চাঁদপুরে ঋণের দায়ে মাত্র ৩০হাজার টাকায় এক নবজাতক কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছে হতদরিদ্র এক দম্পতি। সোমবার (৮ অক্টোবর) শহরের মাদ্রাসারোড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
পরপর চারজন কন্যা সন্তান হওয়া ও দারিদ্রতার গ্লানি টানতে না পেরে সন্তান বিক্রি করেছেন তারা। যদিও নিজের সন্তানের মতো লালন পালন করবেন বলে জানিয়েছেন বাচ্চা কিনে নেয়া নিঃসন্তান দম্পতি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৪ ঠা অক্টোবর সকাল ১১টায় চতুর্থ কন্যা সন্তান জন্ম দেন কুলছুমা বেগম। নাম রাখেন হাফসা। চতুর্থবার কন্যা সন্তান হওয়া স্বামী দ্বীন ইসলাম স্ত্রীকে বকাঝকা করেন। স্ত্রী কুলছুমা বেগম, তিন সন্তান ইয়াসমিন, লাবনী ও তাছলিমাকে রেখে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন দ্বীন ইসলাম। পেশায় তিনি জেলে। আয় কম।
একদিকে চার কন্যা সন্তান অপর দিকে ঋণের ৭০ হাজার টাকা। কোনো উপায় না পেয়ে ৩০হাজার টাকা বিনিময়ে সন্তান বিক্রি করে দেন কুলছুমা ও দ্বীন ইসলাম দম্পতি। বোনকে বিক্রির কথা তরতর করে বলে দিলো বড় বোন লাবনী।
তৃতীয় শ্রেণিতে পড়া লাবনী আক্তার বলে, আঁর বইনেরে দিয়া দিছে। এক কাগছে নাম লেখছে আঁর বাপ-মা, নানু ও মামা। ত্রিশ হাজার টাকা দিছে। বিষয়টি স্বীকার করেছেন লাবনীর মা কুলছুমা বেগম।
তিনি জানান, যেহেতু সন্তান মানুষ করার সাধ্য নেই। অন্তত সন্তান বেঁচে থাকুক এমন আশা থেকেই সন্তান বিক্রি করে দিয়েছি। সাথে কিছু টাকাও পেয়েছি। কী করবো? এছাড়া আর কোনো উপায় ছিলো না। ঘরে তিন মেয়ে আছে। তার উপর এনজিও আশা থেকে ৭০ হাজার টাকা লোন নিয়েছি। সব মিলিয়ে মেয়ের ভবিষ্যতে কথা চিন্তা করেই দিয়ে দিছি।
অপরদিকে একই এলাকার সৌদি প্রবাসী মিজানুর রহমানের স্ত্রী সুফিয়া বেগমের সন্তান না হওযায় তিনি দীর্ঘ দিন সন্তান নেয়ার চেষ্টা করছেন। হাফসাকে পেয়ে বেজায় খুশি সুফিয়া। নবজাতক পেয়ে খুশি সুফিয়া মিজান দম্পতি। নতুন করে শিশুর নাম রেখেছেন মরিয়ম আকতার ফাতিমা।
এরইমধ্যে বাজার থেকে দুধসহ আনুষঙ্গিক সব কিনে এনেছেন। সুফিয়া বেগম বলেন, আমার নিজের সন্তান নেই। তাই দীর্ঘ দিন ধরে নবজাতক কেনার চেষ্টা করছিলাম। নিজের সন্তানের মতোই মানুষ করবেন বলে জানান শিশুর বর্তমান মা সুফিয়া।
এ ব্যাপারে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ মাজেদুর রহমান খানকে অবগত করা হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
বার্তা কক্ষ
১১ অক্টোবর, ২০১৮