চাঁদপুরের নদীগুলোতে জাটকা নিধনের মহোৎসব চলছে জেলেদের মাঝে। কে কত বেশি জাটকা শিকার করতে পারে এবং তা বিক্রি করবে এ নিয়ে তাদের মধ্যে চলে প্রতিযোগিতা। এ সকল জাটকা অবাধে বিক্রি হচ্ছে চাঁদপুরের বিভিন্ন বাজারগুলোতে।
ইতোমধ্যে এসব জাটকা নিধনের জড়িয়ে পড়েছে চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের শত শত জেলে পরিবার। ইলিশের রাজধানী চাঁদপুরে, মেঘনা -পদ্মায় মা ইলিশ রক্ষা কার্যক্রম সফল হলেও জাটকা রক্ষা কার্যক্রম তেমন চোখে পড়ছে না।
চাঁদপুরের নদী তীরবর্তী জেলে ছাড়াও পার্শ্ববর্তী জেলার অসাধু জেলেরা এখানে এসে নিধন করছে জাটকা। এ সব জেলেরা মতলব উত্তরের ষাটনল থেকে শুরু করে হাইমচর পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকায় নির্বিচারে প্রতিদিন মহোৎসবের মতো জাটকা নিধনে নেমে পড়ছে।
চাঁদপুর শহরের পুরান বাজার, হরিসভা, বহরিয়া বাজার, ১০নং লক্ষ্মিপুর মডেল ইউনিয়ন, হানারচর ইউনিয়ন, হরিনা ঘাট এলাকা ও হাইমচরের কালি খোলা এলাকায় এসব জাটকা বিক্রির পাইকারী হাট বসে প্রতিদিন। জেলেরা প্রতিদিন ভোর ৪টা থেকে শুরু করে সকাল ৬টা পর্যন্ত এবং রাত ৮টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত ওই সকল বাজারগুলোতে বিক্রির কার্যক্রম চালিয়ে যায়।
এ সময় দুর দুরান্ত থেকে খুচরা বিক্রেতারা এখানে এসে ভিড় জমায় এবং ক্রয় করে নেয় জাটকা। স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়, এ সকল জেলেদের সাথে একটি বড় সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা বিভিন্ন দপ্তর ম্যানেজ করে এসব অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা জেলেদের থেকেও মোটা অংকের মাসোয়ারা আদায় করছে ওই সকল দপ্তরের নাম ভাঙ্গিয়ে।
জাটকা ইলিশ বিভিন্ন বাজারগুলোতে প্রতিনিয়তই বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু বাজারগুলোতে তদারকি করার কেউ না থাকায় তারা নির্ভয়ে বিক্রি করছে। গতকাল ফরিদগঞ্জ উপজেলার চান্দ্রা এলাকার বাজার ঘুরে দেখা যায় সেখানে ১৫/২০জন মাছ বিক্রেতা রয়েছে। তারা সকলে এ জাটকা ইলিশ বিক্রি করছে।
এ সময় পুরো বাজারে জাটকা ইলিশে সয়লাভ হয়ে গেছে। এসকল অসাধু জাটকা বিক্রেতারা নিরাপত্তার কথা ভেবে শহরের বাজার গুলোতে বিক্রি না করে গ্রাম গঞ্জের বাজারগুলোতে অহরহ বিক্রি করছে। মা ইলিশ রক্ষায় প্রশাসনের এতো তোরজোড় থাকলেও জাটকা নিধন প্রতিরোধে এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এ বিষয়ে উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের কাছে আলাপ কালে তারা জানান, ‘আমরা জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নদীর তীরবর্তী এলাকায় মাইকিং করেছি। এছাড়াও অচিরেই এদের বিরুদ্ধে আরো বড় ধরনের পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাবস্থা গ্রহণ করবো।’
জাটকা বিক্রেতাদের একজন ভুট্টুর সাথে আলাপকালে জানা যায়, ‘জেলেরা নদী থেকে যে জাটকা ধরে সেটা এক শ্রেণির দাদনদাররা কিনে এনে তাদেরকে দেয়। সে জাটকা ফেরি করে ও গ্রামের হাট বাজার গুলোতে নিয়ে বিক্রি করা হয়।’
শহর তলীর হাট বাজারে জাটকা বিক্রেতা দেলু দর্জি জানান, ‘মেঘনা নদীর পাড়ে পাইকারি জাটকা বিক্রেতা কাশেম মিজির কাছ থেকে প্রতি কেজি জাটকা ৬০টাকা ধরে ক্রয় করে গ্রাম গঞ্জের বাজারে ১শ হতে শুরু করে ১শ ২০টাকা পর্যন্ত বিক্রি করি। এ পেছনে খরচ হয়ে থাকে প্রতি কেজিতে ২০টাকা।’
জাটকার ক্রেতা শামছুল হক শেখ জানান, ‘অন্য যে কোন মাছ প্রতি কেজি ৪/৫টাকা। যা আমাদের পক্ষে ক্রয় করা সম্ভব না। যার ফলে প্রতি কেজি জাটকা ১শ হতে ১শ ২০টাকায় ক্রয় করে থাকি। যা দিয়ে সংসার চলে যায়।’
জাটকা ক্রেতা ফরিদগঞ্জের মনির হোসেন বলেন, ‘জাটকা মাছ সস্তা। অন্য মাছ অনেক বেশি দাম। ছেলে মেয়েরা জাটকা পছন্দ করে। সন্তানদেরকে একটি জাটকা দিলে তারা অনেক বেশি খুশি হয়ে থাকে।’
এ ব্যাপারে চাঁদপুর নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো: শহীদুল ইসলাম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘জাটকা খোলা বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে তা শুনেছি। আমরা প্রতিদিন স্পিড বোট নিয়ে নদীতে যাই। অসাধু জেলেদেরকে আটক, তাদের কাছে পাওয়া জাটকা ও জাল জব্দ করা হয়। পরে নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জাল বিনষ্ট করে জব্দকৃত জাটকা কোল্ডস্টোরেজে সংরক্ষণ করে থাকি।’
এ ব্যাপারে চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্তাকতা মো: শফিকুর রহমান চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘বাজারে অবাদে জাটকা ইলিশ বিক্রি হচ্ছে না। ২/১জন জাটকা বিক্রি করছে। যারা চুরি করে গোপনে যে সব জেলেরা জাটকা ধরছে তাদের কাছ থেকে এনে বিক্রি করছে। গত সপ্তাহে নৌ-পুলিশের মাধ্যমে ১০জন জেলেকে ধরে এনে জরিমানা করা হয়েছে। এখনও নদীতে অভিযান অব্যাহত আছে। মানুষের চাহিদা পূরনে ও ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছি।’
প্রতিবেদক- মাজহারুল ইসলাম অনিক
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১: ৫০ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭, সোমবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur