মাত্রই ২৮ বছর বয়স, আরও কয়েক বছর অনায়াসেই খেলে যেতে পারবেন। তবে এরই মধ্যে এমন কিছু কীর্তি গড়ে রেখেছেন বার্সা নাম্বার টেন, তাতে রেকর্ড বইয়ের পাতায় তাঁর নামটা জ্বলজ্বল করবে অনেক দিন। হয়তো চিরদিন।
বল পায়ে তাঁর সাপের মতো আঁকা-বাঁকা দৌড়, দৃষ্টিনন্দন গোল, কিংবা বুদ্ধিদীপ্ত অ্যাসিস্টের জন্য তাঁকে সময়ের সেরা মানেন অনেকে। কেউ কেউ তো সর্বকালের সেরার তালিকায় মেসির নামটা লেখাতে চান। তবে এসবই ব্যক্তিগত ভাবাবেগের ওপর নির্ভর করে। কিন্তু রেকর্ড বইয়ের সংখ্যাগুলো তর্কাতীতভাবে কিছু জায়গায় মেসির শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করছে।
রেকর্ড গড়াই হয় ভাঙার জন্য—এই আপ্তবাক্য মেনে মেনে নিয়েও বলে দেওয়া যায়, এমন কিছু কিছু রেকর্ড মেসি গড়ে রেখেছেন, যেগুলো ভাঙতে দুনিয়ার কোনো কোণে আরও একজন মেসি বা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কিংবা পেলে-ম্যারাডোনাকে জন্ম নিতে হবে। তাঁর আগ পর্যন্ত মেসির হাতেই নিশ্চিন্ত বোধ করতে পারে, এমন পাঁচটি রেকর্ডে একবার চোখ বুলিয়ে নিন—
সবচেয়ে কম বয়সে ৩ বার ব্যালন ডি অর: ২০০৯ থেকে ২০১২—টানা চারবার ফিফার বর্ষসেরার পুরস্কারটি জিতেছেন মেসি। এবারই সংখ্যাটা হয়তো পাঁচ হয়ে যাবে। তাঁর চেয়ে বেশি আর কেউই ব্যালন ডি অর জিততে পারেননি। ব্রাজিল ও ফ্রান্সের দুই কিংবদন্তি রোনালদো ও জিনেদিন জিদান আর মেসির সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ৩ বার করে জিতেছিলেন। তবে এঁদের সবার চেয়ে একটা জায়গায় এগিয়ে মেসি। ব্যালন ডি অরের সংখ্যায় ৩—এই জাদুকরী সংখ্যাটি ছুঁতে সবচেয়ে কম বয়স লেগেছে মেসির। ২০০৯ এ যখন প্রথম ব্যালন ডি অর জিতেছিলেন মেসি, তখন তাঁর বয়স ২২-ই ছোঁয়নি। আর ২০১১তে তৃতীয়বারের মতো জুরিখের মঞ্চে সোনালি বলটা হাতে নিয়েছিলেন, তখন তাঁর বয়স ছিল ২৪ বছর ৬ মাস ১৭ দিন!
এক বর্ষপঞ্জিতে সবচেয়ে বেশি গোল: গোল করাটা তাঁর কাছে হয়তো খাওয়া বা ঘুমোনোর মতো—অভ্যাস। তবে এই সাধারণ বিষয়টিকেই মেসি একেবারে আরও সাধারণতম করে ফেলেছিলেন ২০১২ সালে। ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ম্যাচ মিলিয়ে ওই সালে গোল করেছিলেন ৯১টি! ১৯৭২ সালে জার্মান গোলমেশিন জার্ড মুলারের ৮৫ গোলের রেকর্ডটিও এতে ভেঙে গেল। এই রেকর্ডের স্বীকৃতি মেসি পেয়েছেন গিনেস কর্তৃপক্ষের কাছ থেকেও। ওহ, এই রেকর্ড গড়ার সময় মেসির বয়স কত ছিল জানেন? মাত্র ২৫। ৮৫ গোলের সময়ে মুলারের বয়স ছিল মেসির চেয়েও দুই বছর বেশি।
লিগে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোল: এটিও ওই ২০১২ সালেই। ২০০৯ সালে রোনালদো রিয়ালে আসার পর থেকেই দুজনে মিলে গোল করার রেকর্ডের সীমাটিকে বছর-বছর আরও উঁচুতে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ২০১২-তে সেটিকে আকাশে নিয়ে গেলেন মেসি। স্প্যানিশ লিগে ৩৭ ম্যাচেই ছুঁয়েছেন গোলের ফিফটি। ম্যাচপ্রতি ১.৩৫১ গোল! ৩০ গোল করলেই যেখানে একজন স্ট্রাইকার বর্তে যান, সেখানে ৫০ গোল! স্রেফ অবিশ্বাস্য!
লা লিগায় সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট: প্রয়োজনে তিনি গোলের সামনে রুদ্রমূর্তি, আবার ইচ্ছে করলেই খোলস বদলে গড়ে দেওয়া কারিগর। যাঁর ধ্যানই থাকে পেছন থেকে আক্রমণ গড়ে দেওয়া, সতীর্থকে গোল বানিয়ে দেওয়া। দুই ভূমিকাতেই বেশ সফল মেসি।শিকারি মেসির গোলের রেকর্ড তো জানলেন, কারিগর মেসির রেকর্ডটাও শুনুন। লা লিগায় এরই মধ্যে ১২৮টি গোলে সহায়তা করেছেন মেসি। তাঁর কাছাকাছি থাকা খেলোয়াড়? লুইস ফিগো। বার্সা ও রিয়াল দুই দলের হয়েই খেলা এই পর্তুগিজের অ্যাসিস্ট ১০৫। আপাতত তাই অনেক বছরের জন্যই লা লিগার অ্যাসিস্ট কিং উপাধিটা মেসি মাথায় রেখে দিতে পারেন।
সবচেয়ে কম বয়সে ১০০ চ্যাম্পিয়নস লিগ ম্যাচ: তীব্র এক শীতের রাতে ইউক্রেনে চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক হয়েছিল, শাখতার দোনেৎস্কের বিপক্ষে। এরপর ১১ বছর ধরে ইউরোপের সর্বোচ্চ এই প্রতিযোগিতাটিকে আলোকিত করে যাচ্ছেন মেসি। তাতে রেকর্ডও হয়ে গেল। এই মৌসুমেই রোমে এএস রোমার বিপক্ষে ম্যাচটি ছিল চ্যাম্পিয়নস লিগে মেসির শততম। বয়স তো মাত্র ২৮। এর চেয়ে কম বয়সে চ্যাম্পিয়নস লিগে ম্যাচের সেঞ্চুরি করতে পারেননি আর কেউ। ম্যাচের সেঞ্চুরি তো হলো, যে গতিতে গোল করে যাচ্ছেন, তাতে চ্যাম্পিয়নস লিগে সবচেয়ে কম বয়সে গোলের সেঞ্চুরিটাও হয়ে যাবে মেসির।
নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট : ০৩:০০ এএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৫, রোববার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur