মেঘনা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদী বেষ্টিত চাঁদপুর জেলা। এ জেলার যেমন রয়েছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য তেমনি রয়েছে ফলের সমারোহ।
প্রতি বাড়িতে ফল ও ঔষধি বৃক্ষে সবুজ ছায়াঘেরা পরিবেশ সৃষ্টিতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ প্রকল্প -‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পটি সহায়ক ভূমিকা রাখছে। বৃক্ষরোপণে আগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়া চাঁদপুরবাসীর মাঝে বৃক্ষরোপণে ব্যাপক ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়েছে।
মেঘনা ধনাগোদা ও চাঁদপুর সেচ প্রকল্পের ভেতর সবুজ বেষ্টনীতে রয়েছে ব্যাপক ফলের গাছ। প্রতি বছরই কৃষি বিভাগ কর্তৃক বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ উদযাপনের মাধ্যমে দেশের মানুষকে উজ্জীবিত করা হয়। এ বছরও এখন বৃক্ষসপ্তাহ ২০১৬ চলছে।
পুষ্টি, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও দেশকে ফল উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করার লক্ষ্যে ‘অর্থ পুষ্টি স্বাস্থ্য চান, দেশী ফল বেশি খান’ এমন শ্লোগান নিয়ে ১৬ জুন শুরু হয়েছে বৃক্ষ সপ্তাহ ২০১৬। যা ৩০ জুন পর্যন্ত চলবে। আমাদের দেশের মাটি ও জলবায়ু ফল চাষাবাদের উপযোগী।
দেশে ১ শ’৩০ জাতের ফল রয়েছে। এ সব ফল ভিটামিন ও খনিজ লবণের প্রাধান্য রয়েছে যা আমাদের দেহের শক্তি জোগায়। প্রাপ্ত তথ্য মতে, পরিকল্পিতভাবে দেশের ১ কোটি ৯৪ লাখ বসতবাড়িতে সাড়ে চার লাখ হেক্টর জমিতে দেশীয় ফলের বাগান তৈরি করে আমাদের পুষ্টির চাহিদা মেটানো যাবে।
বর্তমানে দেশে ১ দশমিক ৪৪ লাখ হেক্টর জমি থেকে ২২ লাখ টন ফল উৎপাদন হয়। দেশে উৎপাদিত ফলের মধ্যে কলা, আম, কাঁঠাল, নারকেল, পেয়ারা, আনারস ও তরমুজ এ ৭ টি ফলের উৎ্পাদন ১৭ দশমিক ৫ লাখ টন। যা মোট উৎ্পাদনের ৮০% ভাগ।
ফল উৎপাদনে বাংলাদেশের অগ্রগতি আশাব্যঞ্জক। বিশ্বে ফল উৎ্পাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ২৮তম। কাঁঠাল উৎ্পাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয়, আম উৎ্পাদনে সপ্তম ও পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম। বিশ্বে আম উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি হারে আমের ফলন বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১শ’ ৬ লাখ দেশিয় ফল উৎ্পাদন হয়েছে। দেশে উৎপাদিত ফলের মধ্যে ৪০ প্রকার ফল রফতানি হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে এখন আম যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশে রফতানি হচ্ছে।
দু’অর্থবছরে ১ লাখ ৬০ হাজার ও ১৯ লাখ ৬০ হাজার ডলারের ফল রফতানি হয়েছে। ফলের রাজা আমের লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। লিচু বাণিজ্যের পরিমাণ কমবেশি হাজার কোটি টাকা। কাঁঠাল কেনাবেচার পরিমাণ ৬শ’ কোটি টাকারও বেশি।
পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ২ শ’ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন হলেও আমরা গ্রহণ করতে পারছি গড়ে ৭৭ গ্রাম। ফলে দেশের ৮৮%লোক ভিটামিন-এ, ৮৭% ভিটামিন-সি, ৯৬%রিবোফ্লেভিন ও ৯৩%লোক ক্যালসিয়ামের অভাবে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যা ভাবতেও অবাগ লাগে।
রোগ প্রতিরোধে ফল জোরালো ভূমিকা পালন করে । তাই দেশের প্রতিটি হাসপাতালে প্রতিদিনই বিপুল পরিমাণ ফলের চাহিদা রয়েছে। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় এ যে, কোনো কোনো অসাধু ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ী আমাদের প্রিয় ও সুস্বাদু ফলে ফরমালিন মিশিয়ে বাজারজাত করে থাকে। যা খেয়ে আরো বেশি রোগাক্রান্ত হয়ে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু ফল উৎপাদনের জন্য খুবই উপযোগী। আনারস, আমড়া, লেবু, তাল, তরমুজ, আতা, আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, কলা, পেঁপে, কুল, কামরাঙা, সফেদা, নারকেল, ডালিমসহ নানা জাতের ও স্বাদের ফল উৎ্পন্ন হয়।
দেশে এখন বিদেশী ফল স্ট্রবেরি, আঙ্ুর, কমলা, ম্যান্ডারিনও চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে ৬ শ ’৩০টি নিবন্ধিত খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প রয়েছে। যার মধ্যে ৩০টি প্রতিষ্ঠান ফল থেকে জ্যাম, জেলি, স্কোয়াশ, ফলের রস, আচার, চাটনি, সস, ক্যান্ডি আনারস, স্লাইসড ও ক্যান্ডি আমের পাল্প ইত্যাদি উৎ্পাদন করছে।
নদী উপকূলীয় জেলায় সারিবদ্ধভাবে ও পরিকল্পিত উপায়ে ফলের গাছরোপণ করলে দৃষ্টিনন্দন পরিবেশ সৃষ্টি ,সুন্দর ও সাবলীল হবে আমাদের জীবন।
নদীর তীর ও চরাঞ্চলগুলোর কিছু জমি দেশীয় ফল আবাদের আওতায় আনা গেলে দেশের পুষ্টি চাহিদা পূরণে ব্যাপক উন্নতি হবে এবং চাষাবাদে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিও আসবে। চরাঞ্চলবাসীর জীবনযাত্রার মানও বাড়বে।
প্রতিবেদক- আবদুল গনি
: আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:০০ এএম, ২৫ জুন ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur