স্বামী-স্ত্রী। দু’জনই নানা অপকর্মের সঙ্গে লিপ্ত। কখনো কাউকে ফাঁসানো। আবার কখনো ধোঁকা দেয়া। বাসা ভাড়া নিয়ে শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছিল জাল টাকা তৈরি করে রাতারাতি কোটিপতি হওয়ার। দীর্ঘ ৭ বছর ধরে হন্যে হয়ে পুলিশ খুঁজছিল এ দম্পতিকে।
অবশেষে ধরা পড়ার পর বেরিয়ে এসেছে তাদের নানা অপকর্মের তথ্য। জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে কীভাবে জাল টাকার কারবার করে রীতিমতো লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছে প্রতারক জসিম ও তার স্ত্রী শিল্পী।
পুলিশ জানিয়েছে, নগরীর হালিশহর থানার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে স্ত্রীসহ জাল নোট সিন্ডিকেটের মূল হোতা জসিমকে গ্রেপ্তার করে তারা। এই সময় তার বাসা থেকে পাওয়া গেছে আড়াই লাখ টাকার জাল নোট।
এর আগে গত সোমবার রাতে পুলিশ অভিযান চালায় বসুন্ধরা আবাসিকের ১ নম্বর রোডে বসুন্ধরা টাওয়ারের পঞ্চম তলার বি ফ্ল্যাটে। সেখানে নাম ঠিকানা গোপন করে প্রতারক জসিম উদ্দিন ও তার স্ত্রী বিবি তাসলিমা আক্তার শিল্পী দীর্ঘদিন বসবাস করে আসছিল। দুইজনের বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর পশ্চিম গুমদণ্ডিতে। ধরা পড়ার সময় বাড়ির ঘুমানোর বিছানার নিচ ও আলমারি থেকে ২৬০টি ১০০০ টাকার জাল নোট অর্থাৎ ২ লাখ ৬০ হাজার টাকার জাল নোট উদ্ধার করেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এই সময় ৭টি মোবাইল সেটও জব্দ করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে এই প্রতারক দম্পতি জানায়, জাল টাকার নোট তৈরির ব্যবসা তাদের দীর্ঘদিনের। আগে মানুষকে ধোঁকা বানানোর নানা অপকর্ম করে তারা শুরু করে। তবে জাল নোট তৈরির মাধ্যমে প্রচুর টাকা আয় করছিল জসিম ও তার স্ত্রী শিল্পী।
চট্টগ্রাম ছাড়াও ফেনী, কুমিল্লা, ঢাকা, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, হাটহাজারী, কক্সবাজারসহ একাধিক অঞ্চলে তাদের প্রচুর কারিগর রয়েছে। যারা জসিম ও শিল্পীর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকায় জাল নোটের বড় কারবার খুলে বসেছে।
জিজ্ঞাসাবাদে প্রতারক জসিম উদ্দিন জানায়, দীর্ঘ ৭/৮ বছর ধরে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তারা জাল নোট ব্যবসা করে আসছে। এই পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে অন্তত ৫টি জাল নোটের প্রতারণা মামলা রয়েছে। সর্বশেষ মামলা করা হয় শহরের খুলশি থানায়।
এই বিষয়ে সে বলে, দুই লাখ টাকার জাল নোট তৈরি করলে ১০ হাজার টাকার কম খরচ হয়। কিন্তু সেখান থেকে উঠে আসে অন্তত ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। দিনের বেলায় বাড়ির দরজা বন্ধ রাখতে হয়। রাত হলে শুরু হয় ঘরের পর্দা লাগিয়ে জাল নোট তৈরির কাজ।
জসিমের স্ত্রী শিল্পী ধরা পড়ার পর কেঁদে উঠে। সে বলে, প্রথমবার ধরা খেয়ে ভয় লাগছে। এবারের মতো ছাড়া পেলে আর এই জগতে আসবো না। এই সময় সে বলে, জাল নোট তৈরির পর থেকে আশপাশের কোনো প্রতিবেশিকে বাড়িতে সে দাওয়াত করতো না। যদি কেউ ঘটনা টের পেয়ে যায়।
তবে বেশির ভাগ সময় যারা আসতো তাদের সবাই হয়তো খুব সকালে নয়তো গভীর রাতে বাড়িতে ঢুকতো। এই কাজে তাদের মতো অন্তত ১০টি সিন্ডিকেট চট্টগ্রামে ছড়িয়ে আছে বলে জানায় শিল্পী।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২:৫০ এএম, ৩১ আগস্ট ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur