যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির নেতা সাদিক খান তাঁর কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থী জ্যাক গোল্ডস্মিথের চেয়ে প্রায় ১৩ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট বেশি পেয়ে লন্ডনের নতুন মেয়র হিসাবে নির্বাচিত হয়েছেন । তিনি ১৩ লাখ ১০ হাজার ১৪৩ ভোট পান, আর তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী গোল্ডস্মিথ পেয়েছেন ৯ লাখ ৯৪ হাজার ৬১৪ ভোট।
এর মাধ্যমে দীর্ঘ ৮ বছর পর কনজারভেটিভ দলের বরিস জনসনের হাত থেকে লন্ডনের ঝান্ডা আবারো বর্তমান প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির হাতে আসলো। আর যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনের প্রথম মুসলমান মেয়র হলেন এশিয়ান ও পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত এই সাদিক খান। এমন কি ইউরোপের কোন রাজধানী শহরেরও প্রথম মুসলমান মেয়র হলেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সাদিক খান তাঁর মেয়র নির্বাচনী প্রচারনায় বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তিনজন ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকি, রোশনারা আলী ও রূপা হককে সক্রিয়ভাবে কাছে পেয়েছেন।
অসুস্থ প্রচারনা বনাম সুস্থ প্রচারনাঃ
নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই তাঁকে মোকাবেলা করতে হয়েছিল বিপরীত পক্ষের নেতিবাচক প্রচারনার। কনজারভেটিভ পার্টির তরফ থেকে সাদিক খানের মুসলিম পরিচয়কে সামনে এনে প্রচারণা চালানো হয়েছিল। এমনকি তাঁর সাথে উগ্রপন্থীদের যোগাযোগ আছে বলেও মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণা চালায়।
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জ্যাক গোল্ডস্মিথ সাদিককে একজন চরম বর্ণবাদী, গোঁড়া মৌলবাদী এবং মুসলিম সংস্কৃতির প্রতি অন্ধভক্ত হিসেবে উল্লেখ করেন।
শুধু তাই নয়, যুক্তরাজ্যের বহুল প্রচলিত ডেইল মেইল পত্রিকার রবিবারের সংস্করণে গোল্ডস্মিথ তাঁর নিজের লেখা একটি কলামে অপ্রাসঙ্গিকভাবে ২০০৫ সালে লন্ডন বোমা হামলার ছবির পাশে সাদিক খানের ছবি জুড়ে দিয়ে অসত্য একটি কথা লিখেছিলেন, সাদিক খান এই হামলার সমর্থক, যার কোন প্রমান নেই। যা খুবই হাস্য রসের সৃষ্টি করে তাঁকে তামাসার পাত্রে রূপান্তরিত করেছিল অনেকের কাছে। যদিও যুক্তরাজ্যে অনেকে বিশ্বাস করতো মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারণা নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার জন্য উপযুক্ত হাতিয়ার।
কিন্তু নির্বাচনে এর কোন প্রভাব তৈরি হয়নি। কারন তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্মীয় বিতর্কে না জড়িয়ে তিনি লন্ডনবাসীর জন্য কী করনীয় যেমন লন্ডনের আবাসন সমস্যার সমাধান, পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি না করা –সে পরিকল্পনাগুলো তুলে ধরেছেন। এমনকি তাঁর বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষদের নেতিবাচক প্রচারণার বিষয়টিও তিনি উল্লেখ না করে ভোটারদের কাছে বড় মনের পরিচয় দিয়েছিলেন।
শিক্ষণীয় কিছু আছে কি?
বাংলায় একটি বিখ্যাত প্রবাদবাক্য আছে, ” অন্যের জন্য গর্ত খুঁড়লে নিজেকেও পড়তে হয় সেই গর্তে”। এ প্রবাদবাক্যই সত্য হয়েছে এ নির্বাচনী ফলাফলে। জ্যাক মুসলিম বিদ্বেষী প্রচারনা হাতিয়ার দিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারলেন না। ফল পেলেন সম্পূর্ণ উল্টো।
আজ মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতে নির্বাচনে হারের জন্য জ্যাকের ওই ‘নোংরা’ প্রচারণাকেই এখন দায়ী করা হচ্ছে। আর সাদিক খানের গতকালের বিজয় আমাদের স্মরন করিয়ে দিচ্ছে একই কৌশল সবসময় ট্রাম কার্ড হিসেবে কাজ করে না।
এখন দেখার বিষয় সুদুর আমেরিকাতে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ‘মুসলিম বিদ্বেষী’ প্রচারণায় মার্কিন নির্বাচনের বৈতরণী পাড় হওয়ার জন্য ট্রাম কার্ড হিসেবে ব্যবহার করে সফল হন নাকি যুক্তরাজ্যের জ্যাক গোল্ডস্মিথের মতো বিফল হন।
]নাজমুল হাসান, লন্ডন থেকে [/author]
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur