হাজারো অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও বাবার গরিব বন্ধুর কালো মেয়েকে বিয়ে করতে হল আমায়। কলেজের সেলফি বয়ের এমন একট বউ জুটলো, যে জীবনে বউকে নিয়ে আর সেলফি তোলা যাবে না।
বাসর রাতে বউকে তুই বলে ডেকেছিলাম। বলেছিলাম তুই আমাকে আপনি করে ডাকবি। কাছে ঘেষার চেষ্টা করবিনা কখনো।
কারণ বউছিলো পুরাই কয়লার ড্রাম। কুচকুচে কালো তার গায়ের রং। বাসরঘরে ঢুকে বিছানায় তাকিয়ে দেখি যেন ঠিক একটা কালো প্রাণী বসে আছে লাল ঘোমটা দিয়ে। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক, কপালে ঢ্যামা একটা টিপ।
ওয়াক থু, কি বিচ্ছিরি সাজ। লাল কালোয় কি এক অগোছালো সাজ। বাতি বন্ধ করতেই বুঝলাম যেন একটা আধার নিয়ে
শুয়ে আছি। নেহাৎ যৌনতার দায় সারা হয়েছিল সে রাতে। তারপর বিছানা থেকে তুলে দিয়েছিলাম তাকে।
যৌতুক বিরোধী ছিলাম আমরা। তাই বাবার বক্তব্য ছিলো বিনা যৌতুকে নিজের আত্মীয়ের কারো মেয়েকে পুত্রবধু করে আনবেন।
তারপর হাজারো অনিচ্ছা স্বত্তেও বাবার গরিব বন্ধুর কালো মেয়েকে বিয়ে করতে হল আমায়। কলেজের সেলফি বয়ের এমন একট বউ জুটলো, যে জীবনে বউকে নিয়ে আর সেলফি তোলা যাবে না।
বন্ধুরা অনুরোধ করত বউ নিয়ে বেড়াতে আসতে। কিন্তু আমি তাকে নিয়ে যেতাম না। লজ্জা আছে তো নাকি! রাতে বাড়ি ফিরতাম দেরি করে। তখনো সে জেগে থাকত। নিজ হাতে খাবার দিতো। কথা বলতাম না আমি।
কিভাবে যে তাকে বলি, বারে, ডিস্কোতে সুন্দরী মেয়ে দেখে বাড়িতে কি অমন আলকাতরা ভালো লাগে? ওর কি প্রয়োজন সেটা কোনোদিন জিজ্ঞেস করিনি। বাড়িতে সবার কাপড় কেনা হতো, খাবার তো আছেই। আর কি চাই? এভাবেই কেটে গেল
কয়েক মাস।
সেদিন একবন্ধু তার গার্লফ্রেন্ডকে গিফট দেয়ার জন্য কিছু কিনেছিল। সেটা আমাকেই পৌছে দিতেহবে। অনেকরাত গিফট বক্স নিয়ে বাড়ি ফিরলাম আমি। দেখলাম সে সোফায় ঘুমিয়ে গেছে। ভাবলাম খেয়েছে তো? আমি নাআসা পর্যন্ত আবার ওকে খেতে দেখিনি কোনোদিন। শুয়ে পড়লাম। কিন্তু মনটা খচখচ করছে। ডেকে তুলে বললাম, খেয়ে তারপর শুবি।
পরদিন সকালে গিফট বক্স খুঁজে দেখি ওটা আর আস্তনেই। ও ওটা খুলে ভিতরে যা ছিল ব্যবহার করা শুরু করে দিয়েছে। ওর খুশি মুখ দেখে কিছু বললামনা।
বেচারী- কালো বলে কি সাজতে নেই? নিজেই হেসেছিলাম সেদিন। তারপর নতুন করে গিফট সাজিয়ে পৌঁছে দিলাম আমি।
তারপর একদিন ও বমি করলে বুঝলাম ও মা হতে চলেছে।
এক শীতের বিকেলে বাবা মা বেড়াতে গেলেন গ্রামে। বাসায় রইলাম আমি আর সে। সেরাতে তাড়াতড়ি বাড়ি ফিরলাম। কারণ বাড়ি পুরো একা গ্রাম্য মেয়ে, বলা যায়না ভুতের ভয় টয় পায় নাকি। বাসায় ফিরে শুনলাম রান্না হয়নি।
কারণ জানতে চাইলে ও বলল, ভেবেছিলাম আপনি বন্ধুদের সাথে খাবেন। দুপুরের কিছু ভাত ছিল। আমার হয়ে যাবে তাই।
ফ্রিজ খুলে দেখলাম।সামান্যই ভাত। বললাম চল, কাপড় পরে নে। হোটেলে খাবি। ও যেতে চাইলনা। আমিও রেখে যেতে পারছিনা একা বাড়ি বলে। অবশেষে দুজনে বাহির হলাম। রাতের শহর ও যেন হা হয়ে দেখছিল।
বললাম হাত ধর,নাহলে ভিড়ে আবার হারিয়ে যাবি।
সেদিন প্রথম ও আমার সাথে বেরিয়েছিলো। প্রথম আমার হাত ধরেছিল। মন্দ না। আমিও ওর আঙুল ধরেছিলাম যাতে ও হারিয়ে না যায়!
হোটেলে আমাকে আপনি করে বলবিনা, তুমি করে বলবি ঠিক আছে? মাথা নাড়লো ও। কিন্তু হোটেলে খাবার সময় ও একবারো আমায় ডাকেনি। উল্টো আমিই বলেছিলাম, তুমি আরো কিছু খাবে?
সেদিন দেখি স্নোর টিউব কেটে স্নো বাহির করছে। রেগে বললাম, স্নো ফুরিয়ে গেছে বলতে পারো না?
সেদিনই সে প্রথম আমার কাছে শ্যাম্পু চেয়েছিল।
আমি সেদিন ওকে নিয়ে মার্কেটে গেলাম কসমেটিকস কিনতে। বন্ধুরা অনেকেই দেখেছিল সেদিন কিন্তু সবাইভাবি বলে যথেষ্ট রেসপেক্ট করেছিল। সবাই তিনদিন পর আড্ডাতে আসার জন্য অনুরোধ করছিলো ওকে।
তিনদিন পর আমিই ওকে নিয়ে গিয়েছিলাম মোটর সাইকেলে। ওর জীবনের প্রথম লং ড্রাইভ আর ড্রাইভার ছিলাম আমি। আর আমার বউকে নিয়ে প্রথম।
জীবনের প্রথম ওরজন্য আজ খোদার দরবারে হাত তুলেছি আমি। ও যেন সুস্থ থাকে। কারণ আজ ও মা হবে। আমি বাবা
হবো।
জানিনা কোথা থেকে আজ এতো কান্না আসছিল আমার। হাসপাতালে ওর কাছে বারবার ছুটে যাচ্ছিলাম। ও হাত ধরে যতোবার বলেছিলো ওর খুব ভয় করছে, ততবারই বলেছি ভয় পেওনা আমি আছি।
সেদিন ও কাউকে খুঁজেনি শুধু আমায় খুঁজেছে। আমায় পাশে থাকতে বলেছে বারবার। আর আমি, বারবার পর্দার ফাকে বারবার ওকে দেখলাম।
সিজারে নেওয়া হয়েছিলো ওকে। সন্তান পেলাম কিন্তু ওকে পেলামনা। ওর দেহটা ধরে সেদিন খুব কেঁদেছিলাম। মনে হচ্ছিলো খুব যেন নিজের কলিজাটা ছিঁড়ে গেছে।
আজো ওর কবরের পাশে ছুটে যাই। চিৎকার করেরে বলি, ফিরে এসো তুমি, একটা রাত তোমার সাথে গল্প করা বাকি ছিলো, একটা সেলফি তোমায় নিয়ে তোলার ছিল।
জানি ওকে ভালবাসা দিতে পারিনি। কিন্তু আজ বুঝছি কেন এখনো বুকের বাম পাশটা চিনচিন করে ব্যাথা করে। (কাল্পনিক)
শিক্ষা:- আসলে কালো বলে কাউকে অবহেলা করা উচিৎ নয়।
ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২:০০ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ