আনুষ্ঠানিকভাবে ১৫ আগস্ট জন্মদিন পালন থেকে বিরত থাকার ঘোষণা দিলেও তা ‘অমান্য’ করে শোক দিবসে মালয়েশিয়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার অনুসারীরা জন্ম দিনের কেক কেটে আনন্দ উল্লাস করেছে।
খালেদা জিয়ার এমন সিদ্ধান্তে মালয়েশিয়ার অনেক নেতা সাধুবাদ জানালেও নেতাকর্মীরা জন্মদিন উদযাপন করায় প্রবাসে নানা সমালোচনার ঝড় বইছে।
সূত্রমতে, গত ২৩ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কেক কেটে উৎসব করে জন্মদিন পালন করেননি বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এমনকি নেতাকর্মীদেরকেও ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানাতেও নিষেধ করেছেন তিনি। জন্মদিনে উল্লাস না করে দেশবাসী ও প্রবাসীদের কাছে দোয়া চেয়েছেন তিনি।
কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জন্মদিনের কেক কেটে উৎসব না করলেও দেশের ন্যায় প্রবাসেও দলটির নেতাকর্মীরা ঠিকই কেক কেটে উল্লাস করেছেন। অনেকে কেক কেটে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্টও দিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মালয়েশিয়া বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘মূল কমিটি জন্ম দিন পালন করেনি বুকিত বিনতাং শাখা কমিটি ও মালয়েশিয়া যুব দল জন্মদিনের কেক কাটার আয়োজন করলে সেখানে মালয়েশিয়া বিএনপির নেতৃবৃন্দ উপস্তিত হয়ে নেত্রীর জন্ম দিন পালন করা হয়। শুধু তাই নয় কেক কাটার অনুষ্ঠানে যোগ দেন , বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস মির্জা আব্বাস ও সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্ত্রীয় কমিটি বিএনপির শিশু বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী।
বুকিত বিনতাং বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের সভাপতিত্বে যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নাসির মোল্লার পরিচালনায় জন্ম দিনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার বাদলুর রহমান খান বলেন, ‘দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হচ্ছেন জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের মূর্ত প্রতীক। দেশের জনগণ বর্তমান সরকারের বাকশাল কায়েমের স্বপ্ন কখনও সফল হতে দেবে না। আওয়ামী লীগ সরকার সুকৌশলে গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে আবারও বাকশাল কায়েমের চেষ্টা করছে।’
তিনি বলেনদ, ‘শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে হলে এক যুগে সবাই কাজ করতে হবে।তাই দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই স্বৈরাচারকে হটিয়ে ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা হবে।’
এসময় শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে তাৎক্ষণিক অনুষ্ঠানে যোগদেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বিএনপি নেতা কর্মীদের সাথে কৌশল বিনিময় করে স্থান ত্যাগ করেন।
এক সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি দেশ নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য দোয়া চেয়েছেন এবং সেই সাথে তিনি প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশনেত্রীর হাত শক্তিশালী করার আহবান জানান।
এই সময় আরো উপস্থিত ছিলেন ছিলেন, মালয়েশিয়া বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মাহবুব আলম শাহ ,কেন্দ্রীয় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মালয়েশিয়া বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসেন , যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন ,আব্দুর রউফ লিটন , এস এম জাহাঙ্গীর আলম ,সহসাধারণ সম্পাদক এস এম নিপু ,ফজলুল করিম সোহরাব ,সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা সালাহ উদ্দিন,প্রচার সম্পদক এস এম বশির আলম ,যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মঞ্জু খাঁ ,সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম ইলিয়াস ,সহদপ্তর সম্পাদক এ কে এম হাবিবুর রহমান শিশির ,আন্তর্জাতিক সম্পাদক আবু
জাফর, আপ্যায়ন বিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টিটু, সহ অর্থ বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, যুবদল নেতা মিনহাজ উদ্দিন, নাসির উদ্দিন নাসির, বুকিত বিনতাং বিএনপির সহসভাপতি বোরহান উদ্দিন তালেব ,সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন সেলিম , মোহাম্মদ জামাল হোসেন, মোহাম্মদ আবু কাওসার ভূঁইয়া, সবুজ আহমেদ প্রমুখ।
পরে মোনাজাতের দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে মোনাজাত করা হয়।
এ ছাড়া মালয়েশিয়া বিএনপির প্রায় সবগুলো শাখা ইউনিট খালেদা জিয়ার জন্মদিন উদযাপন করেছে। কেউ কেউ আবার কেক না কেটে মিলাদের আয়োজনও করেছেন।
এদিকে তবে দেশের ‘চলমান সংকট, বন্যা পরিস্থিতি ও নেতা-কর্মীদের জেল-গুম-খুনের’ কারণে খালেদা জিয়ার এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন মালয়েশিয়া আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতারা।
বিকেলে যুবলীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নয়, দলের পলাতক নেতাকর্মীরা আসতে পারবে না তাই এবার খালেদা জিয়া জন্মদিন পালন করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মালয়েশিয়া বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ সভাপতি মাহবুব আলম শাহ চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অত্যন্ত নির্মমভাবে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল। এদিন জাতীয় শোক দিবস। এ দিনের প্রতি সম্মান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের জন্মদিন পালন না করার সিদ্ধান্ত ইতিবাচক বার্তা বহন করে।’
তিনি দলের চেয়ারপারসনের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে মালয়েশিয়া বিএনপি জন্ম দিন পালন করেনি। একটি শাখা কমিটি কেক কাটার আয়োজন করেছিল সেখানে আমরা উপস্তিত হয়ে দোয়া ও নেত্রীর দীর্ঘায়ূ কামনা করে মোনাজাত করেছি।’
মালয়েশিয়া যুব দলের ভার প্রাপ্ত সভাপতি মজনু খান চাঁদপুর টাইমসকে বলেন, ‘ঘরোয়া পরিবেশে ভালোলাগা থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে কেক কেটে উৎসব করা হয়েছে। বলা যায় অনাড়ম্বর পরিবেশে। এই সরকারের নির্যাতন নিপীড়নে খোলা আকাশের নিচে তো আনন্দ উল্লাস করার সুযোগ নেই তাই ঘরোয়া পরিবেশে উৎসব করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৯৩ সালের ১৫ আগস্ট জন্মদিন উদ্যাপন শুরু করেন। তবে তা ছিল ঘরোয়াভাবে ও অনাড়ম্বরভাবে।
বিএনপি ক্ষমতা হারিয়েছে বিরোধী দলে যাওয়ার পর ১৯৯৬ সাল থেকে এ দিনটিতে কেক কেটে জন্মদিন উদ্যাপন শুরু হয়।
১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রীর মিন্টো রোডের সরকারি বাসভবনে খালেদা জিয়া প্রথমবারের মতো নেতা-কর্মীদের নিয়ে কেক কেটে জন্মদিন উদযাপন করা শুরু করেন।
সে থেকে প্রতিবছর বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে আলাদা আলাদা নেওয়া কেক ১৫ আগস্ট রাত ১২টা ১ মিনিটে কাটেন খালেদা জিয়া।
কিন্তু এবারই তার ব্যতিক্রম হলো।