Home / চাঁদপুর / চাঁদপুর বিএনপির রাজনীতিতে অনুপস্থিতি ও অন্তঃকোন্দল দৃশ্যমান!
চাঁদপুর জেলা বিএনপির

চাঁদপুর বিএনপির রাজনীতিতে অনুপস্থিতি ও অন্তঃকোন্দল দৃশ্যমান!

চাঁদপুর জেলা বিএনপির রাজনীতিতে অনুপস্থিতি ও অনঃকোন্দল কি দৃশ্যমান? সাবেক ও বর্তমান নেতাদের অনেকেই কর্মসূচিগুলোতে অংশ নিচ্ছেন না।

সম্প্রতি সাংগঠনিক বিভাগ হিসেবে কুমিল্লা অঞ্চল চাঁদপুর প্রতিনিধি সম্মেলন গত ৩ সেপ্টেম্বর অনেকটা ঘরোয়া আয়োজনে চাঁদপুর প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে সাবেক সাংসদসহ ও বর্তমান অনেক নেতাদের উপস্থিতি মেলেনি।

যদিও সদ্য ঘোষিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে চাঁদপুর জেলার রাজনীতির সাথে জড়িত আছে এমন ১৫ নেতাসহ চাঁদপুরের ২১ জনের নাম পাওয়া গেছে।

কিন্তু এদের মধ্যে সেদিনের কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে জেলা বিএনপির আহবায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক, এসএম কামাল চৌধুরী, মোতাহের হোসেন পাটওয়ারী ছিলেন।

জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সফিউদ্দিন আহমেদ, খান দেলোয়ার, সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ. হামিদ মাস্টার, সাবেক সহ-সভাপতি ইকবাল বিন বাশার, নির্বাহী কমিটির বাকি ১৮ জন সদস্য, ৫ টি আসনের সাবেক সাংসদ, স্থানীয় বিএনপির সাবেক সিনিয়র নেতৃবৃন্দ, ছাত্রনেতা, অঙ্গসহযোগী সংগঠন নেতৃবৃন্দের অনেকেই উপস্থিত ছিলেন না।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আ. হমিদ মাস্টার বলেন, ‘জেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়কের প্রতি ক্ষোভের কারণেই হয়তো অনেকেই প্রতিনিধি সভায় উপস্থিত ছিলেন না। কারণ জেলা বিএনপির আহবায়ক অনেক বেশি একঘেয়োমি কাজ করেন। তিনি তাঁর ইচ্ছেমতো সংগঠন চালাচ্ছেন। প্রতিনিধি সভায় যারা উপস্থিত ছিলো তাদের প্রত্যেকেই ওই নেতার সৃষ্ট নেতাকর্মী।’

তাঁর দাবি, ‘এভাবে চলতে থাকলে সাংগঠনিকভাবে দল অনেক দুর্বল হয়ে যাবে একমাত্র বেগম খালেদা জিয়াই পারবে চাঁদপুর জেলা বিএনপির এ সমস্যা নিরসন করতে। নয়তো সংগঠনিকভাবে দল আরো বেশি দুর্বল হয়ে পড়বে।’

জেলা বিএপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও বর্তমান বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তফা খান সফরী বলেন, ‘বর্তমানে চাঁদপুর জেলা বিএনপি এক নেতার নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিনি তাঁর ইচ্ছেমতো সংগঠন চালাচ্ছেন। তিনি যাকে ইচ্ছে তাকে দলের বিভিন্ন দায়িত্ব দিচ্ছেন, আবার যাকে ইচ্ছে তাকে অবমূল্যায়ন করছেন। যার ফলে আমি জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়া সত্ত্বেও বর্তমান কমিটিতে আমাকে সদস্য হিসেবেও রাখা হয়নি’।

তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যে সংগঠনে আমাদের একজন সদস্য করা হলো না সেই সংগঠনের প্রতিনিধি সভায় আমি কী করে উপস্থিত থাকি?’

প্রতিনিধি সভায় সাবেক সাংসদসহ সিনিয়র নেতাদের অনুপস্থিতের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমান আহ্বায়ক নিজের ইচ্ছে মতো সংগঠন চালাচ্ছেন। তিনি প্রতিনিধি সম্মেলনের আয়েজন করলেও সেখানে সিনিয়র নেতাদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে পারেনি। এতে সাবেক ও বর্তমান নেতাসহ সাংসদরা উপস্থিত না থাকায় কেন্দ্রীয় নেতারা কি ধারণা পোষণ করলো ‘

এ অনুষ্ঠানে যদি সাবেক সাংসদ সদস্যসহ সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকতো তবে অনুষ্ঠানটি অনেক বেশি পূর্ণতা পেতো। বলে তিনি দাবি করেন।

তবে এ বিষয়ে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়র মমিনুল হক, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান ভূইয়া কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মানিকুর রহমান মানিকও বক্তব্য দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক অ্যাড. সলিম উল্যাহ সেলিম চাঁদপুর টাইমসকে জানান, ‘কোনো সমন্বয় নেই এ কথাটি ঠিক নয়, ওনারা তো বিএনপিই করেন না। বিএনপি করলে তো আন্দোলন সংগ্রামে আসতেন।’

প্রতিনিধি সম্মেলনে ওইসব নেতাদের না আসা প্রসঙ্গে তিনি জানান, ‘তাদের প্রত্যেককে দাওয়াত করা হয়েছে, মানিক সাহেব (জেলা বিএনপির আহবায়ক) সরাসরি গিয়ে দাওয়াত করেছেন। এসব নেতাদের কেউ কেউ দেশের বাইরে রয়েছেন। তাদেরকে হয়তো সরাসরি দাওয়াত করা সম্ভব হয়নি, কিন্তু টেলিফোনে কথা হয়েছে। আবার কেউ টেলিফোন ধরেন না।’

সমন্বয়হীনতার বিষয়ে চাঁদপুর টাইমসের কাছে চাঁদপুরে ওইসব কেন্দ্রীয় নেতারা একাধিক প্রসঙ্গ টেনে বক্তব্য দিয়েছেন, এ প্রসঙ্গে আপনার বা আপনার বর্তমান কমিটির মন্তব্য কি জানতে চাইলে সাবেক এ ছাত্রনেতা জানান, ‘সমন্বয়হীনতা যদি থাকে, তাহলে ওনারা কর্মসূচিতে আসুক, সেখানে এসে আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলুক, তখন আমাদের দ্বারা বিষয়টির সমাধান না হলে বিএনপি চেয়াপার্সনের কাছে গিয়ে অভিযোগ করতে পারেন। বরং আমরা জেনেছি তাঁরা গোপনে গিয়ে খালেদা জিয়ার সাথে কথা বলেছেন।’

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান মো. সফিকুজ্জামান জানান, ‘প্রতিনিধি সভা চাঁদপুরের ১৫ ইউনিটের ৭৫ জন সুপার ফাইভদেরকে নিয়ে কুমিল্লা সাংগঠনিক বিভাগীয় অঞ্চলের উদ্যোগে করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় নেতারা কেন্দ্রে রাজনীতি করবেন, তৃণমূলে থাকতেই হবে, বিষয়টি এমন নয়।’

সমন্বয়হীনতার কারণে কেন্দ্রীয় নেতারা ছিলেন না এবং ব্যাপকহারে অনপুস্থিতির অভিযোগ বিষয়ে তিনি বলেন, প্রতিনিধি সম্মেলন যেহেতু সাংগঠনিক বিভাগীয় অঞ্চল কুমিল্লা থেকে করা হয়েছে। সেহেতু বিষয়টা তারাই সমন্বয় করার কথা, চাঁদপুর জেলার নয়।’

এছাড়া জেলা বিএনপির রাজনীতিতে বিভাজনের ইঙ্গিত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অনেকটা এড়িয়ে যান এ নেতা।

এদিকে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, গত বছর জেলা বিএনপির সাবেক সাধরণ সম্পাদকের নেতৃত্বে নতুন আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করার পর থেকে দলীয় কোন্দল কিছুটা প্রকাশ্যে রূপ নেয়। এর মধ্যে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি সদর উপজেলা ও চাঁদপুর পৌর বিএনপির নতুন কমিটা ঘোষণার মধ্য দিয়ে একক নেতৃত্বের বিষয়টি আরো প্রকাশিত হয়।

এতে আন্দোলন সংগ্রামে তৃণমূলদের উপস্থিতি অনেকাংশেই কমে যায়।

চলমান কমিটির নেতৃবৃন্দ বলছেন, সাবেক নেতারা আন্দোলন সংগ্রামে অংশ ও মামলা-হামালা জড়িত নেতাকর্মীদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন না। সাবেক সাংসদ ও নেতারা বলছেন, তাদের সাথে বর্তমান কমিটি সমন্বয় না করে একতরফা নীতি অবলম্বন করছেন।

প্রসঙ্গত, সদ্য ঘোষিত জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বার্হী কমিটিতে চাঁদপুরের ২১ জন নেতা স্থান পেয়েছেন।

এরা হলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনে উপদেষ্টা নুরুল হুদা, আতাউর রহমান ঢালী, অ্যড. বোরহান উদ্দিন (মতলব উত্তর), আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এহছানুল হক মিলন (কচুয়া), রাজস্ব বিষয়ক সম্পাদক লায়ন হারুনুর রশিদ (ফরিদগঞ্জ), প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রাশেদা বেগম হীরা (চাদঁপুর সদর), সহ-আন্তর্জাতিক সম্পাদক আনোয়ার হোসেন খোকন (শাহরাস্তি), সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন নসু (ফরিদগঞ্জ), সদস্য জিএম ফজলুল হক, (চাদঁপুর সদর), ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক (হাজীগঞ্জ), শফিকুর রহমান ভূইয়া (চাদঁপুর সদর), ইসমাইল হোসেন বেঙ্গল (ফরিদগঞ্জ), মকবুল হোসেন আকন্দ (হাজীগঞ্জ), ডা. জালাল উদ্দিন (মতলব উত্তর), (চাদঁপুর সদর), মেস্তফা খান সফরী (চাদঁপুর সদর), কাজী রফিক (ফরিদগঞ্জ), মোশারফ হোসেন (কচুয়া), এমএ মতিন (হাজীগঞ্জ)।

চাঁদপুর বিএনপির রাজনীতিতে অনুপস্থিতি ও অন্তঃকোন্দল দৃশ্যমান!

About The Author

প্রতিবেদক- আশিক বিন রহিম

: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ৩:৩০ পিএম, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬, সোমবার
ডিএইচ

Leave a Reply