নারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে এবারো জাতীয় পুলিশ প্যারেডে নেতৃত্বে দিয়েছেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুুন্নাহার। অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা ও সততার প্রতিদান হিসেবে এ বছর পুলিশ সপ্তাহে তার হাতে তুলে দেয়া হয়েছে পুলিশের সর্বোচ্চ পদক প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম)।
একইসঙ্গে গতবছরের মতো এবারও পুলিশ সপ্তাহে প্যারেড কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন পুলিশের এ দক্ষ নারী কর্মকর্তা। প্রথম নারী হিসেবে গতবছর পুলিশ সপ্তাহে দক্ষতার সঙ্গে প্যারেড পরিচালনা করে দেশ-বিদেশে আলোচনায় আসেন এসপি শামসুন্নাহার।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে উদ্বোধন করার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পুলিশ সপ্তাহ-২০১৭।
পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শামসুুন্নাহারের নেতৃত্বে প্যারেড অনুষ্ঠিত হয়। তার নেতৃত্বে সারাদেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সমন্বয়ে গঠিত ১০টি কন্টিনজেন্টের সহস্রাধিক সদস্য প্যারেডে অংশ নেন।
এ সময় তিনি প্যারেডে অংশগ্রহণকারীদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম প্রদান করেন।
অবৈধ অস্ত্র ও মাদক উদ্ধারে শ্রেষ্ঠ হয়ে রাষ্ট্রপতি পুলিশ পদক (পিপিএম- প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল) পেয়েছেন আলোচিত পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার।
পুলিশ সপ্তাহ ২০১৭ উপলক্ষে আগামী ২৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর হাতে এ মেডেল তুলে দেবেন।
সেবা, সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের জন্য বিভিন্ন বিভাগে ১শ’৩২ জন পুলিশ সদস্য বাংলাদেশ পুলিশ মেডেল (বিপিএম) ও প্রেসিডেন্ট পুলিশ মেডেল (পিপিএম) পেতে যাচ্ছেন।
২৩ জানুয়ারি শুরু হয়ে পুলিশ সপ্তাহ শেষ হবে ২৭ জানুয়ারি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ অধিশাখা-২ হতে এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়।
মাদকের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন, গুরুত্বপূর্ণ মামলার রহস্য উদঘাটন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা ও শৃঙ্খলামূলক আচরণের মাধ্যমে প্রশংসনীয় কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এ পদকে ভূষিত করা হয়।
প্রসঙ্গত,ফরিদপুরের কৃতি সন্তান শামসুন্নাহার ২০১৬ সালে দেশের প্রথম নারী পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে জাতীয় পুলিশ প্যারেডে নেতৃত্ব দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনায় আসেন।
বর্তমানে তিনি চাঁদপুর জেলাকে মাদক, সন্ত্রাস, বাল্যবিয়ে ও শিশু নির্যাতনসহ সামাজিক অপরাধমুক্তকরণে ব্যাপক কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।
মাদক ব্যবাসায়ীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে তাদের পরিবারকে সতর্ক করার পাশাপাশি মাদকের ভয়াবহ ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেছেন।
তিনি সুশীল সমাজের সহযোগিতায় বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী,সাংস্কৃতিক কর্মীদের নিয়ে জেলার জনবহুল এলাকা, হাট বাজারগুলোতে মাদকবিরোধী প্রচারণা অব্যাহত রেখেছেন।
পাশাপশি তিনি ‘মাদক বিক্রেতা ও মাদক সেবনকারীদের এ পথ থেকে সরে না আসলে কঠোর সাঁজার আওতায় আনা হবে’ বলে হুশিয়ার করে দিচ্ছেন।
পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার নির্যাতিত নারী ও শিশুদের কথা চিন্তা করে ২০১৫ সালে ১৫ অক্টোবর নারী পুলিশ সুপার কার্যালয়ে অভিযোগ সেল গঠন করেন। যেখানে প্রতিদিন নির্যাতিত নারী ও শিশুরা সেবা পেয়ে আসছে।
এতে করে পুলিশ সুপারের প্রতি নারীদের আস্থা অনেকাংশে বেড়ে গেছে।
এছাড়াও পুলিশ সুপারের কঠোর অবস্থানের ফলে চাঁদপুর জেলার সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অন্যান্য জেলার চেয়ে স্বাভাবিক রয়েছে বলে জেলাবাসী বিশ্বাস করে।
ফরিদপুরের মেয়ে শামসুন্নাহার চার ভাই বোনের মধ্যে সবার বড়। তার বাবা সামছুল হক ওরফে ভোলা মাস্টার ও মা আমিনা বেগম। তিনি ফরিদপুর সদর উপজেলার চর মাধবদিয়া ইউনিয়নের ইসমাইল মুন্সীর ডাঙ্গীতে জন্মগ্রহণ করেন।
তারা ২ বোন ও ২ ভাই। সবার বড় তিনি। মা-বাবার স্বপ্নও তাকে নিয়ে ছিল আকাশ ছোঁয়া। মেজো ভাই ডাক্তার। সেজো ভাই হাইকোর্টের আইনজীবী।
সবার ছোট বোন স্কুলের শিক্ষিকা। দু’সন্তানের জননী এ সফল নারী।

১৯৯১ সালে ভর্তি হন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকতেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হলে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৯৬ সালে বিএসএস ও ১৯৯৮ সালে এমএসএস ডিগ্রি লাভ করেন। ২০০১ সালে বিসিএস পাস করে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিসে যোগদান করেন।
তাঁরই ব্যাচমেট ছিলো চাঁদপুরের সাবেক পুলিশ সুপার মো.আমির জাফর।
মানিকগঞ্জ হচ্ছে শামসুন্নাহারের প্রথম কর্মস্থল। তিনি মানিকগঞ্জ থেকে পরবর্তীতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, পুলিশ সদর দপ্তর, ট্যুরিস্ট পুলিশসহ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
শিক্ষাক্ষেত্রে মেধার পরিচয় দিয়েছেন শামসুন্নাহার। ২০০৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমফিল এবং ২০০৭ সালে ঈয বাবহরহম ঝপযড়ষধৎংযরঢ়-এর মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ ডিগ্রি লাভ করেন।
২০তম বিসিএস-এর মাধ্যমে শামসুন্নাহার পুলিশে যোগ দেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসএস ও এমফিল পাশ করে স্কলারশিপ পায় যুক্তরাষ্ট্রের বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। সেখান থেকে তিনি এমবিএ ডিগ্রিও অর্জন করেন।
বিদেশে চাকরির অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এক নারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা শামসুন্নাহার। ২০০৯-২০১০ সালে জাতিসংঘ মিশনের মাধ্যমে পূর্ব তিমুর জাতীয় পুলিশের মানবসম্পদ উন্নয়ন কর্মকা-ে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।
২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘের শাখা অফিস ইতালীতে উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালনে সাফল্যের পরিচয় দেন।
তিনি জাতিসংঘে দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ সাতবার জাতিসংঘ শান্তি পদক লাভ করেন। এছাড়া বাংলাদেশ পুলিশে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ দু’ বার আইজি ব্যাজপ্রাপ্ত হন।
পেশাগত ও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন।
এ দেশগুলো হচ্ছে : যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানী, ইতালী, ভ্যাটিকান সিটি, অস্ট্রেলিয়া, পূর্ব তিমুর, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরব, দুবাই ও কাতার।
ব্যক্তিগত জীবনে শামসুন্নাহার বিবাহিত। তিনি এক পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের জননী। তাঁর অবসর বিনোদন হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের সাথে সময় কাটানো, গান গাওয়া ও গান শোনা। এছাড়া তিনি বিটিভির তালিকাভুক্ত একজন শিল্পী।
শামসুন্নাহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন। তার বাবা ফরিদপুরের প্রবীণ আইনজীবী ও মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক ভোলা মাস্টার। দুই সন্তানের জননী শামসুুন্নাহারের স্বামী হেলাল উদ্দিন আমেরিকা প্রবাসী।

চাঁদপুরে সততা এবং নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালনকারী নারী এ পুলিশ সুপার ইতোমধ্যে জেলাবাসীর প্রশংসা কুঁড়িয়েছেন। (জাতীয় গণমাধ্যম অবলম্বনে)
প্রতিবেদক- দেলোয়ার হোসাইন
।। আপডটে, বাংলাদশে সময় ০৮ : ১০ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৭ সোমবার
এইউ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur