একটি ভালোবাসাময় সুখী বৈবাহিক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য সবার মধ্যে যে গুণটি থাকা প্রয়োজন, তা হলো—আন্তরিকতা। আন্তরিক বলতে তিনি এমন কাউকে বুঝিয়েছেন, যিনি হবেন বিনীত, নমনীয়, বিশ্বাসযোগ্য, ভালো স্বভাব, সহযোগী মনোভাবাপন্ন, ক্ষমাশীল, উদার ও ধৈর্যশীল।
বিবাহিত জীবন অনেক ধরনেরই সমস্যা হয়ে থাকে যা আমরা অনেকেই জানি। আর সমস্যা হতেই পারে কারণ সবার দাম্পত্য এক রকম নয়। এক একটি মানুষের বিবাহিত জীবন থাকে একেক রকমের। আর কখনোই দু’প্রান্তের দুটি মানুষ একই রকম হয়না। তাদের পছন্দ-অপছন্দ, চাল-চলন, মতের মিল, সব কিছুই থাকে ভিন্ন ভিন্ন। আবার অনেকের কাকতালীয় ভাবে মনমানসিকতার মিল থাকে খুব অসাধারণ, যাদের আমরা বলে থাকি ‘পারফেক্ট কাপল’। কিন্তু সমস্যাটা হয় সেখানেই যখন বিবাহিত জীবনে দুটি মানুষের মতের অমিল হতে থাকে।
তখনই দেখা দেয় সম্পর্কে মহামারী সমস্যা। কিন্তু সব সমস্যাতেই শুধু একজনের দোষ থাকেনা। দোষ থাকে উভয়েরই। কিন্তু নিজের দোষটা অনেকেই মেনে নিতে পারেন না। আর পারেন না বলেই সমস্যা আরও বেশি খারাপ রূপ ধারণ করে। কিন্তু এমন কিছু বিষয় থাকে যা কখনোই বিবাহিত জীবনে বলা বা করা ঠিক না। বিশেষ করে নারীদের মনমানসিকতা পুরুষদের তুলনায় খুব নরম হয়ে থাকে ও নারীরা একটু বেশি স্বপ্ন বিলাসী হয়ে থাকেন। তাই তারা অনেক কিছুই মনে করেন ও বলে থাকেন যা আসলে ভুল। জেনে রাখুন তাহলে ১০ বিষয় যা কোন স্ত্রীর করা উচিত না।
১। আমি যেমন আছি তেমনি থাকবো, আমি যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে চলবো, আমার স্বাধীনতায় কোন বাঁধা দেয়া যাবে নাঃ
এই ধরনের কাজ করা ও এইভাবে চিন্তা করা মোটেও কোন ভালো কাজ নয়। আপনাকে অবশ্যই নিজেকে নিজে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আপনি যদি এমনটা ভেবে থাকেন তাহলে আপনার বিবাহিত জীবনে সমস্যা হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই নিজেকে জটিলতা থেকে দূরে রাখুন, ভালো চিন্তা করুন।
২। স্বামীর আগে অন্যদের প্রাধান্য দেয়াঃ
অনেক স্ত্রীই আছেন স্বামীর আগে অন্যদের বিশেষ করে নিজের বন্ধুদের প্রাধান্য বেশি দিয়ে থাকেন। যেমন ছুটির দিনে আপনার স্বামীকে বাড়িতে রেখে আপনি চলে গেলেন বন্ধুদের সাথে বাইরে শপিং করতে। কিন্তু যেহেতু ছুটির দিন আপনার স্বামী আপনাকে একান্তে পাশে চাইতেই পারেন।
৩। আপনার স্বামী আপনার বান্ধবী হবেন এমন আশা করবেন নাঃ
বান্ধবী তো বান্ধবী আর স্বামী তো স্বামীই। আপনি যদি মনে করে থাকেন আপনার স্বামীর সাথে আপনি আপনার প্রিয় বান্ধবীর মতো আচরণ করবেন, সব কথা তাঁকে বলবেন তাহলে তো সমস্যা হবেই। নিজের জীবনে সবার স্থান আলাদা ভাবে রাখুন, কিন্তু সবাইকে সমান ভাবে ভালোবাসুন।
৪। আপনার স্বামীকে অসম্মান করবেন নাঃ
বিবাহিত জীবনে আপনার স্বামীর কোন একটি কাজ আপনার অপছন্দ হতেই পারে তাই বলে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা, অন্য মানুষের সামনে যা-তা বলা থেকে বিরত থাকুন।
৫। কখনোই আপনার স্বামীকে নিজের বাবার মতো মনে করবেন নাঃ
সব পুরুষই যে এক রকম হয় তা ভাবাটা ভুল হবে। বাবা আর স্বামী কখনোই একরকম হয়না। তাই দুটি মানুষকে একসাথে মেলাবেন না ও আপনার স্বামীর সাথে আপনার বাবার তুলনা করবেন না।
৬। শারীরিক মিলন নিয়ে তুলকালাম করবেন নাঃ
অনেক স্ত্রীই আছেন যারা স্বামীর সাথে সহবাস করে মানসিক তৃপ্তি পান না। তা নিয়ে মহা কান্ডকারখানা ঘটিয়ে ফেলেন, স্বামীকে নিয়ে উপহাস করেন। কিন্তু এই ধরনের কাজ আপনার বিবাহিত জীবনের সমাপ্তি খুব সহজেই ডেকে আনতে পারে। স্বামীর কোন সমস্যা থাকলে তাকে এই ব্যাপারে সাহায্য করুন। তাকে সাহস দিন। চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
৭। যেকোন জিনিস তাকে বার বার মনে করিয়ে দেয়া থেকে বিরত থাকুনঃ
স্বাভাবিক ভাবেই আপনাকে কেউ যদি বার বার একটি ব্যাপার নিয়ে কথা বলেন কিংবা কোন একটি কাজের কথা বার বার মনে করিয়ে দেন, আপনি অবশ্যই বিরক্ত হবেন। ঠিক সেভাবেই আপনার স্বামীও আপনার এমন ধরনের কাজে বিরক্ত হতেই পারে।
৮। গৃহকর্ম করার জন্য স্বামীকে বাধ্য করবেন নাঃ
কাজে সাহায্য করা, নিজের কাজ নিজে করা এক জিনিস এবং স্বামীকে গৃহকর্ম করতে বাধ্য করা আলাদা জিনিস। আপনার স্বামীকে বলুন আপনার সাথে কাজে সাহায্য করতে। কিন্তু তাকে সব গৃহকর্ম করতে বলতে পারেন না আপনি।
৯। স্বামীকে কখনো প্রিন্স চার্মিং মনে করবেন নাঃ
প্রথমেই বলা হয়েছে যে, অনেক নারীরাই সপ্নবিলাসী হয়ে থাকেন। তারা মনে করেন তাদের স্বামী হবে রূপকথার সেই ঘোড়ায় চরে আসা রাজপুত্র, যে তার সব কথা শুনবে আর সব অসম্ভবকে সম্ভব করে দেবে। এমনটা না ভাবাই ভালো। বাস্তবতাকে সহজে মেনে নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
১০। কথায় কথায় মিথ্যা বলবেন নাঃ
মিথ্যা আমরা কমবেশি সবাই বলে থাকি। পুরুষরাও যে মিথ্যা বলে না তার স্ত্রীর সাথে, এই ধারণা না করাই ভালো। কিন্তু এমন অনেক নারীই আছেন যারা কথায় কথায় বার বার মিথ্যা বলেন, অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দেন। এইসব করলে আপনি খুব দ্রুত আপনার প্রতি স্বামীর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবেন।
একজন সুন্দর মনের ও সুন্দর গুণের স্ত্রী সংসারকে তাঁর নিজের আলোয় আলোকিত করে তুলতে পারেন। সাজিয়ে তুলতে পারেন সংসার জীবনকে সুখের স্বর্গীয় বাগানের মতো করে।
তবে এ কাজের জন্য দরকার প্রেমিক স্বামীর স্ত্রীর প্রতি ঐকান্তিক মায়া-মমতা ও সুগভীর ভালোবাসা। এই ভালোবাসা থাকলে দেখবেন, বিবাহিত জীবনে সুখ কাকে বলে!