টেস্টের (৪২ টেস্টে ৩১১৮ রান) মত ওয়ানডেতেও বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি (১৫৩ ম্যাচে ৪৭১৩) রান তার; কিন্তু দু’বছর আগে আফগানদের সাথে প্রথম যে ম্যাচে হেরেছিল বাংলাদেশ, ওই ম্যাচে ছিলেন না তামিম ইকবাল।
আফগানিস্তানের সাথে একটি ওয়ানডেই খেলেছেন দেশের এক নম্বর ওপেনার। ২০১৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারী অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরার ম্যানোকা ওভালে হওয়া ওই ম্যাচে তামিমকে সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ড্যাশিং এ বাঁ-হাতি ওপেনারের ব্যাট থেকে এসেছিল মাত্র ১৯ রান। তাও দ্বিগুণের বেশি ৪২ বলে।
এবার সেই আফগানিস্তানের সাথে ঘরের মাঠে খেলা। কী করবেন তামিম? ভক্ত-সমর্থকরা উন্মুখ অপেক্ষায়, এবার জ্বলে উঠবে প্রিয় তারকার ব্যাট? চার-ছক্কার ফলগুধারা বইবে? ভিতরে ভিতরে নিশ্চয়ই ভাল কিছু করার প্রবল ইচ্ছে। তবে তা মুখে প্রকাশে যেন খানিক দ্বীধা। নিজের লক্ষ্য ও পরিকল্পনার কথা জানানোর বদলে তার যত চিন্তা দলকে নিয়ে।
পরিষ্কার বোঝাই গেল, নিজের পারফরমেন্সের চেয়ে তার চিন্তা-ভাবনার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে দল। সিরিজ শুরুর ৪৮ ঘন্টা আগে শুক্রবার বিকেলে শেরেবাংলায় মিডিয়ার মুখোমুখি হয়ে নিজের লক্ষ্য-পরিকল্পনার কথা না বলে, তামিম বেশিরভাগ সময় কথা বললেন দল নিয়েই।
বলার অপেক্ষা রাখে না, সেই মার্চে ভারতের মাটিতে বিশ্ব টি-টোয়েন্টি আসর খেলার পর থেকেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে বাংলাদেশ। আর মাশরাফির দল শেষ ওয়ানডে খেলেছে সেই গত বছর নভেম্বরে।
দীর্ঘদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকাকে নেতিবাচক মনে করেন তামিম। তাই মুখে এমন কথা, ‘এত লম্বা বিরতির কোনো পজিটিভ সাইড থাকতে পারে না। হ্যাঁ, খারাপ সময় কাটানোর পর একটু বিরতি হলে ভাল হয়। তখন বিপর্যয় কাটিয়ে ও খারাপ সময় কাটিয়ে ওঠার একটা ক্ষেত্রে তৈরী হয়। কিন্তু কোন দল যখন ভাল খেলতে থাকে, তখন এক বছরের গ্যাপ মোটেই ভালো নয়। এরকম বিরতি আরও নেতিবাচক হতে পারে।’
তারপরও দিনশেষে আমরা দল হিসেবে কতটা ভালো হয়েছি এবং মানসিকভাবে কেমন শক্তিশালী হয়েছি, সেটি প্রমাণ করার সুযোগ এটা। সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজে আমরা যেভাবে খেলেছিলাম, এত বড় বিরতির পর সেটা ধরে রাখা নিজেদের কাছেই চ্যালেঞ্জ, সেটা ধরে রাখতে পারাই হবে মূল লক্ষ্য।’
তামিমের বিশ্বাস, প্রস্তুতি ভাল হয়েছে। সবাই কঠোর পরিশ্রমও করেছে। প্র্যাকটিসে যে সব বিষয় চর্চা হয়েছে, এখন জায়গামত তার সঠিক ও স্বার্থক প্রয়োগ হলেই হয়।
এ সম্পর্কে তার কথা, ‘অনেকদিন পর আমরা একটি ওয়ানডে সিরিজ খেলতে যাচ্ছি। শেষ দু’মাস আমরা চেষ্টা করেছি প্রত্যেকটি ঘাটতি পুষিয়ে নিতে। এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো অনুশীলনে আমরা যে সব করেছি, মাঠে সেসব করে দেখানো। এটাই আমাদের চেষ্টা থাকবে। গত দু মাসের কঠোর পরিশ্রমের প্রতিফলন যেন মাঠে পড়ে। সেটা করতে পারলে ফলও ভালো হবে।’
আফগানিস্তানের মত শক্তি-সামর্থ্য ও রেটিংয়ে পিছিয়ে থাকা দলের সাথে খেলায় ভাল করার ইচ্ছেটা প্রবল থাকে না? তা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন ওঠে। অনেকেই বলে থাকেন, কমজোরি দলের বিরুদ্ধে খেলতে নিজেকে অনুপ্রাণিত করা এবং ভাল খেলার দৃঢ় সংকল্প তৈরী করা কঠিন।
তামিম তা মানতে রাজি নন। তার ব্যাখ্যা, নিজেদের অনুপ্রাণিত করা সমস্যা নয়। এটা তো একটা আন্তর্জাতিক ওয়ানডে। দল জিতলে কিংবা কেউ সেঞ্চুরি করলে বা ৫ উইকেট পেলে সব রেকর্ড বইয়ে থাকবে। আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড- যে দলই হোক না কেন, আমরা একই রকম অনুপ্রাণিত থাকি। আমরা দেশের হয়ে খেলছি, সেটাই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।’
তামিম পরিষ্কার জানিয়ে দিলেন, আফগানিস্তান বা কোনো দলকেই আমরা কখনো ছোট করে দেখি না। আমি সবসময়ই বলি আফগানিস্তান শুধু নয়, প্রতিপক্ষ যেই হোক আমাদের সমান মনোযোগ থাকে। খেলাটা ক্রিকেট জিততে হলে নিজেদের ভালো খেলতেই হবে। মাঠে যে দল পরিকল্পনার সফল প্রয়োগ ঘটাতে পারবে জিতবে তারাই।
ইতিহাস জানাচ্ছে, গত বছর অস্ট্রেলিয়ায় বিশ্বকাপ ক্রিকেটের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে ১১৫ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছিল টাইগারা। তামিম মনে করেন, দু’দলের পার্থক্য অনেক। তার ধারনা বিশ্বকাপের ওই ম্যাচের সময়ের চেয়ে এখন বাংলাদেশ অনেক আত্ববিশ্বাসী। নিজেদের সামর্থ্যরে প্রতি বিশ্বাস এবং আস্থাও বেড়েছে অনেক।
তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপের পর আমরা কয়েকটি বড় শক্তির বিরুদ্ধে সিরিজ জিতেছি। তবে প্রথম ম্যাচটা যে কোনো সিরিজের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম লক্ষ্য, প্রথম ম্যাচ জেতা। কাজগুলো সব ঠিক ঠাক মত করা।’
নিউজ ডেস্ক ।।আপডটে, বাংলাদশে সময় ০৯:১৭ পিএম,২৩ সেপ্টেম্বন ২০১৬ শুক্রবার
এইউ