধান শিক্ষক ও ইউপি চেয়াম্যান পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেন।
শিক্ষকদের জুতা মারা খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে শতাধিক বিক্ষুদ্ধ এলাকাবাসী বিদ্যালয়ে প্রবেশ করে অভিযুক্ত ওমর ফারুককে মারধর করে ক্লাশরুমে অবরুদ্ধ করে রাখে।
এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক বেপারী জানান, আমাদের ৪ জন শিক্ষক অসুস্থ্য থাকায় তাদের জন্য আজকে দোয়া ও মিলাদ এবং অভিভাবকদের সমাবেশ হওয়ার কথা ছিলো। ঘটনার সময় আমি পাশের শ্রেণি কক্ষে ছিলাম। কিছুদিন আগে আমাদের নব গঠিত কমিটির বিরুদ্ধে স্থানীয় একজন হাইকোটে রিট করেছে।
এ বিষয়ে অভিভাবক সমাবেশ চলাকালে বিদ্যালয় পরিচানা কমিটি সভাপতি তার বক্তব্যে বলেন, আপনারা কি আমাকে সভাপতি হিসেবে চান কি না। এসময় বিদ্যালয়ের প্রক্তন ছাত্র ওমর ফারুক দাড়িয়ে বলেন, আপনার বিরুদ্ধে একশ’ রিট হলেও আমরা আপনাকেই সভাপতি দেখতে চাই। তার কথার সাথে সাথেই হট্টগোল বেঁধে যায়।
প্রধান শিক্ষক আরো জানান, প্রতিষ্ঠানটি এই এলাকার সকলের। যারা বিদ্যালয় নিয়ে রাজনীতি করেন তাদের কাছে আমার অনুরোধ, দয়া করে রাজনীতিকে বিদ্যালয়ের বাইরে রাখুন। শিক্ষকদের জুতা নিক্ষেপ করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি তবে ওই মুহূর্তে আমি সেখানে ছিলাম না।
বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব সিরাজুল ইসলাম তালুকদার বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি আমাদের অনেক শ্রমে-ঘামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। জুতা নিক্ষেপের আমি এ বিষয়ে কিছুই বলতে চাই না। এ ঘটনার সাথে জড়িত উভয় পক্ষই ক্ষমতাশীল রাজনীক দলের নেতা। আমি অনুরোধ করবো দয়া করে প্রতিষ্ঠানটি সুন্দর ভাবে চলার জন্য সবাই সহযোগিতা করবেন। প্রয়োজনে আমি সভাপতির পদ ছেড়ে দিবো।
বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির দাতা সদস্য জিএম জহিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় আমরা প্রধান শিক্ষকের সাথে পাশের শ্রেণি কক্ষে ছিলাম। পারে জানতে পারি যে ওমর ফারুক শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে জুতা নিক্ষেপ করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, তিনিসহ শিক্ষক শ্রেণি কক্ষে বিদ্যালয়ে সভাপতি, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও অন্যান্য শিক্ষকরা বসে কথা বলছিলেন। হঠাৎ করে ওমর ফারুক দরজায় দাড়িয়ে তার পা থেকে জুতা খুলে ভেতরে ছুড়ে মারেন।
এই ঘটনার অভিযুক্ত ওমর ফারুক জুতা ছুড়ে মারা কথা স্বীকার করে বলেন, কিছুদিন আগে এই বিদ্যালয়ের ম্যানিজিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। অথচ স্থানী এক ব্যাক্তি এইফ কমিটির বিরুদ্ধে হাইকোটে রিট করেছে। প্রক্তণ ছাত্র হিসেবে বিষয়টি যেনে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। আজ (শনিবার) স্কুলে প্রবেশ করে যখন দেখলাম হাইকোর্টে রিট করা ব্যক্তিরা বিদ্যালয়ে বসে আছে তখন মাথা ঠিক রাখতে পারি নি। এই ঘটনার জন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম বলেন, ওমর ফারুক যে কাজটি করেছে তা সত্যিই দুঃখ জনক। শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে তিনি জুতা মারতে পারেন না। আমি এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং দোষি ব্যক্তির শাস্তি দাবি করছি।
এই ঘটনার বিষয়ে চাঁদপুর মডেল থানার ওসি (তদন্ত) হারুনুর রশীদ বলেন, কমিটি নিয়ে হাইকোটে রিট থাকলে সেটি মহামান্য আদালত দেখবে। কোনো ব্যক্তি চাইলে এই প্রতিষ্ঠান বন্ধ করতে পারবে না। সেটি এলাকার মানুষ মেনে নিবে না।
শিক্ষকদে জুতা নিক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, বিষয়টি আমরা ক্ষতিয়ে দেখবো। আমাকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
প্রতিবেদক : আসিক বিন রহিম
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১ : ৫৫ পিএম, ২৯ এপ্রিল ২০১৭,শনিবার
এইউ