প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তনে বর্তমান হুমকির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঐক্যবদ্ধ সহযোগিতার হাত প্রসারিত করতে হবে। মঙ্গলবার মরক্কোর স্থানীয় সময় রাত সোয়া দশটায় (বাংলাদেশের সময় রাত সোয়া চারটা) মারাকাশ জলবায়ু সম্মেলনের হাইলেভেল সেগমেন্টে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এর আগে তিনি সকালে উচ্চপর্যায়ের আলোচনা সভার উদ্বোধনী অধিবেশনে অংশ নেন। উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রবেশের আগে জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত রূপরেখা সনদের (ইউএনএফসিসিসি) নির্বাহী সচিব পেট্রিসিয়া এপিনোসাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। হাই লেভেল সেগমেন্টে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দুর্লভ মুহূর্তে আসুন আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গড়ে তুলি নিরাপদ বাসযোগ্য পৃথিবী। সবাই সমান দায়িত্ব নিয়ে গড়ে তুলি আমাদের প্রতিশ্রুত এক সুন্দর পৃথিবী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের অভিবাসন ইস্যুর ব্যাপারে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, জলবায়ু উদ্বাস্তুদের অভিবাসনের চ্যালেঞ্জটি সঠিকভাবে মোকাবিলা করা না হলে আমরা কখনই টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জন করতে সমর্থ হবো না।
বৈশ্বিক জলবায়ু সম্মেলনের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপদ খাবার পানি স্যানিটেশনের বিষয়ে বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন, আমাদের অবশ্যই নিরাপদ খাবার পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। আসুন আমরা পানি বিষয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে একটি বৈশ্বিক তহবিল গঠন করি। এই তহবিলের অর্থ পানি বিষয়ে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের কাজে ব্যবহার করা হবে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের পানি নিরাপত্তা নিশ্চিতে পানি বিষয়ে জাতিসংঘের অ্যাকশন প্ল্যানের প্রতি তার সরকারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন।
দুপুরে প্ল্যানারি অধিবেশনের উদ্বোধনের পর সন্ধ্যা সাড়ে ছ’টায় শুরু হয় সম্মেলনের হাই লেভেল সেগমেন্ট। এই সেগমেন্টে একে একে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধান ও মন্ত্রীরা বক্তব্য রাখেন। গভীর রাত পর্যন্ত এই বক্তব্য চলতে থাকে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৯তম বক্তা হিসেবে বাংলাদেশ সময় গভীর রাতে মঞ্চে বক্তব্য দিতে ওঠেন। এ সময় তিনি বলেন, এবারের সম্মেলন আমাদের জন্য বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। আমরা এ বছর ঐতিহাসিক প্যারিস চুক্তির কার্যকর উদযাপন করছি। গত বছর আমরা প্যারিসে সফলভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় একটি অর্থবহ ভিত তৈরি করতে সমর্থ হয়েছি। এখন সময় আমাদের এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের কাজ এগিয়ে নেয়া।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে আমাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না হলে লাখ লাখ মানুষের জীবন এবং জীবিকা ঝুঁকির মধ্যে থাকবে। বাংলাদেশ হচ্ছে প্যারিস চুক্তি অনুমোদনকারী প্রথম দেশগুলোর একটি। এছাড়া আমরাই প্রথম জলবায়ু পরির্বতনে নিজস্ব অর্থে ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করেছি। এ পর্যন্ত আমরা এই তহবিলের নিজস্ব সম্পদ থেকে ৪০ কোটি ডলার বরাদ্দ দিয়েছি। বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো উচ্চমাত্রার ঝুঁকি সত্ত্বেও আমরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সাফল্য অর্জন করেছি। এ সাফল্যের মধ্যে রয়েছে আগাম সতর্কব্যবস্থা, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ এবং নদী শাসনের মতো কার্যক্রম গ্রহণ। যা ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৭:০০ এএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ