তাহাজ্জুদের নামায মহান আল্লাহ্ তা’আলার সান্নিধ্য লাভের বিশেষ মাধ্যম। কেউ আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য লাভ করতে সাফল্যের উচ্চ শিখরে উঠতে চাইলে তাহাজ্জুদ তার সর্বোত্তম মাধ্যম।
আল্লাহ্ তা’আলা তাঁর প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কে তাহাজ্জুদের নামায পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘রাতের কিচু অংশ তাহাজ্জুদ পড়–ন, এটা আপনার জন্য নফল। শীঘ্র আপনার পালনকর্তা আপনাকে মাকামে মাহমুদে পৌছে দেবেন’। (সূরা আল ইসরা-৭৯)।
আল্লাহ আরো বলেন, ‘তারা রাতের কম সময় শুয়ে থাকে এবং শেষ রাতে ক্ষমা প্রার্থনা করে’। (সূরা আয যারিয়াত-১৭)। প্রিয় বান্দাদের প্রশংসা করে আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাদের প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে দাঁড়িয়ে ও সিজদাবনত হয়ে রাত্রি জাগরণ করে’। (আল ফুরকান-৬৪)
বিলাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত ঃ রাসূল (সাঃ) বলেছেন,“তোমরা রাত্রি জাগরণ কর কেননা এটা তোমাদের পূর্ববর্তী নেক বান্দাদের অভ্যাস ছিল। এটা তোমাদেরকে তোমাদের প্রতিপালকের নৈকট্যে পৌঁছে দেবে। তোমাদের গুনাহ মাফের উপায়, পাপ থেকে দূরে রাখার মাধ্যম এবং শরীরের রোগ দূরকারী”। (তিরমিযী)
রাসূল (সাঃ) দিনে আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকতেন আর গভীর রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ত তখন তিনি তাহাজ্জুদের নামাযে আল্লাহর দরবারে দাঁড়িয়ে যেতেন। অনেক সময় দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার কারণে তাঁর দুটি পা ফুলে উঠত। তখন তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী তাঁকে বলতেন, “ইয়া রাসূলাল্লাহ্! (সাঃ) আপনি কি ঘুমাবেন না?”
তখন তিনি বলতেন, “হে আয়েশা! ঘুমের দিন শেষ হয়ে গেছে”। সাহাবায়ে কেরামও রাসূল (সাঃ) এর আদেশে অনুপ্রাণিত হয়ে দিনের বেলায় ইসলামের বিজয় পতাকা উত্তোলন করার লক্ষ্যে ঘোড়ায় চড়ে দিগবিদিক ছুটতেন আর রাতের বেলায় জায়নামাযে আল্লাহর সমানে দাঁড়িয়ে যেতেন। তাঁরা ছিলেন رُهْبَانُ الَّيْلِ وَفُرْسَانْ النَّهَارِ অর্থাৎ দিনের বেলায় ঘোড়সাওয়ার আর রাতে তাহাজ্জুদগুজার। এ জন্যে সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের কাছে সাহায্য আসত।
তাহাজ্জুদ নামাযের নিয়ম:
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ্ (সাঃ) তাহাজ্জুদ নামাযের সূচনা করতেন দু’রাকাত সংক্ষিপ্ত নামায আদায়ের মাধ্যমে। (মুসলিম)
রাতের কিছু অংম ঘুমিয়ে তারপর গাত্রোত্থান করে তাহাজ্জুদ নামায পড়তে হয়। তাহাজ্জুদ নামাযের মাসনূন সময় হলো, এশার নামায আদায়ের পর কিছু সময় ঘুমিয়ে অর্ধ রাতের পর গাত্রোত্থান করে নামাযে দাঁড়ানো। রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) কখনো মধ্যরাতে,কখনো তার কিছু আগে বা পরে ঘুম থেকে উঠতেন, মিস্ওয়াক করতেন এবং অযু করে নামায পড়তেন।
আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি আয়েশা (রাঃ) কে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এর রমযান মাসের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেসা করলে তিনি বললেন ঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) রমযান মাসে কিংবা অন্য কোন সময়ে রাতের বেলা এগার রকআতের বেশী নামায পড়তেন না। প্রথমে চার রাকআতে তিনি এমনভাবে পড়তেন যে তার স্থয়িত্ব ও সৌন্দর্য সম্পর্কে আর কি জিজ্ঞেস করবে? তারপর আরো চার রাকআত পড়তেন। তার স্থায়িত্ব ও সৌন্দর্য সম্পর্কে আর কি জিজ্ঞেস করবে?
এরপর তিনি আরো তিন রাকআত নামায পড়তেন।
আয়েশা (রাঃ) বলেন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আপনি কি ঘুমানোর পূর্বেই বিতর নামায পড়েন? জবাবে তিনি বললেন, হে আয়েশা,আমার চোখ দুটি ঘুমায় কিন্তু আমার অন্তর ঘুমায় না। (মুসলিম)
এ হাদীস অনুযায়ী তাহাজ্জুদের নামায হচ্ছে চার রাকাত করে আট রাকাত। সবশেষে তিন রাকাত বিতর।
তাহাজ্জুদের নমাযের ব্যাপারে এ ছাড়াও আরো অনেক হাদীস রয়েছে। তার আলোকে তাহাজ্জুদের নামায দুই দুই রাকাত করে বার রাকাত পড়া যায়। তাহাজ্জুদের নামাযে দীর্ঘ কেরাআত, দীর্ঘ সময় রূকু ও সেজদা করা এবং ধীরে ধীরে পড়া উত্তম।
ইসলাম ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:৩০ পিএম, ২৩ জুন ২০১৬, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ