প্রশ্ন: রমজান মাসে স্বামী স্ত্রী যৌনমিলন বা সহবাস করা যাবে কি?
উত্তরঃ আপনি রমজান মাসে রোজা রেখে যৌনমিলন করতে পারবেন না আর এতে আপনার রোজা তো ভাঙবেই এবং এটা সম্পূর্ন হারাম।হ্যা তবে রোজা ভাঙ্গার পর সঙ্গম করতে পারবেন ।
প্রশ্নঃ মেয়েদের পিরিয়ড বা মাসিক শুরু হলে রোজা রাখার নিয়ম কি?
মাসিক বা ঋতুস্রাব চলাকালীন রোজা রাখা যায় না। আর এতে কোন গোণাহ হবে না।
রমজান মাসে দিনের বেলায় যে ব্যক্তি যৌনমিলন করে তিনি মুকীম (নিজ অঞ্চলে অবস্থানকারী) রোযাদার হলে তার উপর বড়-কাফ্ফারা (আল কাফ্ফারাতুল মুগাল্লাযাহ) ওয়াজিব হয়। আর তা হল একজন দাস মুক্ত করা। যদি তা না পায় তাহলে একাধারে দুইমাস সিয়াম পালন করা। আর যদি তাও না পারে তবে ৬০ জন মিসকীনকে খাওয়ানো।
যদি নারী সন্তুষ্টচিত্তে যৌনমিলনে সাড়া দেয় তাহলে একই বিধান নারীর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। আর যদি জোরপূর্বক নারীর সাথে সহবাস করা হয় তাহলে তার উপর কোন জরিমানা ওয়াজিব হবে না। আর যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মুসাফির হয় তবে সহবাসের কারণে তাদের কোন গুনাহ হবে না, তাদের উপর কোন কাফ্ফারাও ওয়াজিব হবে না এবং দিনের বাকি অংশ পানাহার ও যৌনমিলন থেকে বিরত থাকাও ওয়াজিব হবে না। শুধু তাদের উভয়কে ঐদিনের রোযা কাযা করতে হবে। যেহেতু মুসাফির অবস্থায় রোযা পালন করা তাদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়।
একইভাবে যে ব্যক্তি কোনো অনিবার্য প্রয়োজনে রোযা ভেঙ্গে ফেলেছে (যেমন কোন নিরপরাধ মানুষকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচানোর নিমিত্তে) ঐ ব্যক্তি সেই দিন যদি যৌনমিলন করে, যেইদিন অনিবার্য প্রয়োজনে রোযা ভেঙ্গে ফেলেছে তবে তার উপর কোন কিছু ওয়াজিব হবে না। কারণ এক্ষেত্রে সে ব্যক্তি কোন ওয়াজিব রোযা ভঙ্গ করেনি।
নিজ অঞ্চলে অবস্থানকারী (মুকীম) রোযাদার যদি যৌনমিলন করে রোযা ভেঙ্গে ফেলে যার উপর রোযা রাখা বাধ্যতামূলক তার উপর পাঁচটি জিনিস বর্তাবে-
১। সে গুনাহগার হবে।
২। তার সেই দিনের রোযা নষ্ট হয়ে যাবে।
৩। সেই দিনের বাকি অংশ পানাহার ও যৌনমিলন থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪। সেই দিনের রোযার কাযা করা ওয়াজিব হবে।
৫। (বড়) কাফ্ফারা আদায় করা ওয়াজিব হবে।
কাফ্ফারা আদায় করার দলীল হল সেই হাদিসটি, যা আবু হুরাইরাহ (আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট হউন) থেকে বর্ণিত হয়েছে- এক ব্যক্তি রমজানের দিনের বেলায় তাঁর স্ত্রীর সাথে যৌন মিলন করেছিলেন। এই ব্যক্তি একাধারে দুইমাস রোযা পালন করা অথবা ষাটজন মিসকীনকে খাদ্য খাওয়াতে অক্ষম ছিলেন। তাই এই ব্যক্তি কাফ্ফারা পরিশোধের বাধ্যবাধকতা হতে রেহাই পান। কারণ আল্লাহ তাআলা কাউকে তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দেন না [সূরা বাক্বারাহ, ২:১৮৬] অপারগের ওপর কোন ওয়াজিব আরোপ করা যায় না।
যৌনমিলন যেহেতু সংঘটিত হয়েছে সুতরাং উপরোল্লেখিত মাসয়ালাতে বীর্যপাত হওয়া বা না-হওয়ার কারণে হুকুমের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কিন্তু ব্যাপারটি যদি এমন হয় যৌনমিলন ছাড়া বীর্যপাত হয়েছে সেক্ষেত্রে তাকে কাফ্ফারা আদায় করতে হবে না। বরং সে গুনাহগার হবে, দিনের বাকি অংশ তাকে যৌনমিলন ও পানাহার থেকে বিরত থাকতে হবে এবং রোযাটির কাযা করতে হবে।
প্রশ্ন : এটি কারো অজানা নয় যে, যে ব্যক্তি রমজান মাসে দিনের বেলায় তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করবে, তার কাফ্ফারা হল- একজন দাস মুক্ত করা অথবা (তা না পারলে) একটানা দুই মাস রোযা রাখা অথবা (তা না পারলে) ৬০ জন মিসকীনকে খাওয়ানো। প্রশ্ন হল-
১- যে ব্যক্তি রমজান মাসের ভিন্ন ভিন্ন দিবসে নিজের স্ত্রীর সাথে একাধিকবার সহবাস করেছে, তাকে কি সহবাসকৃত প্রতিটি দিবসের পরিবর্তে দুই মাস করে রোযা পালন করতে হবে? নাকি যতদিন সহবাস করুক না কেন শুধু দুই মাস রোযা রাখা যথেষ্ট?
২- উপরে উল্লেখিত কাফ্ফারার হুকুম না জেনে কেউ যদি (রমজানের দিনের বেলায়) স্ত্রী-সহবাস করে (তার বিশ্বাস ছিল সে যেদিন সহবাস করবে শুধু সেই দিনের বদলে একদিনের রোযা কাযা করতে হবে) তবে সে ব্যক্তির ব্যাপারে হুকুম কি?
৩- স্বামীর ন্যায় স্ত্রীর উপরও কি একই হুকুম বর্তাবে?
৪- খাবার খাওয়ানোর বদলে কি অর্থ প্রদান করা জায়েয?
৫- স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের পক্ষ থেকে শুধু একজন মিসকীনকে খাওয়ালে চলবে কি?
৬- যদি খাওয়ানোর মত কাউকে না পাওয়া যায় সেক্ষেত্রে কোন দাতব্য সংস্থাকে খাদ্যের মূল্য প্রদান করা যাবে কি না। যেমন- রিয়াদের আল-বির্র দাতব্য সংস্থা বা এ ধরনের অন্য কোন দাতব্য সংস্থা?
উত্তর: আলহামদুলিল্লাহ। যে ব্যক্তির উপর রোযা পালন করা ফরয:
এক
তিনি যদি তার স্ত্রীর সাথে রমজানের কোন এক দিবসে একবার বা একাধিকবার সহবাস করেন তবে তার উপর একবার কাফ্ফারা আদায় করা আবশ্যক হবে; যদি তিনি প্রথমবার সহবাস করার পর কাফ্ফারা আদায় না করে থাকেন। আর যদি তিনি কয়েকদিন দিবাভাগে সহবাস করে থাকেন তবে তাকে সম সংখ্যক দিনের কাফ্ফারা আদায় করতে হবে।
দুই
তার উপর শারীরিক মিলনের কাফ্ফারা আদায় করা ফরয যদিও তিনি এই ব্যাপারে অজ্ঞ থেকে থাকেন।
তিন
সহবাস করার ক্ষেত্রে স্ত্রী যদি স্বামীকে সম্মতি দেয় তাহলে স্ত্রীর উপরও কাফ্ফারা ফরয হবে। আর যদি স্বামী জোরপূর্বক স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তাহলে স্ত্রীর উপর কোন কিছু ফরয হবে না।
চার
খাদ্য খাওয়ানোর বদলে সমমূল্য অর্থ প্রদান করা জায়েয নয়। খাওয়ানোর পরিবর্তে অর্থ প্রদান করলে এতে অর্পিত দায়িত্ব পালন হবে না।
পাঁচ
একজন মিসকীনকে তার পক্ষ থেকে অর্ধ স্বা‘ ও তার স্ত্রীর পক্ষ থেকে অর্ধ স্বা‘ খাওয়ানো জায়েয। এতে তাদের দুইজনের পক্ষ থেকে ৬০ জন মিসকীনের একজনকে খাওয়ানো হয়েছে বলে গণ্য হবে।
ছয়
কাফ্ফারার সবগুলো খাদ্য শুধু একজন মিসকীনকে প্রদান করা জায়েয নয়। অনুরূপভাবে আল-বির্র চ্যারিটি বা অন্য কোন দাতব্য সংস্থাকে প্রদান করাও জায়েয নয়। কারণ তারা হয়ত ৬০ জন মিসকীনের মাঝে খাদ্য বিতরণ করবে না। মু’মিনের উচিত শরিয়ত কর্তৃক তার উপর আরোপিত কাফ্ফারাসহ সকল ওয়াজিব পালনে সচেষ্ট হওয়া।
আল্লাহই তাওফিক্দাতা। আল্লাহ আমাদের নবী মুহাম্মদ, তাঁর পরিবারবর্গ ও তাঁর সাহাবীগণের উপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন।