Home / জাতীয় / ‘কে জানতো সকালেই শুনতে হবে অঙ্গার হওয়ার খবর’
‘কে জানতো সকালেই শুনতে হবে অঙ্গার হওয়ার খবর’

‘কে জানতো সকালেই শুনতে হবে অঙ্গার হওয়ার খবর’

বড় ভাইয়ের সঙ্গে রাতেও কথা হয়েছিল। ভাতিজা-ভাবির সঙ্গে কুশল বিনিময়ও হয়েছে। কিন্তু কে জানতো সকালেই শুনতে হবে আগুনে পুড়ে অঙ্গার হওয়ার খবর। ভাইসহ ৫ জনের পরিবারের ৪ জনই পুড়ে অঙ্গার। ইতোমধ্যে ২জন চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ভাই-ভাবিও মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন।

শুক্রবার রাতে ফুফাতো ভাই আবু সুফিয়ানের সঙ্গে ক্রন্দনরত অবস্থায় কথা বলছিলেন ছোট ভাই মো. মনিরুজ্জামান। এছাড়া মৃত্যুর খবরে অসংখ্য আত্মীয় স্বজন এসছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে।

জানা গেছে, শুক্রবার ভোরে রাজধানীর উত্তরায় ১৩ নম্বর সেক্টরের একটি বাড়িতে গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৫ জন দগ্ধ হয়েছেন। এদের মধ্যে ৪ জনকে আশংকাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

দগ্ধরা হলেন, স্বামী মো. শাহনেওয়াজ, স্ত্রী সুমাইয়া খানম, ছেলে সালিন বিন নেওয়াজ (১৪), জারিফ, জারান। এদের মধ্যে শাহনেওয়াজের শরীরের ৯৫ ভাগ, সুমাইয়ার ৯০ ভাগ, সালিলের ৮৮ ভাগ এবং জারানের ৭৪ ভাগ পুড়ে যায়।

এদের মধ্যে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছেলে সালিন বিন নেওয়াজ (১৪) বিকেল সাড়ে ৫টায় এবং জায়ান সন্ধ্যা ৭টায় মারা যায়। ঢামেক বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক জানিয়েছেন, স্বামী মো. শাহনেওয়াজ, স্ত্রী সুমাইয়া খানমের অবস্থাও আশঙ্কাজনক।

ছোট ভাই মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বড় ভাই মো. শাহনেয়াজ আমেরিকান অ্যাম্বাসিতে চাকরি করতেন। রাতে রীতিমতো বাসায় ফিরেছেন। রাতে ভাই ভাবি, ভাতিজাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। ভাই বেড়াতেও যেতে বলেছিলেন। কিন্তু পরে যাবো বলে ফোন রেখেছিলাম। কিন্তু বুঝিনি ভাই এভাবে চলে যাবে। এমন মৃত্যু মানতে পারছি না।’

তিনি বলেন, “আমি এখন কি করবো বুঝতে পারছি না। বাবা ও মা দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ওকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই।”

তিনি বলেন, মরদেহ আজ রাতেই নিয়ে যাচ্ছি না। এখানেই ফ্রিজিং করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ভাই-ভাবির সর্বশেষ অবস্থা জেনে তারপর সিদ্ধান্ত নেবো। ডাক্তাররা আশংকাজনক বলে জানিয়েছেন।

পাশের বিছানায় দন্ধ সুমাইয়ার বড় ভাই আবুল খায়ের খান হামিমের কাছে আকুতি, “ভাই আমি আর বাঁচবো না, মরে যাবো। আমি মরে গেলে মা-বাবার পাশেই আমাকে কবর দিও।”

হামিম জানান, চলতি মাসেই উত্তরার ওই বাসাটিতে উঠেন বোন-জামাই। বাসায় ওঠার পর থেকেই নাকি সেখানে গ্যাসের গন্ধ পেতেন। বাড়ির মালিক মির্জা দেলোয়ার হোসেনকে বিষয়টি জানানোর পরও ব্যবস্থা নেননি তিনি। গত রাতেও ওই গ্যাস লিকেজের বিষয়টি জানানো হয়েছিলো।

ভাই আবুল খায়ের খান হামিম আক্ষেপ করে বলেন, যদি এটা মেরামত করা হতো তবে আমাদের এই মর্মান্তিক ও করুণ দৃশ্য দেখতে হতো না।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের কর্তব্যরত চিকিৎসক আয়শা হান্না বলেন, দ্বিতীয় তলার হাই ডিপেন্ডেন্ট ইউনিটে দগ্ধ স্বামী-স্ত্রীকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। স্বামী শাহনেওয়াজের শরীরের ৯৫ ভাগ, স্ত্রী সুমাইয়ার ৯০ ভাগ বার্ন হয়েছে। সাধারণত এ ধরণের রোগী বাঁচেন না। তবে আমরা আমাদের চিকিৎসার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের ক্রটি করছি না। (জাগো নিউজ)

নিউজ ডেস্ক : আপডেট ৯:১২ এএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, শনিবার
ডিএইচ