সুস্থ শরীরের অন্যতম অনুষঙ্গ রক্ত। শরীর থেকে বের যাওয়ার পর তা নাপাক। কোন কারণ ছাড়া একজনের রক্ত অন্যের শরীরে স্থানান্তর করা হারাম।
দুটি কারণে: ক. মানুষের প্রত্যেক অঙ্গ সম্মানিত। যা অন্যান্য প্রাণী থেকে মানুষের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট। এ সম্মান স্রষ্টা প্রদত্ত। রক্ত মহান আল্লাহ কর্তৃক সংরক্ষিত। সুতরাং এ সম্মানিত ও সংরক্ষিত মানবীয় অংশ দেহ থেকে পৃথক করে অন্যত্র সংযোজন স্রষ্টা প্রদত্ত মানবীয় সম্মানের পরিপন্থি ।
খ. মানুষের রক্ত অন্য মানুষের শরীরে স্থানান্তর হারাম হওয়ার দ্বিতীয় কারণ; রক্ত নাপাক। আর নাপাক বস্তুর ব্যবহার হারাম। যা কুরআন, হাদিস, ইজমা দ্বারা প্রমাণিত।
এ পর্যন্ত রক্তের যে আলোচনা হয়েছে তা শরীয়তের মূলনীতি অনুযায়ী করা হয়েছে। বিশেষ প্রয়োজনে শরীয়তের মূলনীতি শিথিল হয়।
বিশেষ প্রয়োজনের বিবেচনা করে বিদগ্ধ ফকীহগণ রক্ত ব্যবহার বৈধ হওয়ার যে পর্যালোচনা পেশ করেছেন, তা হলো; ক. রক্ত নারীর দুধের ন্যায়। দুধ কোনোরূপ কাটা-ছেঁড়া ছাড়াই একজনের শরীর থেকে অন্যের শরীরের অংশে পরিণত হয়। রক্তও দুধের মতো। কোনোরূপ কাটা- ছেঁড়া বা বিকৃতি ছাড়াই একজনের শরীর থেকে বের করে অন্যের শরীরে স্থাপন করা হয়।
ইসলালামী শরীয়তে নারীর দুধকে শিশুর প্রধান খাবার নির্ধারণ করা হয়েছে। আর শিশুকে মায়ের দুধ পান করানো শুধু জায়েজই নয়, বরং স্বাভাবিক অবস্থায় ওয়াজিব (আবশ্যক)। ফুকাহায়ে কেরাম নারীর দুধ বড়দের জন্য ওষুধ হিসেবে জায়েয সাব্যস্ত করেছেন।
ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে আছে,ওষুধ হিসেবে নারীর দুধ পুরুষের নাকে প্রবেশ করানো কিংবা পান করায় কোন দোষ নেই। (৪/১১২) খ. রক্ত যদিও নাপাক, তবে বিশেষ প্রয়োজনের ক্ষেত্রে নাপাক জিনিস দ্বারা চিকিৎসা করা ও বৈধ।
অনন্যোপায় অবস্থায় হারাম বা নাপাক জিনিস ব্যবহারের মূলনীতি কুরআন ও সমর্থন করে।
মহান রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, ‘‘তিনি (আল্লাহ) তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জীব, রক্ত, শূকরের গোশত এবং সেসব জীব যা মহান আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে উৎসর্গ করা হয়।
অবশ্য যে ব্যক্তি অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং অপরাধপ্রবণ ও সীমালঙ্ঘণকারী না হয়; তার জন্য কোন পাপ নেই। নি:সন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু। (সূরা বাকারা:১৭৩)
হারাম বস্তু ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফতওয়ায়ে আলমগীরীতে বলা হয়েছে, অসুস্থ ব্যক্তির ওষুধে হারামের ব্যবহার জায়েয আছে। যখন অভিজ্ঞ ডাক্তার বলবে নিশ্চয়ই এ রোগের চিকিৎসা ঐ হারাম দ্রব্য ছাড়া সম্ভব নয়। হ্যাঁ, যখন হালাল দ্রব্য দ্বারা চিকিৎসা না হওয়া চূড়ান্তভাবে সাব্যস্ত হবে তখন হারাম দ্রব্য স্থলাভিষিক্ত হবে। (৫/৩৫৫)
উপর্যুক্ত আলোচনার ভিত্তিতে বিদগ্ধ ফকীহগণ নিম্ন লিখিত শর্ত সাপেক্ষে রক্ত দেওয়া বৈধ সাব্যস্ত করেছেন।
১.যখন কোন অসুস্থ ব্যক্তির জীবননাশের আশংকা হয় এবং অভিজ্ঞ ডাক্তারের মতে তার শরীরে অন্যের রক্ত প্রবেশ করানো ব্যতীত বাঁচানোর অন্য কোন পন্থা না থাকে।
২. যখন অসুস্থ ব্যক্তির মৃত্যুর আশঙ্ককা নেই, কিন্তু রক্ত দেওয়া ছাড়া তার জীবনের ঝুকি বাড়ে। অথবা রোগমুক্তি বিলম্বিত হয়, এ দুই অবস্থায় রক্ত দেওয়া জায়েয।
৩. যখন রোগীর শরীরে রক্ত দেওয়ার খুব বেশি প্রয়োজন দেখা না দেয় বরং রক্ত না দেওয়ার অবকাশ থাকে, তখন রক্ত দেওয়া থেকে বিরত থাকবে।
৪. যখন জীননাশের এবং অসুস্থতা বিলম্বিত হওয়ার আশংকা না হয় বরং শুধুমাত্র শক্তি বৃদ্ধি এবং সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশ্য হয়, সে অবস্থায় ইসলামী শরীয়তে রক্তদান জায়েয নয়।
উপর্যুক্ত আলোচনায় রক্তদান পদ্ধতিতে ইসলামি শরীয়ত মতে সম্পূর্ণ বৈধ ও উত্তম কাজ বলে বিবেচিত করা হয়েছে।
অতএব, রক্ত দিয়ে মানুষের সেবায় এগিয়ে আসা আপনারও দায়িত্ব।
নিউজ ডেস্ক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১: ৫৯ পিএম, ০১ মার্চ ২০১৭, বুধার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur