চাঁদপুরবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির অবসান ঘটিয়ে অবশেষে শহরের মাদ্রাসা রোড়ে প্রায় ৪ একর জমির উপর ৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ হতে যাচ্ছে
আধুনিক নৌ-টার্মিনাল। গত ১০ নভেম্বর একনেকের সভায় ৬৭ টাকা বাজেটের অনুমোধন দেয়া হয়েছে।
এতে করে দেশের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ এই নৌ-বন্দরটির চিরায়িত রূপ সম্পূণ পাল্টে যাচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করে চাঁদপুর নদী বন্দর ও পরিবহন কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চাঁদপুর বাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি ছিলো এই লঞ্চঘাটটি যেনো আধুনিকায়ন করা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে দেশের ৩টি লঞ্চঘাট আধুনিকায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়।
এর মধ্যে ঢাকা সদর ঘাট ও বরিশালের সাথে চাঁদপুর লঞ্চঞাটের নামটিও ছিলো। ইতিমধ্যে ঢাকা সদরঘাট ও বরিশাল লঞ্চঘাট আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এছাড়াও চাঁদপুর লঞ্চঘাট আধুনিক ও স্থায়ীভাবে নির্মাণে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে স্থানীয় ত্রি-বিভাগীয় কমিটির একটি সুপারিশ দাখিল করা হয়। সেই দাবি ও সুপারিশের পেক্ষিতেই চাঁদপুর লঞ্চঘাট আধুনিকায়ন হচ্ছে।
তিনি জানান, শহরের মাদ্রাসা রোড়ে বর্তমান লঞ্চঘাটটি ২. ৪৮ একর জমির উপর অবস্থিত রয়েছে। এই জমির সাথে আরো দেড় একর সহ প্রায় ৪একর জমির উপর দ্বিতল ভবনের এই লঞ্চঘাট হবে। গত ১০ নভেম্বর একনেকের সভায় লঞ্চঘাট নির্মাণে ৬৭ কোটি টাকার বাজেট অনুমোধন দেয়া হয়েছে। এখন সরকারি কিছু নিয়ম-কানুন শেষে সহসাই এর টেন্ডার ঘোষনা করা হবে। আগামি জানুয়ারী মাসের মধ্যে এর নির্মাণ কাজ শুরু হবে এবং সঠিক সময়ে কাজ শুরু হলে দেড় বছরের মধ্যে তা সম্পন্ন করা যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। নির্মাণ কাজ তদারকি করতে নৌ-মন্ত্রনালয় থেকে টিম থাকবে।
তিনি আরো জানান, দুইতলা বিশিষ্ট আধুনিক এই লঞ্চঘাটে ৬টি নতুন পল্টুন ও ৬টি গ্যাংওয়ে, নৌ-পুলিশের স্থায়ী কার্যালয়, যাত্রী বিশ্রামাগার, নিশিবিল্ডিং এলাকার উত্তর পাশ দিয়ে ২০ ফুট চওড়া রাস্তা সহ দুটি ওয়ানওয়ে রাস্তা হবে। এছাড়া ঘাটে প্রায় ৪শ’ থেকে ৫শ’ টি সিএনজি-অটোরিক্স পাকিং করা যাযে।
উল্লেখ্য, প্রায় দু’শ” বছর আগে ডাকাতিয়া-মেঘনা নদী ঘিরে চাঁদপুর নদী বন্দর সৃষ্টি হয়েছে। ব্রিটিশ শাসন আমলে আইজি এন্ড আরসিন কোম্পানী ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে স্টিমার ঘাট এবং রেলওয়ে স্টেশন প্রতিষ্ঠা করে চাঁদপুর নৌ-বন্দরের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করে। তখন অবিভক্ত বাংলার সাথে আসাম-বেঙ্গল সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা এ নদী বন্দরকে ঘিরেই গড়ে উঠে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, পাকিস্তান শাসনামলে স্টিমার ঘাট, রেল স্টেশন সংলগ্ন স্থানে বন্দরের গুরুত্ব বিবেচনা করে চাঁদপুর লঞ্চঘাট ও নৌ-বন্দর টার্মিনাল প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু ১৯৯৮ সালের বন্যায় আকস্মিক ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনে চাঁদপুর রেল স্টেশন ও লঞ্চঘাটের অংশবিশেষ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেলে নৌ ও রেল যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ২০০১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর তৎকালীন সরকার পুরাতন লঞ্চ টার্মিনালের কিছু দূরে পূর্ব দিকে নতুনভাবে চাঁদপুর লঞ্চঘাট নির্মাণ করে। ১৯৯৪ সালের ২০ আগস্ট মেঘনা-ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলে সৃষ্ট ঘূর্ণি¯্রােতের কবলে কাত হয়ে দ্বিতল একটি লঞ্চডুবির ঘটনা ঘটে। সেই সময় শতাধিক যাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। নিরাপদ নৌপথ এবং নৌ-দুর্ঘটনা এড়ানোর লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ শহরের মাদ্রসা রোডে বিকল্প আরেকটি লঞ্চঘাট নির্মাণ করে। পরবর্তিতে বর্ষা মওসুমের তিন থেকে চার মাস মাদ্রাসা রোড়ের অস্থায় ঘাটে লঞ্চঘাট স্থানান্তরিত হতো। একটা সময় বিকল্প এই লঞ্চঘাটের চাঁদপুর নৌ-টার্মিনালের সকল কার্যক্রম অব্যহত থাকে। অধুনিক লঞ্চঘাট নির্মানের বাজেট অনুমোধন হওয়ায় চাঁদপুর লঞ্চঘাট স্থায়ীভাবে মাদ্রাসা রোড়েই থেকে যাচ্ছে। মাদ্রাসা ঘাটে স্থায়ী লঞ্চঘাট নির্মিত হলে শুধু চাঁদপুরবাসীই নয়, আশপাশের জেলার নৌ-যাত্রী সাধারণ এর সুফল পাবে।
বিশেষ করে ঈদ যাত্রীদের আর হয়রানীর শিকার হতে হবে না বলে সুধিমহল মনে করছে।
[author image=”https://chandpurtimes.com/wp-content/uploads/2015/11/Asik-Bin-Rahim.jpg” ]প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম[/author]
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur