আরও ২৮টি ওষুধ কোম্পানির অ্যান্টিবায়োটিক (পেনিসিলিন ও সেফালোস্পোরিন) স্টোরাইড ও ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধের উৎপাদন ও বিপণন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
এ বিষয়ে জারি করা রুল মঞ্জুর করে সোমবার (০৩ এপ্রিল) রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
উৎপাদন বন্ধের নির্দেশ দেওয়া ২৮টি ওষুধ কোম্পানি হচ্ছে- অ্যামিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, এজটেক ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, বেঙ্গল টেকনো ফার্মা লিমিটেড, বেনহাম ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, সেন্ট্রাল ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ডিসেন্ট ফার্মা লিমিটেড, ডা. টিমস ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, গ্লোবেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, গ্রিনল্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইনোভা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ম্যাক্স ড্রাগস লিমিটেড, ম্যাডিমেট ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, মর্ডার্ন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, মিসটিক ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ন্যাশনাল ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, অর্গানিক হেলথ কেয়ার লিমিটেড, ওয়েস্টার ফার্মা লিমিটেড, প্রিমিয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, প্রাইম ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, সীমা ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, হোয়াইট হর্স ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, মমতাজ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, ইউনিক ফার্মাসিউটিক্যালস লি., ইউনাইটেড কেমিক্যাল অ্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, এফএনএফ ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড ইউনিট-১, ইউনিট-২, ইউনিট-৩।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ওই ২৮টি কোম্পানির ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন একই হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, কর্তৃপক্ষ ২৭ ফেব্রুয়ারির আদেশ কার্যকর করে। তবে ওই আদেশের পর নয়টি কোম্পানি এ মামলায় পক্ষভূক্ত হয়।
তিনি বলেন, ওষুধ প্রশাসন ১৫ দিনের মধ্যে ৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করবে। যার সদস্য হবেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একজন প্রতিনিধি, একজন বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের একজন প্রতিনিধি ও ওষুধ প্রশাসনের একজন প্রতিনিধি।
আদালতে আবেদনকারী ওই নয়টি কোম্পানি কর্তৃপক্ষের কাছে জিএমপি (সার্টিফাই গুড ম্যানুফেক্টরি প্র্যাকটিস) নীতিমালা সক্ষমতা অর্জনের আবেদন করলে ওই কমিটি তাদের আবেদন বিবেচনা করবেন।
নয় কোম্পানি হলো- বেনহাম ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড, ডা. টিমস ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, গ্লোবেক্স ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, গ্রিনল্যান্ড ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড, ম্যাডিমেট ল্যাবরেটরিজ লিমিটেড, অর্গানিক হেলথ কেয়ার লিমিটেড, অ্যামিকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড ও অর্গানিক হেলথ কেয়ার লিমিটেড।
আদালতে এ নয় কোম্পানির পক্ষে ছিলেন ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ফিদা এম কামাল, কামরুল হক সিদ্দিকী, জে কে পাল, এ এম আমিন উদ্দিন, রমজান আলী সিকদার, রাগীব রউফ চৌধুরী ও মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী।
আদালতে ফেব্রুয়ারি মাসে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে রিট আবেদনটি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।
পরে এক বিজ্ঞপ্তিতে তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা ‘জিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকটরি প্র্যাকটিস)’ অনুসরণ না করে ২৮টি কোম্পানি নিম্নমানের অ্যান্টিবায়েটিক, স্টোরাইড ও ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদন ও বিপণন করছে। এতে জনস্বাস্থ্যের মারাত্মক ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে’।
‘ওষুধের মান ঠিক রাখতে উৎপাদন পদ্ধতি, লোকবল, ফ্যাক্টরির অবস্থান, পদ্ধতি, প্যাকেট, বোয়িংসহ অনেক বিষয়ে নির্দেশনা রয়েছে জিএমপি নীতিমালায়। এ নীতিমালাটি আমাদের দেশের প্রচলিত আইনেও স্বীকৃত। ফলে জিএমপি লঙ্ঘন করে ওষুধ উৎপাদন সম্ভব নয়’।
রিট আবেদনে বলা হয়, ওষুধ নিয়ন্ত্রণ অধ্যাদেশ ১৯৮২ এর ১৫ (১) ধারা অনুসারে প্রতিটি ওষুধ উৎপাদনকারী কোম্পানি অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জিএমপি অনুযায়ী ওষুধ উৎপাদন করবে।
১৫(২) ধারায় বলা হয়েছে, ‘যদি কোনো ওষুধ কোম্পানি জিএমপি অনুসরণ না করে, তবে সে সকল কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল অথবা সাসপেন্ড করা যেতে পারে’।
১৭ ধারায় নিম্নমানের ওষুধ প্রস্তুত, মজুদ, অথবা বিক্রির জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড অথবা অনধিক এক লাখ টাকা জরিমানাসহ শাস্তি অথবা উভয় দণ্ডের শাস্তির বিধান রয়েছে।
মনজিল মোরসেদ বলেন, নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনের অভিযোগ এনে জাতীয় সংসদের স্পিকারের অনুমতিক্রমে গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করে তাদের উৎপাদিত অ্যান্টিবায়োটিক, স্টোরাইড ও ক্যান্সার প্রতিরোধক ওষুধ উৎপাদন বন্ধের সুপারিশ করে। কিন্তু এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় জনস্বার্থে এ রিট আবেদনটি করা হয়।
এর আগে একই হাইকোর্ট বেঞ্চের নির্দেশে ২০টি কোম্পানির সকল ধরনের ওষুধ ও ১৪টি কোম্পানির সকল ধরনের এন্টিবায়োটিক উৎপাদনও বন্ধ রয়েছে। মানসম্মত ওষুধ উৎপন্ন না করায় এ সকল কোম্পানির লাইসেন্সও বাতিল করে দেন হাইকোর্ট।
উৎপাদন বাতিল হওয়া আগের ২০টি ওষুধ কোম্পানি হলো- এক্সিম ফার্মাসিউটিক্যাল, এভার্ট ফার্মা, বিকল্প ফার্মাসিউটিক্যাল, ডলফিন ফার্মাসিউটিক্যাল, ড্রাগল্যান্ড, গ্লোব ল্যাবরেটরিজ, জলপা ল্যাবরেটরিজ, কাফমা ফার্মাসিউটিক্যাল, মেডিকো ফার্মাসিউটিক্যাল, ন্যাশনাল ড্রাগ, নর্থ বেঙ্গল ফার্মাসিউটিক্যাল, রিমো কেমিক্যাল, রিদ ফার্মাসিউটিক্যাল, স্কাইল্যাব ফার্মাসিউটিক্যাল, স্পার্ক ফার্মাসিউটিক্যাল, স্টার ফার্মাসিউটিক্যাল, সুনিপুণ ফার্মাসিউটিক্যাল, টুডে ফার্মাসিউটিক্যাল, ট্রপিক্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল এবং ইউনিভার্সেল ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।
অ্যান্টিবায়েটিক ওষুধ উৎপাদনের অনুমতি বাতিল করা ১৪টি কোম্পানি হলো- আদ-দ্বীন ফার্মাসিউটিক্যাল, আলকাদ ল্যাবরেটরিজ, বেলসেন ফার্মাসিউটিক্যাল, বেঙ্গল ড্রাগস, ব্রিস্টল ফার্মা, ক্রিস্ট্যাল ফার্মাসিউটিক্যাল, ইন্দো-বাংলা ফার্মাসিউটিক্যাল, মিল্লাত ফার্মাসিউটিক্যাল, এমএসটি ফার্মা, অরবিট ফার্মাসিউটিক্যাল, ফার্মিক ল্যাবরেটরিজ, পনিক্স কেমিক্যাল, রাসা ফার্মাসিউটিক্যাল এবং সেভ ফার্মাসিউটিক্যাল লিমিটেড।
নিউজ ডেস্ক
আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৪: ৩০ পিএম, ৩ এপ্রিল ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ