আমার নাম আয়েসা, থাকতাম উত্তর হাঙ্গেরিতে।
সেকেন্ডারি স্কুলে ইতিহাস ক্লাসে আমি প্রথম ইসলাম ধর্মের নাম শুনেছিলাম। ইতিহাসে ইসলামের কথা থাকার কারণ, হাঙ্গেরি ১৫০ বছর তুর্কি শাসনে ছিল।
আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে মলেকুলার বায়োলজিতে পড়ার সময় কয়েকজন বিদেশী মুসলমান ছাত্রের সাথে পরিচিত হই। আমি সবসময় আশ্চর্য হয়ে ভাবতাম, মুসলমানরা কেন তাদের মুসলিম পরিচয় নিয়ে এত গর্বিত।
আমি ছিলাম ক্যাথলিক। কিন্তু সবসময় আমার ধর্মের কিছু কিছু ব্যাপারে একমত হতে পারতাম না, সন্দেহের ঘেরাটপে থাকতাম। উদাহরণ হিসেবে একটা কথা বলা যায়, ঈশ্বরের ছেলে থাকা এবং ট্রিনিটি তত্ত্ব আমার কাছে বিশ্বাসযোগ্য মনে হতো না।
তারপর আমি আমার বন্ধুদের সাথে কথা বলতে শুরু করলাম। একবার আমরা যখন ডিনারে ছিলাম, তখন আজান শুরু হলো। আমার এক বন্ধু বলল, থামাতে। কিন্তু আমি বললাম, না। আমি এতে খুবই অভিভূত হলাম। আমার হৃদয়ে নিশ্চিতভাবেই কিছু দোলা দিল।
তারপর আমি জানি না, কেন ওই গ্রীস্মে আমি কোরআন প্রোগ্রাম ডাউনলোড করেছিলাম। আমি আরবিতে তা শুনতাম আর ইংরেজিতে পড়তাম। তারপর আমি ইসলাম নিয়ে চিন্তা করতে শুরু করলাম। অনেক বই পড়তে থাকলাম।
কিন্তু দুই মাস পর আমি শেষ পর্যন্ত ইসলাম বেছে নেয়ার কথা ভাবতে থাকলাম। আমার দুই বন্ধুর সামনে আমি ‘শাহাদাহ’ উচ্চারণ করলাম। আমি বললাম : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহা, মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।
আমি আমার সংস্কৃতি, আমার পরিবার, বিশেষ করে আমার মায়ের বিরুদ্ধে ইসলাম গ্রহণ করলাম।
এর কিছু দিন পর রোজা শুরু হলো। আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, রমজানের মাধ্যমেই ইসলামে আমার নতুন জীবন শুরু করব। আল হামদুলিল্লাহ। আমি সফলভাবেই তা করতে পারলাম।
আগস্টের ৪ তারিখে আমি নামাজ পড়া শুরু করলাম। শুরুতে কাজটা কঠিন ছিল। কারণ, আমার চারপাশের লোকজনের কেউ আচারনিষ্ঠ মুসলমান ছিলেন না। ফলে আমি কারো কাছে কিছু জানতে চাইতে পারতাম না।
আমি ইন্টারনেটে নামাজ সম্পর্কে শিখতে লাগলাম। এর মাধ্যমেই আমি অজু, গোসল সম্পর্কে জানতে পারলাম, পবিত্রতা সম্পর্কে ইসলামি ধারণা বুঝতে পারলাম।
একবার আমার এক বন্ধু আমাকে তো টলিয়েই দিয়েছিল। সে বলল, তুমি যেহেতু জন্মসূত্রে মুসলমান নও, তা-ই কখনোই ইসলাম সম্পর্কে পুরোপুরি জানতে পারবে না। প্রথমে মুষড়ে পড়েছিলাম। কিন্তু লেগে থাকায় আমার ধর্মটি আমি ভালোমতো বুঝতে পারছিলাম।
আমি যখন নামাজ পড়তে শুরু করলাম, আমি চিন্তা করলাম, আল্লাহ এখন আমাকে দেখে হাসছেন। কারণ আমি নামাজে কী কী করতে হবে, তা লিখে তা দেখে দেখে নামাজ পড়তাম। তবে অল্প সময় পড়ে আমি সুরাগুলো মুখস্ত করতে সক্ষম হলাম। তারপর থেকে আরবি ভাষা আমার জন্য কোনো সমস্যা হিসেবে থাকল না। –
আমি ফেসবুকের মাধ্যমে অনেক নতুন বন্ধু ও বোন পেলাম। আমার অনলাইন বোনেরা আমাকে অনেক ভালোবাসা আর সাহস দিতেন। একবার এক মুসলিম পুরুষ আমাকে প্রস্তাব দিলেন, তিনি আমার প্রথম হিজাবও দিলেন। একটা জায়নামাজ, একটা ইসলামি বইও দিলেন। তারপর থেকে আমি হিজাব পরছি।
মায়ের সাথে আমার সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছিল। তিনি আমাকে সন্ত্রাসী পর্যন্ত বলতেন। আমাকে তাকে এবং দেশকেও ছাড়তে হবে কিনা তা নিয়ে ভাবতাম। তিনি ফ্রিজ ভরে রাখতে শূকরের মাংস দিয়ে। আমি সেখান থেকে কিছু খেতে অস্বীকার করতাম। এ নিয়ে ঝগড়া হতো।
তিনি আমাকে হিজাব পরা দেখতে পারতেন না। আমি নামাজ পড়ি, সেটাও চাইতেন না। তিনি বলতেন, ‘আমি একটা খ্রিস্টান সন্তান জন্ম দিয়েছি, পর্দা পরা কোনো মুসলিমকে নয়।’
আমাদের মধ্যে সমস্যা হতে থাকল। আলহামদুলিল্লাহ। এখন তিনি নমনীয় হয়েছেন। মনে হচ্ছে, তিনিই ইসলাম গ্রহণ করবেন। আল্লাহর কাছে এজন্য খুবই কৃতজ্ঞ। এখন আমি হিজাব পরেই বাইরে যাই। তিনি কিছু বলেন না।
আমি জীবনে কখনো আমার বাবার সাথে কথা বলিনি। তিনিও আমাকে দেখতে চাইতেন না। কিন্তু ইসলামের কারণে তিনিও এখন প্রায়ই আসেন আমার কাছে।
হ্যাঁ, আমার জীবনটা একটা বড় পরীক্ষা। তবে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া, আমাকে তিনি ধৈর্য ও আশা দিয়েছেন। (অনুবাদ : ফুয়াদ ফয়সাল, উৎস- নয়াদিগন্ত)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১২:৪০ পিএম, ২৬ আগস্ট ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ