আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দশম নির্বাচনের চেয়ে কার্যকরভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ ও ১৩০ ধারা অনুযায়ী। এবার মোতায়েন করা হচ্ছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৭, ১২৮, ১২৯, ১৩০, ১৩১ ও ১৩২ ধারায়।
ইসির প্রকাশিত খসড়া পরিপত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক সভার পর নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তাও বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। বৃহস্পতিবার (১৩ ডিসেম্বর) ওই বৈঠক হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ থেকে ১৩২ ধারার মধ্যে ১৩১ ধারায় সেনাবাহিনীর কোনো কমিশনপ্রাপ্ত অফিসারকে ম্যাজিস্ট্রেটের অনুপস্থিতিতেও জননিরাপত্তা বিপদগ্রস্ত হওয়ার মতো সমাবেশ ভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ এবং সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া আছে।
নির্বাচন নিয়ে তৃতীয় কোনো শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে সতর্ক নজরদারি রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গতকাল আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক সমন্বয় সভায় সিইসি ওই নির্দেশ ও পরামর্শ দেন।
সভায় বক্তব্যে সিইসি ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে কি না, তা-ও নজরে রাখতে বলেন। ২০১৪ সালের সহিংস অবস্থার কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তার ছক তৈরি করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন তিনি।
গতকাল ইসির আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক সভার কার্যপত্রে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ভোটগ্রহণের আগে, ভোটগ্রহণের দিন ও পরে শান্তি-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করার জন্য ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ থেকে ১ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখ পর্যন্ত (যাতায়াত সময় ব্যতীত) সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগের জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে এরই মধ্যে অনুরোধ করা হয়েছে।
এ লক্ষ্যে ১৫ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখ হতে নির্বাচনী এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা, ভৌত অবকাঠামো এবং নির্বাচনী পরিবেশ-পরিস্থিতির ওপর প্রাথমিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার জন্য প্রতি জেলায় সশস্ত্র বাহিনীর ছোট আকারের টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
সশস্ত্র বাহিনীর দায়িত্ব পালন সম্পর্কে কার্যপত্রে বলা হয়েছে, ‘(ক) সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যগণ প্রতিটি জেলা/উপজেলা/মেট্রোপলিটন এলাকার নোডাল পয়েন্ট এবং অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত থাকবে। (খ) রিটার্নিং অফিসারের সাথে সমন্বয় করে প্রয়োজন অনুসারে উপজেলা/থানায় সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োগ করা হবে।
(গ) রিটার্নিং অফিসার সহায়তা কামনা করলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা প্রদান অথবা ফৌজদারি কার্যবিধির, অন্যান্য আইনের বিধান ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা নির্দেশনা অনুসারে সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
(ঘ) রিটার্নিং অফিসার বা প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদা ব্যতিরেকে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনা কক্ষে কোনো প্রকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে না। (ঙ) ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং এইড টু দি সিভিল পাওয়ার এবং সংশ্লিষ্ট আইন ও বিধি অনুযায়ী সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। (চ) উপকূলবর্তী এলাকায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নৌবাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।
(ছ) ঝুঁকি বিবেচনায় প্রতিটি জেলায় নিয়োজিত সেনা সদস্যের সংখ্যা রিটার্নিং অফিসারের সাথে সমন্বয় করে কমবেশি করা যাবে। (জ) সেনা সদরের বিবেচনায় প্রতিটি স্তরে প্রয়োজনীয়সংখ্যক সেনা সদস্য সংরক্ষিত হিসেবে মোতায়েন থাকবে।
(ঝ) গুরুত্বপূর্ণ সড়ক/মহাসড়কসমূহের নিরাপদ যান চলাচল এবং স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে কাজ করবে।’ এতে আরো বলা হয়েছে, ‘নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনী তাদের আওতাধীন দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকার মধ্যে যেসব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহার করা হবে, সেসব কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
এ ছাড়া ইভিএম কেন্দ্রে যেসব সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য থাকবে তাদের নিরাপত্তা বিধানসহ প্রয়োজন অনুসারে আনুষঙ্গিক বিষয়াদির ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
(ণ) নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়োজিত সশস্ত্র বাহিনীর টিম ওই ছয়টি নির্বাচনী এলাকায় ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণসংক্রান্ত নিরাপত্তা বিধানে নিবিড় ও অধিকতর গুরুত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবে। (ত) রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ভোটকেন্দ্রের অভ্যন্তরে শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে।’
জানা যায়, গত বছর ২৪ অক্টোবর ইসির সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে একজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩১ ধারায় সেনা নিয়োগ করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
সংলাপে কয়েকজন সাবেক নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৯ থেকে ১৩০ ধারায় এবং সেনা বিধিমালা ‘ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’-এর আওতায় নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেটের আওতায় সেনাবাহিনী মোতায়েনে কোনো কাজ হবে না।
এ ছাড়া দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনে ইসি ফৌজদারি কার্যবিধির ১৩১ ধারা অনুসারে সেনাবাহিনী নিয়োগ করলে কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায় ওই বাহিনী অনিয়ম রোধে কার্যকর ভূমিকা রেখেছিল।
যদিও ওই সময় একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছিল, ইসি সেনাবাহিনীকে ‘ম্যাজিস্ট্রেরিয়াল ক্ষমতা’ দিয়েছে।
এর জবাবে ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল ইসি সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, ‘উপজেলা নির্বাচনে কমিশন সশস্ত্র বাহিনী বা সেনাবাহিনীকে ম্যাজেস্ট্রিয়াল বা বিচারিক ক্ষমতা দেয়নি। এ নির্বাচনে কোনো সহিংসতা রোধে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং স্ট্রাইকিং হিসেবে সশস্ত্র বাহিনীর উপস্থিতি নির্বাচনী এলাকায় দৃশ্যমান করার জন্য নির্বাচন কমিশন বিশেষভাবে নির্দেশনা প্রদান করে।
এ নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো প্রকার দাঙ্গা-হাঙ্গামা বা আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নজরে আসামাত্র সংশ্লিষ্ট সামরিক কর্মকর্তা দ্য কোড অব ক্রিমিনাল প্রসিডিউর (ফৌজদারি কার্যবিধি), ১৮৯৮-এর ধারা ১৩১ অনুসারে তাত্ক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে মর্মে আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনকে জানিয়ে দেওয়া হয়।
ফৌজদারি কর্যবিধির ১৩১ ধারায় বলা হয়েছে, ‘যখন এইরূপ কোনো সমাবেশ দ্বারা জননিরাপত্তা সুস্পষ্টভাবে বিপদগ্রস্ত হয় এবং কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করা যায় না, তখন সেনাবাহিনীর কোনো কমিশনপ্রাপ্ত অফিসার সামরিক শক্তি প্রয়োগ করে এইরূপ সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করতে পারেন এবং এইরূপ ছত্রভঙ্গ করার অথবা আইনানুসারে শাস্তি দেওয়ার জন্য ওই সমাবেশে অংশগ্রহণকারী কোনো ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার বা আটক করতে পারেন।
তবে এই ধারা অনুসারে কাজ করার সময় তাঁর পক্ষে যদি কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়, তাহলে তিনি (কমিশনপ্রাপ্ত সামরিক অফিসার) তা করবেন এবং অতঃপর কাজ চালিয়ে যাওয়া না বা না যাওয়া সম্পর্কে তাঁর (ম্যাজিস্ট্রেটের) পরামর্শ অনুসরণ করবেন।’
২০১৪ সালের কথা মাথায় রেখে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ছক তৈরির নির্দেশ : গতকাল নির্বাচন ভবনে আইন-শৃঙ্খলাবিষয়ক সমন্বয় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সিইসি। তিনি ২০১৪ সালের সহিংস অবস্থার কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তার ছক তৈরি করতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, ‘পেছনের একটা ঘটনার রেশ টানা প্রয়োজন। সেটি হলো ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন। সেই নির্বাচনের অবস্থা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না। তখন ভয়ংকর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। সেই ঘটনার আলোকে আমাদের এবারের নির্বাচনের প্রস্তুতির রূপরেখা ও কৌশল অবলম্বন করা প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, ‘তখন মাঠে সব বাহিনী ছিল। সশস্ত্র বাহিনী ছিল, পুলিশ বাহিনী ছিল, র্যাব ছিল, বিজিবি ছিল। তবুও আমরা কী দেখেছিলাম! পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছিলেন, প্রিসাইডিং অফিসার নিহত হয়েছিলেন, ম্যাজিস্ট্রেট নিহত হয়েছেন, শত শত মানুষ নিহত হয়েছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ভস্মীভূত হয়েছে। সেটা কী পরিপ্রেক্ষিতে হয়েছিল, আমরা কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারিনি, সে প্রসঙ্গে আলোচনা করার সুযোগ ও প্রয়োজন নেই। ভবিষ্যতে এ বিষয়টি আমাদের মনে রাখতে হবে। এটি ভুলে গেলে চলবে না।’
সশস্ত্র বাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন সভায়। এতে সভাপতিত্ব করেন সিইসি। সিইসি স্বাগত বক্তব্য দেওয়ার পর রুদ্ধদ্বার বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
স্বাগত বক্তব্যে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কার কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘আমরা কিন্তু আশঙ্কাগুলো একেবারেই অবহেলা করতে পারি না। যেদিন প্রতীক বরাদ্দ হলো তার পরের দিনই দুর্ঘটনা ঘটেছে। সে ঘটনাগুলো যত ছোটই হোক না কেন, দুটি জীবন চলে গেল, সে দুটি জীবনের মূল্য অনেক। কিন্তু কেন হলো? তারপরে এখানে ওখানে ভাঙচুর, প্রতিহত করা। এগুলোর পেছনে কি রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণ আছে? নাকি সেই ২০১৪ সালের মতো ভয়াবহ পরিবেশ সৃষ্টির পাঁয়তারা চলছে? এগুলো কিন্তু ভালোভাবে নজরে নিতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সতর্ক নজরদারি থাকতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘একটা ঘটনা ঘটে গেলে একজনের দোষ আরেকজনের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হালকাভাবে নিলে হবে না। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সতর্ক অবস্থান নেওয়ার প্রয়োজন হবে। এর মধ্যে তৃতীয় কোনো শক্তির ষড়যন্ত্র আছে কি না খতিয়ে দেখতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রতি সতর্ক নজরদারি রাখার অনুরোধ করব।’
নির্বাচনের নিরাপত্তা কৌশল প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশ করে সিইসি বলেন, ‘দায়িত্ব পালনকালে পেশাদারি ও নিরপেক্ষতার সর্বোত্তম ব্যবহার করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে সব বাহিনীর কৌশল ঠিক করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সবচেয়ে বেশি তথ্য-উপাত্ত থাকে। তথ্য-উপাত্তগুলো প্রয়োগ করে অন্য সব বাহিনীর আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের ছক তৈরি করতে হবে। সব গোয়েন্দা সংস্থার সতর্ক নজরদারি বৃদ্ধি করতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে এবং এতে বিজিবিকে সম্পৃক্ত করার প্রয়োজন হবে। কারণ এতে তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে।’
বৈঠক সূত্রে জানা যায়, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার সব প্রার্থীর জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সবচেয়ে বড় চ্যালঞ্জ জনপ্রশাসনের কর্মকর্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ইসির নিয়ন্ত্রণে রাখা। এটি খুব দুরূহ।’
তিনি বলেন, ‘সরকার সবার প্রতি সমান আচরণ করলে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদেরও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন। গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত যদি নির্বাচন হয়, তবে এই নির্বাচন অবশ্যই স্বচ্ছ ও শুদ্ধ হতে হবে।’ নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক করে বলেন, ‘পেশাদারি দেখাতে হবে। অতি উৎসাহ বা নির্লিপ্ততা যেন না দেখি।’
তিনি বলেন, ‘প্রার্থী ও ভোটাররা ভোট দিয়ে নিশ্চিন্তে বাড়ি আসবে, তা নিশ্চিত করতে হবে।’ ম্যাজিস্ট্রেটদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাদের কার্যক্রম দৃশ্যমান দেখতে চাই।’ কমিশনার কবিতা খানম বলেন, ‘মাঠে সবার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে না পারলে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক বলা যাবে না। কোনো কারণ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার করলে সে জন্য জবাবদিহি করতে হবে। সবার প্রতি আইনের প্রয়োগ অভিন্ন হতে হবে।’
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কাউকে কেন ও কিভাবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তা রিটার্নিং অফিসার জানেন না, তাহলে কিসের সমন্বয় আছে!’ তিনি বলেন, ‘ভোটার ও জনগণ সবাই ইসির দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের প্রশ্ন, আমরা ভোট দিতে পারব কি না, ভোট দিয়ে ফিরে আসতে পারব কি না? আমাদের কথা হলো, ইসির ভাবমূর্তি যেন নষ্ট না হয়।’
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘আইনানুগভাবে প্রার্থীরা যেন প্রচার চালাতে, ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারে। কোনো প্রকার সহিংসতা ও প্রাণহানি হোক, তা আমরা চাই না।’
তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও নির্বাচন কর্মকর্তাদের অতি উৎসাহী না হতে পরামর্শ দেন।
বার্তা কক্ষ
১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮