কৃষি জমিতে ইট তৈরি ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ উপেক্ষা করে চলছে অবৈধ ইটভাটা।
হাজীগঞ্জ-রামগঞ্জ মহাসড়কের দু’পাশে একাধিক অবৈধ ইট ভাটা গড়ে উঠায় ধ্বংস হচ্ছে এ অঞ্চলের পরিবেশ, সে সাথে উজাড় হচ্ছে গাছ পালা ও ফসলি জমি।
গত কয়েক বছর ধরে সরকারি স্কুল, কৃষি জমি, জনবসতি ও বনায়ন এলাকায় এসব ইট ভাটার কার্যক্রম চালিয়ে আসছে।
ইতোপূর্বে এ ইটভাটায় ব্যবসায়ী মালিকদের কার্যক্রম সরকার জনস্বার্থে বন্ধ করে দিলেও স্থায়ীভাবে অবৈধ ইট ভাটা গুলো বন্ধ করা যায়নি।
ফলে চলতি বছর আবারো ইট ভাটা কার্যক্রম নিয়ম বহির্ভূত ভাবে চালিয়ে যাচ্ছে ইট ভাটার মালিকগণ। ইট ভাটা পরিচালনার কোনো নিয়মনীতি ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করে কেউ কেউ জ¦ালানি হিসাবে ব্যবহিত হচ্ছে কাঠ।
আর এসব নানা অনিয়মে প্রশাসনের তেমন নজর নেই বললে চলে।
বিধি মতে, সংরক্ষিত এলাকায় ইটভাটার স্থাপন করলে পাঁচ বছরের কারাদ- এবং পাচঁ লক্ষ টাকা অর্থদন্ড বিধান রেখে জাতীয় সংসদে পাশ হওয়ার ইট ভাটার স্থাপন (নিয়ন্ত্রন ) বিল ২০১৩ আইনের ই্টভাটার জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার নিষিদ্ধ রয়েছে।
আর অনুমোধন না নিয়ে ইট-ভাটা চালু করলে এক বছরের কারাদন্ড এবং এক লক্ষ টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে। কিন্তু এ আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়ার প্রশাসনের দায়িত্ব নিয়ে স্থানীয়রা প্রশ্ন তোলেন।
ইটভাটাগুলোতে ঘুরে দেখা যায় , হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন রনি ব্রিকস,ও অনি ব্রিকস প্রথমে ড্রাম চুল্লি দিয়ে তৈরী হলেও পরবর্তীতে তা হাওয়াই প্রদ্ধতিতে কার্যক্রম শুরু করে। তবে দু’টো ইটভাটাতে নবায়ন ও ভ্যাট জটিলতা রয়েছে।
পাশাপাশি সেলিম ব্রিকস কার্যক্রমে অনেক অনিয়ম লক্ষ্য করা গেছে। সেখানে হাওয়াই পদ্ধতির পাশাপাশি কাঠের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এছাড়া এসব ব্রিকস পৌরসভাধীন এলাকায় নিয়মের বাহিরে রাজনৈতিক দাপটে চলছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এ তিনটি ভাটা পাশাপাশি গড়ে উঠায় কৃষি মাঠ থেকে প্রতি বছর মাটি কেটে খালে পরিণত করেছে।
খরা মৌসুমে সড়কের দু’পাশে রাস্তা কেটে মাটি ও ইট ভাটার সামগ্রী উঠা নামার ফলে ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
এমনকি সড়কের পাশে মাটির স্তুপ দেওয়ার ফলে যানবাহন চলাচলে ধুলা-বালি উড়ে যানবাহনসহ যাত্রীসাধারনের চরম দূর্ভোগে পড়তে দেখা যায়।
এমন চিত্র দেখা যায় একই সড়কের পৌর এলাকার বাহিরে তথা ইঞ্জি.মমিনুল হক ও ইমাম হোসেনের ইট ভাটায়। রাসায়নিক দ্রব্যসহ কাঠের জ্বালানী ব্যবহার হচ্ছে এসব ভাটায়। তাছাড়া তাদের ভাটার কার্যক্রমে রয়েছে ফাঁকি বাজীর ফাঁদ। ইমাম বিকস্ এর নবায়নসহ মালিকানা জটিলতায় অবৈধ ভাবে চলছে বলে জানা যায় ভাটার কার্যক্রম।
সড়কটির ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন মনতলা আফজাল বিকস্ তাদের মালিকানা জটিলতার সমাধান হলেও ভাটার কার্যক্রমে পুরনো এম আলী বিকস্ নামে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন অফিসে এখনো পরিচিত।
যে কারনে গত বছর ভ্যাট অফিসের কর্মকর্তারা তাদের সরাঞ্জামাদি আটক করেছে বলে জানা যায়।
মানুরী ব্রিকস ফিল্ডের মালিক আলহাজ্ব জাহাঙ্গীর মিয়া সরকারি খাল কেটে মাটি উত্তলন করে তা দিয়ে ইট ভাটার কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানা যায়। এখাে শিশু শ্রমিকের সংখ্যাও চোখে পড়ার মতো।
বছরের পর বছর ক্ষমতা আর দাফটে এসব ব্রিকসের মালিকরা তাদের ভাটার কার্যক্রম অবৈধ ভাবে চালিয়ে আসছে।
বিগত কয়েক বছর ধরে এসব ভাটায় প্রায় হাজার হাজার শ্রমিক কাজ করে। এদের মধ্যে আবার ছোট ছোট শিশু শ্রমিকের সংখ্যাও দেখা যায়।
শ্রমিকদের বাসস্থানসহ টয়লেট ব্যবস্থা না থাকার ফলে পাশ্ববর্তি জনবসতি এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। এছাড়াও ইটভাটার কাঁচা মাল হিসেবে পার্শ্ববর্তী কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে মাটি এনে স্তুফ করার দৃশ্য দেখা গেছে।
ইট ভাটার কর্মরত কয়েকজন শ্রমিকের সাথে কথা হলে কৃষি উৎপাদনের মাটি ও লাকড়ী দিয়ে ইট পুড়ানোর কথা স্বীকার করেন। ভাটার মালিক পক্ষের সাথে চুক্তি মোতাবেক ন্যায্য টাকা পাচ্ছেনা বলেও অভিযোগ করেন শ্রমিকরা।
এসব অনিয়ম সম্পর্কে ইট ভাটার কয়েকজন মালিকের সাথে কথা হলে তারা রাজনৈতিক সুরে কথা বলে উল্টো জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদপ্তরে গিয়ে অভিযোগ জানানোর কথা বলেন।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান মজুমদার বলেন, ‘আমরা শুধুমাত্র ভাটায় শুরতে আগুন দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু জ্বালানী কাঠের অনুমদোন দিয়ে থাকি। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে যদি চুন্নিতে কালো ধুয়া বের হয় তাহরে ওই ভাটার কার্যক্রম অবৈধ,আর যদি সাদা ধুয়া বের হয় তাহলে কয়লা দিয়ে জ্বালানো তার অনুমদোন অনুযায়ী কার্যক্রম চালাচ্ছে। তবে আমাদের মাঠ পর্যায় তদারকি থাকবে।’
প্রতিবেদক- জহিরুল ইসলাম জয়, হাজীগঞ্জ
: আপডেট, বাংলাদেশ সম ২ : ০০ এএম, ২১ ডিসেম্বর ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ