পাকিস্তানে টেলিভিশন অনুষ্ঠানে এক নারী মানবাধিকারকর্মীকে ধর্ষণের হুমকি দিয়েছেন দেশটির একজন সিনেটর। করাচিভিত্তিক টেলিভিশন স্টেশন ‘নিউজ ওয়ানের’ এক টকশোতে গত শুক্রবার এ ঘটনা ঘটে।
ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেওয়া ওই সিনেটরের নাম হাফিজ হামদুল্লাহ। তিনি পাকিস্তানের ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামিয়াত ওলেমা-ই-ইসলাম ফজলের (জেইউআই-এফ) একজন নেতা।
টকশোতে গবেষক ও মানবাধিকারকর্মী মারভি সিরমেদকে অকথ্য ভাষায় গালাগালির একপর্যায়ে তাকে ও মাকে ধর্ষণের হুমকি দেন সিনেটর হাফিজ হামদুল্লাহ। জেইউআই-এফ নেতা হাফিজ হামদুল্লাহকে এর আগেও লাইভ টেলিভিশন অনুষ্ঠানে নিজের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নোংরা ভাষায় আক্রমণ করতে দেখা গেছে।
শুক্রবার টেলিভিশনের ওই অনুষ্ঠানটি রেকর্ড হওয়ার পর সিরমেদ ফেসবুকে এক পোস্টে তার এই অভিজ্ঞতার কথা জানান। ওই পোস্টটি ভাইরাল হয় এবং উঠে আসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
ওই পোস্টে সিরমেদ লিখেছেন, “এইমাত্র আমি নিউজ ওয়ান-এর অনুষ্ঠানে (নাদিয়া মির্জা শো) এক ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম। ব্যারিস্টার মাশরুরের এক মন্তব্যে বেশ রেগে যান জেইউআই-এফ সিনেটর হাফিজ হামদুল্লাহ। যখন আমার কথা বলার পালা আসে তখন আমি শুরু করি এভাবে যে, ‘আমি মাশরুর সাহেবের সাথে এ ব্যাপারে একমত যে…’। এতেই হামদুল্লাহ আমাকে থামিয়ে দেন। তিনি অজ্ঞতা ও রূঢ়তার সঙ্গে কথা বলতে শুরু করেন। আমিও তাকে প্রায় একইভাবে জবাব দিতে থাকি।”
তিনি আরও বলেন, :আর তখনই তিনি সম্ভাব্য সবরকম নোংরা ভাষায় আমাকে গালাগাল শুরু করেন। আমাকে যৌনকর্মী আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, ‘তোমার পায়জামা খুলে ফেলব ও তোমার মায়েরও।’ আমি তখন তাকে তার নিজ পরিবারের নারীদের কথা মনে করিয়ে দেই। ঠিক তখনই তিনি আমার দিকে তেড়ে আসেন। এই সবকিছুই ক্যামেরায় রেকর্ড হয়েছে। ফায়াজ-উল হাসান চৌহান তাকে ধরে রাখায় আমি তার হাতের আঘাত থেকে বেঁচে যাই। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে নিউজ ওয়ানের নিরাপত্তাকর্মীদের মাধ্যমে তাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। আর এই ধর্মব্যবসায়ী এই সবকিছু করছিলেন রোজা রাখা অবস্থায়।’
ওই টকশো-এর ভিডিওচিত্রি দেখা যায়, প্যানেল আলোচক ব্যারিস্টার মাশরুর সিআইআই চেয়ারম্যান মাওলানা শেরানি ও সিনেটর হামদুল্লাহকে ‘ঘুমন্ত মাতাল’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা দেখেও না দেখার ভান করার জন্য তাদের সমালোচনা করেন তিনি। উপস্থাপক তারপর সিরমেদ-এর মতামত জানতে চান। সিরমেদ এ সময় মাশরুরের পক্ষ নিলে হামদুল্লাহ চিৎকার শুরু করেন। একপর্যায়ে সিরমেদ ও তার মাকে ধর্ষণের হুমকি দেন হামদুল্লাহ।
ওই টকশোর সম্পাদিত ভিডিও ক্লিপে ধর্ষণের হুমকি ও গালি দেওয়ার অংশটুকু বাদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সিরমেদ তার ফেসবুক পেজে ঘটনার বিশদ বিবরণ তুলে ধরেছেন। অন্য একটি টেলিভিশন অনুষ্ঠানেও তিনি সেদিনের ঘটনা বর্ণনা করেন।
শারীরিক লাঞ্ছনা চেষ্টার সেই ভিডিওচিত্র প্রকাশিত না হলেও সিরমেদ-এর বক্তব্যের সমর্থনে টুইটারে পোস্ট দিয়েছেন সে অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা ব্যারিস্টার মাশরুরও।
সিরমেদ তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করার পর আরও অনেকেই কথা বলতে শুরু করেন যারা এর আগে হামদুল্লাহর কাছে লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন। হামদুল্লাহর কাছে অতীতে লাঞ্ছিত হয়েছেন এমন অনেকের একটি তালিকা প্রকাশ করেছেন রানা ওয়ালিদ নামের একজন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট। ওই তালিকায় রয়েছেন কয়েকজন টিভি উপস্থাপিকাও।
এর আগেও হামদুল্লাহর সঙ্গে একাধিক টিভি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন সিরমেদ। তবে এ ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম। তবে হামদুল্লাহ সমর্থকদের দাবি, সিরমেদই এই লড়াইকে উস্কে দিয়েছেন। (সূত্র: ডন ও গ্লোবাল ভয়েসেজ)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট ৪:১৮ পিএম,১৪ জুন ২০১৬, মোঙ্গলবার
এইউ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur