৫ম ধাপের ইউপি নির্বাচনে মতলব উত্তর উপজেলার ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে নৌকা প্রতীক নিয়ে ১০ চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার খবরকে ছাপিয়ে গেছে ১২নং ফরাজীকান্দি ইউনিয়নে আ’লীগের মনোনয়ন পাওয়াকে কেন্দ্র করে।
আগামীকাল ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হলেও এই ইউপিতে নির্বাচনের মাঠ থেকে চাপে পড়ে এলাকা ছেড়েছেন নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম, সেই সাথে দাপটে ও ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দানেশ! আর মাঠে নেই বিএনপির প্রার্থী আব্দুল লতিফ ও তাঁর কর্মী-সর্মথকরা।
ফরাজীকান্দি ইউপিতে জেলা বিএনপি’র সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন দানেশ গত বছর তাঁর অনুসারী নেতা-কর্মীদের নিয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম) এর হাতে ফুল দিয়ে ব্যাপক আয়োজনের মাধ্যমে আ’লীগে যোগদান করেন। পরে ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আ’লীগের মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে থাকেন তিনি।
দল কর্তৃক গত ২৪ এপ্রিল স্বাক্ষরকৃত আ’লীগের মনোনয়ন পান দেলোয়ার হোসেন দানেশ। সেই সূত্রধরে উপজেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দদের নিয়ে তিনি উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেন। কিন্তু বিপত্তি বাধে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের দিনে। সেই দিন তিনি জানতে পারেন তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড তাঁর দলীয় মনোনয়ন বাতিল করে ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিমকে মনোনীত করে নির্বাচন অফিসকে চিঠি দেয়। আর সেই চিঠি ও তাঁর মনোনয়ন বাতিলের বিষয়ে বাছায়ের দিনই জানতে পারে বলে দাবী করেন দেলোয়ার হোসেন দানেশ।
এই বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন আরো বলেন, উভয় দিক থেকে মনোনয়ন বাতিল হওয়ায় আমার নির্বাচনী এলাকার মানুষের অশ্রুজল ও তাদের সেবা করা কথা ভেবেই আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য হাইকোর্টে একটি রিট দাখিল করি। আদালত আমাকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সুযোগ করে দিয়েছে। ঘোড়া প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছি এবং সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ ভোট হলে আমিই নির্বাচিত হবো বলে তিনি জানান।
আ’লীগের মনোনয়ন হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার বিষয়টিকে তিনি আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বলতে নারাজ। নিজেকে একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাবি করেন এই প্রতিবেদকের কাছে।
বৃহত্তর মতলবে অতীত ও বর্তমান সময়ে যিনি আওয়ামীলীগের একজন অভিবাবক, তাঁর মতামত না নিয়েই কেন্দ্রে অসত্য ও ভুল তথ্য দিয়ে দেলোয়ার হোসেন দানেশের দলীয় মনোনয়ন বাতিল হওয়ার কারণে উপজেলা চেয়ারম্যানের প্রতি ক্ষুদ্ধ আওয়ামী পরিবারের প্রতিটি নেতা-কর্মী।
ফলে উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে গত পনেরো দিনে চেয়ারম্যান, মেম্বার প্রার্থী ও রাজনৈতিক নেতারা ১৩টি জিডি দায়ের হয়েছে মতলব উত্তর থানায়। সেই সাথে উপজেলা পরিষদ কার্যলয় থেকে চেয়ারম্যানের নাম ফলকটিও গত ২৫ মে দুপুরে খুলে নিয়ে যায় ক্ষুদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।
মতলব উত্তর থানার ওসি মো. আলমগীর হোসেন মজুমদার উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে জিডি ও তার নামফলক খুলে নেয়ার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
ওসি জানান, উপজেলার চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে করা জিডির তদন্দকারী কর্মকর্তা তিনি নিজেই। কোনও জিডির এখনও তদন্ত শুরু করেননি জানিয়ে এ বিষয়ে আর কিছু বলতে অপরাগতা জানান তিনি।
উপরোক্ত কারণে উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ বেশ চাপের মধ্যে রয়েছেন। এরই মাঝে গত দু’দিন আগে তাঁর বিরুদ্ধে আমিরাবাধ বাজার ও বড়হলদিয়া গ্রামে ঝাড়– মিছিল করেছে ক্ষুদ্ধ নেতা-কর্মী ও এলকার মহিলারা। সেই সাথে নৌকা প্রতীক পেয়েও বিপাকে পড়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যানে ঘনিষ্ঠ রেজাউল করিম।
প্রচার-প্রচারণা দূরে থাক, একটি পোস্টার দেখা মিলেনি তার নিজ বাড়ি চরকালিয়া গ্রামে। বাড়িতে গিয়েও পাওয়া যায়নি তাকে।
সামগ্রিক বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে যোগাযোগ করলে উপজেলা চেয়ারম্যান মনজুর আহমেদ কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি অসুস্থ হয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন।
নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম বলেন, বর্তমানে তিনি শারীরিক অসুস্থতার কারণে ঢাকায় আছেন, নির্বাচনের দিন এলাকায় থাকবেন না বলেও জানায়। কোন চাপে পড়ে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়াছেন কি না এমন প্রশ্নে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
মতলব উত্তর উপজেলার অপর একটি ইউনিয়ন সুলতানাবাদে বিদ্রোহী প্রার্থী ও উপজেলা আ’লীগের সহ সভাপতি সফিকুর রহমান পাটোয়ারীকে দল থেকে বহিস্কার করা হলেও ফরাজীকান্দি ইউনিয়নে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন দানেশ রয়েছেন বহাল তবিয়তে। সেই সাথে দলের নেতা-কর্মীরা নৌকা ছেড়ে ঘোড়ায় চড়ে বসেছেন বলে জানা যায়।
এই বিষয়ে উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ কুদ্দুস বলেন, ২৮ মে নির্বাচনে বাকি চার ইউপিতে আমাদের চেয়ারম্যান প্রার্থীরাই জয়ী হবে। দলের নেতা-কর্মীরা সবাই নৌকা প্রতীকে কাজ করছে। আর দেলোয়ার হোসেন দানেশ দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নয়, সে স্বতন্ত্র প্রার্থী। তার সাথে দলের কোন নেতা-কর্মী নেই। যা কিছু হচ্ছে কেন্দ্রের নিদের্শ মেনেই করা হচ্ছে।
মতলব দক্ষিণ : আপডেট, বাংলাদেশ সময় ২:০০ এএম, ২৬ মে ২০১৬, শুক্রবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur