আয়তন বেড়েছে রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। দীর্ঘদিন পর হলেও ঢাকার আশপাশের অবহেলিত ১৬টি ইউনিয়ন সিটি করপোরেশনের সঙ্গে একত্রিত হয়েছে। বাড়বে জনসংখ্যাও। তবে অবহেলিত এই ইউনিয়নগুলো আবারো যাতে অবহেলিত না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে বললেন নগরবিশেষজ্ঞরা।
নগর পরিকল্পনাবিদরা বলছেন, ‘বর্তমান আয়তন ও জনসংখ্যা নিয়েই যেখানে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন সেখানে দ্বিগুণ আয়তনের সিটি করপোরেশনকে সেবা দিতে কতটুকু প্রস্তুত রয়েছে নগর ভবন? তবে সরকারের এ সিদ্ধান্তে বিশাল জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন নাকি শুধুই নতুন করের বোঝা চাপবে তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নতুন যুক্ত হওয়া ইউনিয়নগুলোর বাসিন্দারা বলছেন শুধু ট্যাক্স বা আয় বাড়াতে যাতে করপোরেশনের আয়তন বাড়ানো না হয়, সেবার দিকটিও প্রাধান্য দিতে হবে।
এ ব্যাপারে ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, ‘নতুন যেসব এলাকা ডিএসসিসির আওতায় এসেছে সেগুলোতে সমস্যা খুবই বেশি। অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে এর প্রতিটি পাড়া-মহল্লা। এতে সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সেবা সংস্থার সার্ভিস লাইন স্থাপন করতে অনেক হিমশিম খেতে হবে।’
এরপরও সরকারি সহায়তা পেলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সাথে আলোচনা করে এলাকায় সব ধরনের উন্নয়নের পরিকল্পনা নেয়া হবে জানান তিনি। গেজেট প্রকাশের পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নগর ভবনের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘দীর্ঘদিন অভিজ্ঞতা থেকে এটা বলা যায় যে সিটি করপোরেশনের বর্তমান জনবল কাঠামো দিয়ে অধুনিক সেবা নিশ্চিত করা কার্যত অসম্ভব। যদি সেবা বাড়ানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে করপোরেশনের আয়তন বাড়ানো হয় তাহলে জনবল কাঠামো বাড়ানোর পাশাপাশি সেবার মানের বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এটি করা না হলে বর্তমানে যে সেবা সিটি করপোরেশন দিচ্ছে বাড়তি চাপের কারণে তা থেকেও বঞ্চিত হবে নগরবাসী।’
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এ উদ্যোগ অবশ্যই ইতিবাচক। ফলে নতুন যোগ হওয়া ইউনিয়নগুলোতে ওয়ার্ড বাড়বে। জনপ্রতিনিধি বাড়বে। করপোরেশনের অন্যান্য সুযোগ সুবিধাও নিশ্চয় পৌঁছবে সেখানে। বাড়তি জনসংখ্যা ও এলাকার চাপও সামলাতে হবে। সে জন্য জনবল কাঠামোর পাশাপাশি অন্যান্য বিষয়দির দিকেও বিশেষ নজর দিতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে আমরা কী সেবা পাচ্ছি? সেবার সংজ্ঞা কী? সেটাও ঠিক করতে হবে। সব মিলিয়ে যুক্ত হওয়া ইউনিয়ন পরিষদগুলো যাতে ইউনিয়নের মতো না থাকে সেটিই দেখতে হবে কর্তৃপক্ষকে। করপোরেশনকে আরো বেশি কাযকর করার উদ্যোগ নিতে হবে।
নতুন যুক্ত ইউনিয়নগুলোর মধ্যে ঢাকা উত্তরে বেরাইদ, বাড্ডা, ভাটারা, সাতারকুল, হরিরামপুর, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও ডুমনি (খিলক্ষেত) ইউনিয়ন অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। একইভাবে ঢাকা দক্ষিণে যুক্ত করা হয়েছে শ্যামপুর, দনিয়া, মাতুয়াইল, সারুলিয়া, ডেমরা, মান্ডা, দক্ষিণগাঁও ও নাসিরাবাদ ইউনিয়নকে। এ ১৬টি ইউনিয়ন রাজধানীর সাথে যুক্ত হওয়ায় সিটি করপোরেশনের আয়তন ১২৯ বর্গ কিলোমিটার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭০ বর্গকিলোমিটারে।
রাজধানী ঢাকার পাশেই এসব ইউনিয়ন পরিষদগুলোর অবস্থান হলেও এতোদিন চরমন অবহেলার শিকার হয়েছিলো। ঢাকা বাংলাদেশের প্রাণকেন্দ্র হলেও এর কয়েক কদমের মধ্যেই অবস্থিত ইউনিয়ন পরিষদগুলো ছিল চরম অবহেলিত। আধুনিক কোনো সেবা পেতো না এর বাসিন্দারা। এর আগে বেশ কয়েকবার একে সিটি করপোরেশনের আওতায় আনার উদ্যোগ নেয়া হলেও স্থানীয় চেয়ারম্যানদের করা মামলার কারণে দীর্ঘ ২৮ বছর পর্যন্ত ঝুলিয়ে ছিল প্রক্রিয়াটি।
সোমবার সিটি করপোরেশনের আওতায় আনার পর এর সাধারণ বাসিন্দাদের মাঝে বিপুল উৎসাহের পাশাপাশি উৎকণ্ঠও দেখা দেয়। কেননা সিটি করপোরেশন হওয়ায় তার বাসিন্দাদের ওপর নতুন করে অতিরিক্ত করারোপ করা হবে। করের বোঝা সামলাতে হবে তাদের।
২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর দুই ভাগ হয় ঢাকা সিটি করপোরেশন। ৩৬টি ওয়ার্ড ও ৮২ দশমিক ৬৩৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তন নিয়ে ঢাকা উত্তর গঠিত হয়। ৫৭টি ওয়ার্ড ও ৪৫ বর্গকিলোমিটার আয়তন নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গঠিত হয়। উত্তরে আটটি ইউনিয়ন যুক্ত হওয়ায় বর্তমানে এর আয়তন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬০ দশমিক ৭৬৮ বর্গকিলোমিটার। দক্ষিণের আয়তন দাঁড়িয়েছে ১০৯ দশমিক ১৯ বর্গকিলোমিটারে।
সর্বশেষ আদম শুমারি অনুযায়ী বর্ধিত এলাকার জনসংখ্যাসহ দুই সিটি করপোরেশনের মোট জনসংখ্যা এক কোটি ৮১ লাখ ৮৪ হাজার ৪১ জন। এর মধ্যে উত্তর সিটির এক কোটি ছয় লাখ ২৬ হাজার ১৭ এবং দক্ষিণ সিটির ৭৫ লাখ ৫৮ হাজার ২৫ জন। তবে গত পাঁচ বছরে এর জনসংখ্যা দুই কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা নগর বিশেষজ্ঞদের।
এ ব্যাপারে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহুল ইসলাম জানান, আয়তন বাড়ার পাশাপাশি দায়িত্বও বেড়েছে। এ নিয়ে আমাদের নিজস্ব কিছু চিন্তা-ভাবনা আছে। এরই মধ্যে প্রাথমিক কিছু প্রস্তুতিও নেয়া হয়েছে। গেজেট প্রকাশের পর সম্প্রসারিত এলাকার ব্যাপারে আমরা নতুন পরিকল্পনা নেবা।
সরকারের এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. সাঈদ খোকন জানান, ‘বর্ধিত এলাকার সবধরনের নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমাদের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার ত্রুটি থাকবে না।’ এজন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি। (বাংলামেইল)