বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে চুরি করা অর্থ ফিলিপাইন থেকে পাচার হয় হংকংয়ে। হংকংয়ের প্রতিনিধিরাও যোগ দেবে সভায়। ফলে রিজার্ভ থেকে খোয়া যাওয়া অর্থ উদ্ধারের জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে চেপে ধরার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।
অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা এশিয়া-প্যাসিফিক গ্রুপ অন মানি লন্ডারিংয়ের (এপিজি) বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) এবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভার উদ্বোধন করবেন। সভা চলবে ছয় দিন ধরে—২৩ জুলাই থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত। এপিজির ১৯তম এজিএমে ফিলিপাইন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা যোগ দেবেন।
বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এপিজির ৪১ সদস্যের মধ্যে ফিলিপাইন, যুক্তরাষ্ট্র, হংকং, শ্রীলঙ্কা ও চীন রয়েছে। বাংলাদেশের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে তাদের প্রতিষ্ঠান বা নাগরিকদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, এবারের এজিএমে মূল আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রিজার্ভে চুরির বিষয়টি থাকবে। চুরি হওয়া অর্থ ফেরত পাওয়া ও চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিদেশি নাগরিকদের শাস্তি নিশ্চিত করাই হবে বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য। তবে বেশ কিছু বিষয়ে চাপেও থাকবে বাংলাদেশ। জঙ্গিবাদী তৎপরতায় অর্থায়ন বন্ধে বাংলাদেশ কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠতে পারে। এপিজির এজিএম আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ।
সদস্য দেশের প্রতিনিধি ছাড়াও যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও রাশিয়াসহ আটটি পর্যবেক্ষক দেশের পর্যবেক্ষকরা অংশ নেবেন এতে। এ ছাড়া জাতিসংঘ, জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধবিষয়ক দপ্তর (ইউএনওডিসি), বিশ্বব্যাংক, বিশ্ব শুল্ক সংস্থা (ডাব্লিউসিও), আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে সক্রিয় বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার পর্যবেক্ষকরা সভায় যোগ দেবেন।
প্রতিনিধি ও পর্যবেক্ষকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নানা প্রস্তুতি চলছে। গত ৮ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক) আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিদেশিদের নিরাপত্তা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ সার্বিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং কিছু সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বিদেশি অতিথিদের একা ভ্রমণে যাওয়ার বিষয়ে নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দলগতভাবে কেনাকাটা করা বা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখার সুযোগ দেওয়া যায় কি না তা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আলাদা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে। এ ক্ষেত্রে কিভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে, সে উপায় খুঁজছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইনটেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ জানান, আগামী ২৩-২৮ জুলাই এপিজির ১৯তম এজিএম অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে বিদেশিরা ২১ জুলাই ঢাকায় আসা শুরু করবে। মূল সভা হোটেল রেডিসন ব্লুতে হবে। তবে অতিথিরা রেডিসন ও অন্যান্য হোটেলে থাকবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভার উদ্বোধন করতে পারেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (রাজনৈতিক-২) মো. শফিকুর রহমান জানান, এপিজির সভায় প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষকসহ ৩৫০ থেকে ৪০০ জন বিদেশি অংশগ্রহণ করবে। সূত্র জানায়, পাকিস্তানও এপিজির সদস্য।
সভায় যোগ দেবে তার প্রতিনিধিরা। দেশটির বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। পাকিস্তান ও আরো কয়েকটি দেশের নাগরিকদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাড়পত্র সাপেক্ষে ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
যেসব দেশে বাংলাদেশের দূতাবাস বা কনস্যুলেট নেই, সেসব দেশের প্রতিনিধি-পর্যবেক্ষকদের বিএফআইইউর প্রত্যয়ন সাপেক্ষে অন অ্যারাইভাল ভিসা দেওয়া হবে।
নিউজ ডেস্ক : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ১১:০০ এএম, ১৭ জুন ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ