আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। মানুষকে সঠিক দিকনির্দেশনা দেয়ার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবি-রাসুল পাঠিয়েছেন। যারা মানুষের মাঝে তার কালেমার দাওয়াত ও সঠিক জীবন দর্শন তুলে ধরেছেন।
রেসালাতের ধারাবাহিতকায় এ পৃথিবীতে আগমন করেন হজরত মুসা আলাইহিস সালাম। আল্লাহ তাআলা তাঁকে সবচেয়ে বেশি নেয়ামত দান করেছেন। কুরআনুল কারিমে হজরত মুসা আলাইহিস সালালামের নবুয়তি যুগের ব্যাপক আলোচনা ওঠে এসেছে।
হজরত মুসা আলাইহিস সালামের মুখে জড়তা থাকার কারণে তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট প্রার্থনা করেছিলেন, তাঁর সাহায্যে তাঁরই বড় ভাই হজরত হারুনকে সাহায্যকারী হিসেবে নিয়োগ করার জন্য। আল্লাহ তাআলা হজরত মুসা আলাইহিস সালামের দোয়া কবুল করে তাঁর ভাইকে নবি হিসেবে কবুল করেন।
ফেরাউনের অগ্নি পরীক্ষায় মুসা আলাইহিস সালাম
হযরত মুসা আলাইহিস সালাম দুগ্ধ পান করার সময় তাঁর মায়ের কাছেই ছিলেন এবং তাঁর মা ফেরাউনের দরবার থেকে দুধ পান করানোর বিনিময়ে ভাতা পেতেন। শিশু মুসা দুধ পান বন্ধ করে দিলে ফেরাউন ও তার স্ত্রী আছিয়া তাঁকে পালক পুত্র হিসেবে তাদের নিজেদের কাছে নিয়ে যায়।
ওই সময়ে একদিন শিশু মুসা আলাইহিস সালাম ফেরাউনের দাড়ি টেনে ধরে তার গালে একটি চপেটাঘাত করেন। কোনো কোনো বর্ণনায় আছে, ‘তিনি একটি ছড়ি হাতে নিয়ে খেলা করছিলেন। এক সময় ছড়ি দ্বারা তিনি ফেরাউনের মাথায় আঘাত করে বসেন।’
ফেরাউন রাগান্বিত হয়ে তাঁকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন। তখন ফেরাউনের স্ত্রী আছিয়া বললেন, ‘রাজাধিরাজ! আপনি অবুঝ শিশুর অপরাধ ধরবেন না। সে তো এখনও ভাল-মন্দের পার্থক্যও বোঝে না।
আপনি ইচ্ছা করলে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। ফেরাউনকে পরীহ্মা করানোর জন্যে আছিয়া একটি পাত্রে জলন্ত অঙ্গার ও অপর পাত্রে মণিমুক্তা এনে মুসা আলাইহিস সালাম -এর সামনে রেখে দিলেন।
উদ্দেশ্য এই যে-
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম অবুঝ শিশু। শিশুসুলভ অভ্যাস অনুযায়ী সে আগুনের জলন্ত অঙ্গারটির উজ্জ্বল ও সুন্দর মনে করে তা ধারার জন্যে হাত বাড়াবে। মণিমুক্তার চাকচিক্য তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করবে না।
ফলে ফেরাউন বুঝতে পারবে যে, সে যা করেছে, তা শিশুসুলভ আচরণেই (অজ্ঞতাবশতঃ) করেছে। কিন্তু শিশু মুসা আলাইহিস সালাম কোনো সাধারণ শিশু ছিল না, তিনি ছিলেন আল্লাহ তাআলার ভবিষ্যৎ নবি ও রাসুল।
যাঁর স্বভাব-প্রকৃতি জন্মলগ্ন থেকেই অন্যদের চেয়ে ব্যতিক্রম ছিল। মুসা আলাইহিস সালাম আগুনের পরিবর্তে মণিমুক্তাকে ধরার জন্য হাত বাড়াতে চাইলেন; কিন্তু জিবরিল আলাইহিস সালাম তাঁর হাত অগ্নিস্ফুলিঙ্গের পাত্রে রেখে দিলেন।
হজরত মুসা আলাইহিস সালাম ওই সময় আগুনের স্ফুলিঙ্গ তুলে মুখে দিলেন। ফলে তাঁর জিহ্বা পুড়ে যায়। এতে ফেরাউন বিশ্বাস করল যে, মুসা আলাইহিস সালামের এ চড় বা ছড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করার কাজটি উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল না।
এটা ছিল নিতান্তই বালকসুলভ অজ্ঞতাবশতঃ। ওই ঘটনা থেকেই হজরত মুসা আলাইহিস সালামের জিহ্বায় কথা বলার সময় জড়তার সৃষ্টি হয়।
যে ফেরাউন তাঁর ক্ষমতা হারানোর আশংকায় হজরত মুসা আলাইহিস সালামের আগমনের ভয়ে অসংখ্য শিশুকে হত্যা করেছিল। আল্লাহ তাআলা সেই পয়গাম্বর হজরত মুসা আলাইহিস সালামকে তাঁরই তত্ত্বাবধানে রাজ-প্রসাদে লালিত-পালিত করে বড় করলেন।
এ হলো আল্লাহ তাআলার রহমতের বিশেষ নমুনা। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হইও না।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাঁর রহম ও করমের ওপর পরিপূর্ণ আস্থা এবং বিশ্বাস রেখে দ্বীন ও ইসলামের প্রচার-প্রসারে আত্মনিয়োগ করার এবং কুরআন সুন্নাহর বিধান যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
ইসলাম
।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ০৫ : ৫১ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ শুক্রবার
এইউ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur