বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা খালেদা জিয়াকে জামায়াত ত্যাগের পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের এ পরামর্শ বিএনপির জন্য ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা। তবে সেটা এখনই মানছেন না বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া
তবে ভোটের রাজনীতি ও রাজপথ দখলের জটিল সমীকরণের বিষয়টি মাথায় রেখে জামায়াত ছাড়ার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত এখনই নিচ্ছেন না খালেদা জিয়া।
যদিও নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে এ রাজনৈতিক দলটির নিবন্ধন বাতিল করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দলটির অনেক নেতার দণ্ড হয়েছে, অনেকে বিচার কাজও চলমনা রয়েছে।
সম্প্রতি গুলশান ও শোলাকিয়ায় মর্মান্তিক জঙ্গি হামলায় সন্দেহভাজন জঙ্গিসহ দেশি-বিদেশি ৩৩ নাগরিকের প্রাণহানি ও অর্ধশত মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় জাতীয় ঐক্য গড়ার উদ্যোগ নেন খালেদা জিয়া।
.
এ লক্ষ্যে বুধ (১৩ জুলাই) ও বৃহস্পতিবার ( ১৪ জুলাই) ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা, দলের সিনিয়র নেতা এবং পেশাজীবীদের সঙ্গে বৈঠক করেন তিনি।
বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন রাজনীতিবিদ ও বিশিষ্ট নাগরিক গণমাধ্যমকে জানান, জাতীয় ঐক্য গড়ার ক্ষেত্রে জামায়াতই বড় বাধা। এ বিষয়টি খালেদা জিয়াকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তারা।
তবে তাদের এ পরামর্শের পর খালেদা জিয়া জামায়াতের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেন- সেটিই ছিল সবার কাছে কৌতূহলের বিষয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০ ও ১৪ দলীয় জোটের বাইরে থাকা ডা. অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী’র (বি চৌধুরী) নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ বিকল্পধারা, ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, আ স ম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), আব্দুল কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ এবং সিপিবি ও বাসদকে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ার সম্ভাবনাকে সামনে রেখেই গত দুই দিনে অনুষ্ঠিত আলাদা তিন বৈঠকে জামায়াত ছাড়ার পরামর্শ দেন জোটের শীর্ষ নেতা, দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ ও বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবীরা।
কারণ, গত ৫ বছরে যতবার ঐক্য’র ডাক দিয়েছেন খালেদা জিয়া ততোবারই জামায়াত প্রশ্নে তার ডাক উপেক্ষা করেছেন বি. চৌধুরী, ড. কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রব, আব্দুল কাদের সিদ্দিকী, মঞ্জুরুল আহসান খান ও মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের মত জাতীয় নেতারা।
এক সূত্রমতে, ২০ দলীয় জোটে থাকা বাংলাদেশ লেবার পার্টি ছাড়া বাকি দলগুলোর প্রায় সবাই চায় জাতীয় ঐক্য গড়ার স্বার্থে এই মুহূর্তেই জামায়াতকে ছেড়ে দিক বিএনপি। তবে সাহস করে এই কথাটি খালেদা জিয়ার সামনে উত্থাপনের দায়িত্ব কেউ নিতে চান না।
বুধবার (১৩ জুলাই) ২০ দলের বৈঠকে বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি সব দলকে নিয়ে জাতীয় কনভেনশনের প্রস্তাব দিলে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম খালেদা জিয়াকে বলেন, জাতীয় কনভেনশনের আগে জামায়াতের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জামায়াত থাকলে অনেক দলই এ কনভেনশনে সাড়া দেবে না।
এরই প্রেক্ষিতে খালেদা জিয়া বলেন, এ রকম সংকটকালে এর আগে অনেকবার (১৯৮৬, ১৯৯১, ১৯৯৪-৯৫) আওয়ামী লীগের সাথে জোটবদ্ধ (যুগপৎ) আন্দোলন করেছে জামায়াত। এ বিষয়গুলো আমরা বার বার বলেছি। কিন্তু জামায়াত মুখ বন্ধ করে থাকে। ওনাদের উচিৎ এখন এগুলো নিয়ে কথা বলা।
সূত্রমতে, পরের দিন বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) বিশিষ্টজনদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যারিস্টার রফিক উল হক, ডা. জাফরউল্লাহ চৌধুরীসহ বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক জামায়াত ত্যাগের পরামর্শ দিলে প্রায় একই কথা বলেন খালেদা জিয়া। তার এই মনোভাবের কারণে সবাই ধরে নিয়েছেন জামায়াত ত্যাগের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত এখনই নিচ্ছেন না বিএনপি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, জাতীয় সমস্যা হচ্ছে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ। এটিকে মোকাবেলা এবং গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্যই জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন খালেদা জিয়া। সেটি নিয়ে কথা না বলে, সবাই জামায়াত নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। (প্রতিবেদনের উৎস- বাংলানিউজ)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৫৯ পিএম, ১৬ জুলাই ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ