জাকির নায়েকের বক্তব্যে ধর্মীয় বিদ্বেষ কিংবা হিংসা ছড়ানো নিয়ে কিছুদিন ধরে গণমাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনার পর পিস টেলিভিশনের সম্প্রচার নিষিদ্ধ করে দিয়েছে ভারত সরকার।
অন্যদিকে জাকির নায়েকের বক্তব্য প্রচারকারী পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায় থাকার কথা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন ঢাকার কয়েকজন কেবল অপারেটর।
বাংলাদেশ কেবল অনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মীর হোসেন আখতার বলেন, ‘আমি নিজেও আগে ওই চ্যানেলটি মাঝে মধ্যে দেখতাম। তবে গুলশানের ঘটনার পর বুঝলাম যে, আমি যেভাবে এই চ্যানেল দেখতাম, অনেকেই সেভাবে দেখেন না।’
‘আমরা পুরো দেশেই চ্যানেলটি বন্ধ করে দিতে চাচ্ছি। তবে সরকারের কোনো নির্দেশনা না থাকায় এই মুহূর্তে তা সম্ভব হচ্ছে না।’
গত ৭ জুলাই কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশনায় জাকির নায়েকের প্রকাশিত বই, সিডি পরীক্ষা করে দেখতে শুরু করে ভারতের মহারাষ্ট্র পুলিশ। একই সঙ্গে ইসলামি এ গবেষকের প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশনের কার্যালয়ের বাইরে পুলিশ মোতায়েন করে।
ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিসান বেকারি রেস্টুরেন্টে গত ১ জুলাই রাতে হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গিদের অন্তত দুইজন জাকির নায়েকের অনুসারী ছিল বলে জানায় স্থানীয় গণমাধ্যম।
একইদিন গুলশানে জঙ্গি হামলা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে গণমাধ্যমকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জাকির নায়েকের ধর্মবিষয়ক বক্তব্য ও কার্যকলাপ খতিয়ে দেখা উচিত ভারতের।’
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিশ বৃহস্পতিবার (৭ জুলাই) জাকির নায়েকের বক্তব্য তদন্ত করার নির্দেশ দেন বলে টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে জানানো হয়েছে।
গণমাধ্যমকে তিনি আরও জানান, বক্তব্যের পাশাপাশি জাকির নায়েকের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অ্যাকাউন্টস ও অর্থের উৎস খুঁজে দেখা হবে।
মুম্বাই পুলিশ কমিশনারও বলেন, তদন্ত চলছে। জাকির নায়েক এখন সৌদি আরব সফরে রয়েছেন জানিয়ে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আপত্তিকর কিছু পেলে ফেরার পর ব্যবস্থা।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও জাকির নায়েকের বক্তব্যকে ‘আপত্তিকর’ আখ্যা দিয়ে তার বিরুদ্ধে ‘যথাযথ পদক্ষেপ’ নেয়ার ইঙ্গিত দেয়।
জাকির নায়েক তার নিজের প্রতিষ্ঠিত পিস টিভিতে ধর্ম নিয়ে যে আলোচনা করেন বাংলাদেশসহ বাংলাভাষী মানুষের কাছে তা পৌঁছাতে সেগুলো বাংলা ডাবিং করে সম্প্রচার করে চ্যানেলটি। ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে জাকির নায়েকের বক্তব্যে বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে।
বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী ওসামা বিন লাদেনকে সন্ত্রাসী বলতে অস্বীকার করেছিলেন তিনি। তার বক্তৃতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বহু তরুণ জঙ্গিবাদে ঝুঁকছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘পিসি টিভি সম্প্রচারের বৈধ কোনো লাইসেন্স নেই। ২০০৯ সালে সম্প্রচারের অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন জানালেও তা দেয়া হয়নি বলে জানান ওই কর্মকর্তা। দুবাইভিত্তিক বেসরকারি এ টেলিভিশন ২৪টি অনুমতিহীন চ্যনেলের মাধ্যমে ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সম্প্রচার হচ্ছে।’
সর্বশেষ ভারতের উত্তর প্রদেশের মুসলিম নেতারা জাকির নায়েককে ইসলামবিরোধী ও ভারতবিরোধী আখ্যা দিয়ে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ এবং তাকে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
এদিকে গত কয়েক দিন ধরেই মুম্বাইয়ে অবস্থিত জাকির নায়েকের প্রতিষ্ঠিত ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন কার্যালয়ের চারপাশ নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা ঘিরে রেখেছে। এর মধ্যেই দেশটিতে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ এল সরকারের পক্ষ থেকে।(বাংলা মেইল)
নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট ০৭:৪৩ পিএম,০৯ জুলাই ২০১৬,শনিবার
এইউ