Home / স্বাস্থ্য / চুল পড়া রোধ করতে সহজ করতে কিছু করণীয়
চুল পড়া রোধ করতে সহজ করতে কিছু করণীয়

চুল পড়া রোধ করতে সহজ করতে কিছু করণীয়

অটোইমিউন (ত্রুটিপুর্ণ রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা) ডিজিজের কারণে চুল পড়ে যেতে পারে। ইমিউন সিস্টেমের কাজ হচ্ছে পরিবেশ হতে যেসব জীবাণু দেহের ভিতরে প্রবেশ করে তা হতে শরীরকে সুরক্ষা প্রদান করা।

যখন এই সিস্টেম লোমগ্রন্থির সুস্থ টিস্যুকে আক্রমণ করে তখন এই সমস্যা দেখা দেয়। এই সমস্যার ক্ষেত্রে চুল পড়ে যাওয়া ছাড়া আর অন্য কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পায়না। ১৪% রোগীর যে স্থান হতে চুল পড়ে যায় সে স্থানে জ্বালাপোড়া করে এবং চুলকানি হয়।

এর কারণে দেহের যেকোনো একটি নির্দিষ্ট অংশ থেকে চুল পড়ে যেতে পারে। তবে মাথার ত্বকে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। রোগটিকে দুইভাগে ভাগ করা যায়- (১)এলোপেসিয়া টোটালিস (Alopecia totalis): শুধু মাথার সমস্ত চুল পড়ে যাওয়া (২)এলোপেসিয়া ইউনিভার্সালিস (Alopecia universalis): দেহের সমস্ত লোম পড়ে যাওয়া। এই সমস্যার প্রকৃত কারণ এখনো জানা যায়নি। তবে এর পেছনে বংশ বা জিনগত কারণ থাকতে পারে।

কারণ
অধিকাংশ ব্যক্তির দৈনিক প্রায় ৫০ থেকে ১০০ টি চুল পড়ে। কিন্ত মাথার ত্বকে প্রায় ১,০০,০০০টি চুল থাকে, তাই চুল পড়ার এই পরিমাণ স্বাভাবিকভাবে বোঝা যায় না। বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে চুল পাতলা হয়ে যায়। চুল পড়ার আরও বেশ কিছু কারণ রয়েছে, যেমন- হরমোনের সমস্যা, বিভিন্ন শারীরিক অসুস্থতা এবং বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া।

হরমোনজনিত কারণ (Hormonal factors):

চুল পড়া সাধারণভাবে বংশগতভাবে হয়ে থাকে। জীনগত কারণে নির্দিষ্ট কিছু সেক্স হরমোন স্থায়ীভাবে চুলপড়ার সমস্যাকে ত্বরান্বিত করতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালের সাথে সাথে ছেলেদের চুল পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। হরমোনের পরিবর্তন এবং ভারসাম্যহীনতার ফলে অস্থায়ীভাবে চুল পড়তে পারে। এটি নিম্নলিখিত কারণে হতে পারে-

গর্ভাবস্থা।
সন্তান জন্ম দান।
জন্মবিরতিকরণ পিল অনিয়মিতভাবে খাওয়া।
মেনোপোজের পূর্বে।
অন্য কোন রোগের কারণ (Medical conditions):

নিম্নলিখিত বিভিন্ন কারণে চুল পড়তে পারেঃ

থাইরয়েড গ্রন্থি দেহের হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যদি এই গ্রন্থি সঠিকভাবে কাজ না করে তবে এর ফলে চুল পড়ে।
যখন শরীরের ইমিউন সিস্টেম লোমগ্রন্থিকে আক্রমন করে তখন চুল পড়ে।
মাথার ত্বকে ইনফেকশন হলে চুল পড়ে, তবে ইনফেকশনের চিকিৎসা করা হলে পুনরায় চুল গজায়।
মেডিকেশন/ঔষধ (Medications):

নিম্নের রোগগুলোর জন্য যে ঔষধ দেওয়া হয় তার ফলে চুল পড়ে যায়-

ক্যান্সার।
আর্থ্রাইটিস।
বিষণ্নতা।
হৃদরোগ।
উচ্চ রক্তচাপ।
আরও যে সকল কারণে চুল পড়ে সেগুলি হলো-

শারীরিক (অস্বাভাবিক ভাবে ওজন হ্রাস, উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর) বা মানসিক চাপের (পরিবারের কেউ মারা গেলে) ফলে চুল পড়ে।
কিছু কিছু ব্যক্তির নিজের চুল টানার অভ্যাস থাকে। এই অভ্যাস সাধারণত মানসিক সমস্যার কারণে হয়ে থাকে। এই অভ্যাসের কারণেও চুলের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে, এবং ফলাফলস্বরূপ চুল পড়ে যায়।
চুল টেনে পিছনে বাঁধার মতো বিভিন্ন হেয়ারস্টাইলের কারণে চুলের গোড়ায় চাপ সৃষ্টি হলে চুল পড়ে যায়।

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চুল পড়ে যাওয়া (Too little hair) মাথার অস্বাভাবিক ত্বক (Irregular Appearing scalp)
ত্বকের ফুসকুড়ি (Skin rash) ত্বক ফুলে যাওয়া (Skin swelling)
অস্বাভাবিক ত্বক (Abnormal appearing skin) শুষ্ক বা খসখসে মাথার ত্বক (Dry or Flaky Scalp)
ব্রণ/পিমপল (Acne or pimples) শুষ্ক খসখসে ত্বক (Skin dryness, peeling, scaliness, or roughness)
মাথার ত্বকে চুলকানি (Itchy scalp) ত্বকে চুলকানি (Itching of skin)
অসুস্থ বোধ করা (Feeling ill) ত্বকের বৃদ্ধি (Skin growth)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়
যে যে বিষয়ের কারণে চুল পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়:

জীন ও বংশগত কারণে চুল পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
ঘন ঘন চুলের স্টাইল পরিবর্তনের ফলে চুলের গোড়া ফেটে যায়, ফলে চুল পড়ে যেতে পারে।
চুলে সঠিক পুষ্টি যেমন আয়রন এবং প্রোটিনের অভাব হলে চুল পড়ে যায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে
লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতিঃ শ্বেতাঙ্গ, কৃষ্ণাঙ্গ, হিস্প্যানিক এবং অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।

উত্তরঃ চুল পড়া কোনো প্রাণঘাতি রোগ নয়। এর ফলে কোনো ব্যথা হয় না এবং রোগাক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত সুস্থ থাকে। কিন্তু অনেকে এটি সৌন্দর্য হানিকারক বলে মনে করে, তাদের জন্য এটি একটি গুরুতর সমস্যা। এর কারণে একজন ব্যক্তি মানসিক ও সামাজিকভাবে চাপের সম্মুখীন হয়। এলোপেসিয়া ইউনিভার্সালিস হলে চোখের পাপড়ি, ভ্রু, নাক ও কানের লোম পড়ে যায়। এর কারণে সহজেই ধুলা, ময়লা এবং বিভিন্ন জীবাণু চোখে, কানে বা নাকে প্রবেশ করে।

যদি আপনার পরিবারের অন্য কোনো সদস্যের অটোইমিউন ডিজঅর্ডার যেমন টাইপ ডায়াবেটিস, বাত, থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা, সিস্টেমিক লুপাস ইরাইথ্রমেটসাস (Systemic lupus erythematosus), মারাত্মক রক্তস্বল্পতা এবং এডিসন’স ডিজিজ থাকে তাহলে আপনার এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের চুল পড়া রোগ আছে তাদের সাধারণত থাইরয়েড ডিজিজ, এটোপিক অ্যাকজিমা, নেজাল অ্যালার্জি এবং অ্যাজমা জাতীয় রোগ হয়।

নিম্নলিখিত উপায়ে চুল পরা রোধ করা যায়ঃ
১) সুষম খাবার খেতে হবে।
২) টান করে চুল বাঁধা যাবে না যেমন ঝুটি, বিনুনি বা পনিটেইল।
৩) বারবার চুল টানা, চুলকানো বা আঙ্গুল দিয়ে চুল প্যাঁচানো যাবে না।

Leave a Reply