মাদকের ভয়াল থাবায় জড়িয়ে পড়ার কারণ উঠতি বয়সের বেকারত্ব
মাদক শব্দটি দৈনন্দিন খবরের কাগজে পড়তে গেলে খুবই স্বাভাবিক একটা বাক্য মনে হয়।।তবে অন্য কোনো কাল দিক বিবেচনা করতে গেলে তা যেনো ভয়াবহতার একটা দুর্লভ প্রতিপলনের অনুভূতি আসে।এ ছাড়াও মাদক শব্দটিকে শুধু একটি নির্ধারিত বাক্যে পরিণত করতে গেলে সমাজকে একটা মিথ্যে সান্ত¡Íনা দিয়ে প্রকৃত ভয়াবহতাকে লুকিয়ে রেখে সমাজকে রোগাক্রান্ত করে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেলে তখন আর কিই-বা হবে। মাদকের নাম শুধু মাদকই নয়, সর্বনাশা মৃত্যুর প্রথম ধাপ।
মাদকের দুনিয়ায় একচ্ছত্র আধিপত্য এখন এমন এক ধরনের ‘লাল বড়ি’ ইয়াবা। যা মেথামফিটামিন ও ক্যাফেইনের মিশ্রনে তৈরি নেশা জাতীয় ট্যাবলেট। পয়েল পেপারে পুড়িয়ে বা বড়ি হিসেবে সেবন করা হয় এ মরন ব্যাধি নেশা জাতীয় ট্যাবলেট।এক সময় থাইল্যন্ডে তুমুল জনপ্রিয় এ মাদকটি মিয়ানমার হয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সহকারে বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে। তরুণ তরুণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রী প্রাইভেট কোম্পানীর কর্মচারী বিত্তশালী পরিবারের ছেলে মেয়ে বউ কে নেই ইয়াবা নেশার তালিকায়।
তবে এ ধরনের পরিস্থিতির কথা জানতে গিয়ে বুঝা যায়, শুধু বিদেশগামী আর বেকারত্ব যুবকরাই এ নেশায় আক্রান্ত নয়। রাজনীতির ছায়ায় পড়ে বহু সংখ্যক নেতা কর্মী মামলা হামলার ভয়ে রাত্রি যাপনে বাধাগ্রস্ত হয়ে এদিক সেদিক ঘুরাফেরা করার মাধ্যমেও জড়িয়ে পড়ে এ জগতে। সর্বনাশা ইয়াবা নামের এ ট্যাবলেটটির কথা কিছু দিন পূর্বে শহর বন্দরে সেবন করার কথা বেশি শোনা যেতো। তবে এখন শহরেই সীমাবদ্ধতা থাকলো না, গ্রামেগঞ্জে অলি গলিতে নেশার জগতে সর্বত্রই একই নাম ইয়াবা।
গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় এ ট্যাবলেটটির ভিন্ন ভিন্ন নাম দেওয়া হয়েছে ও ব্যাবহার করার সরঞ্জামগুলোর নামও আলাদা করে রাখা হয়েছে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় কিছুদিন পূর্বেও গাঁজা সেবন করাই ছিলো নেশাখোরদের একমাত্র উপায়। তবে এখন গাঁজার সাথে সর্বনাশা ইয়াবা ট্যাবলেটটিও যোগ হয়েছে। উপজেলার মোটামোটি কয়েকটি ইউনিয়নে ইয়াবার ডিলারও রয়েছে। আর এই ডিলাররাই সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বিদেশ প্রত্যাশী ও উঠতি বয়সের যুবকদের কাছে ঠুকে দিচ্ছে এই নেশা দ্রব্যগুলো। তারা নিজেরাও সেবন করছে এবং ক্রয়-বিক্রয় করে নিজেদের পকেটে ইদুর পড়া মরা থেকে পকেটকে হেফাজত করতেছে। যদিও সাময়িকভাবে নিজেদের মাঝে অর্থ উপার্জনের একটা ছাফ দেখতে পাচ্ছে ঠিক তেমনি আবার ধাপে ধাপে মৃত্যুর ঘন্টি বেজে আসছে।
আর এই অকালমৃত্যু ও নানা যন্ত্রণা থেকে দূরে রাখার জন্যই মাদক নামের ভয়াল জিনিষের প্রতি সাঁড়াশি অভিযান। মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশী ও চিরুনী অভিযান এসব যেনো সমাজের মধ্যে খুবই পরিচিত একটা শব্দ। আর গণমাধ্যম তো প্রচারভিযানে কোনো ধাপেই কমতি রাখে না। ইলেকট্রনিক মিডিয়া থেকে শুরু প্রিন্ট মিডিয়া যার অনুকুলে যেরকমভাবে সম্ভব হচ্ছে সেভাবেই তুলে ধরেছেন সমাজে। এই প্রচারভিযানের একটাই প্রত্যাশা সমাজ থেকে চিরজীবনের জন্য ধুয়ে মুছে যাক এই মরণঘাতক ব্যাধী নেশা।
এবার পালা কারা কীভাবে এ মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে সমাজের চিত্র পাল্টে দিচ্ছে। এরা আমাদেরই লোক, লোক নির্জনে নয় লোক সমাজেই এদের বসবাস। পরিস্থিতি এমনটাই বলে দিচ্ছে যে, ‘‘বন্ধুু বান্ধবের সাথে থাকি একটা দুইটা টান, সেই টানেতে ভইরা গেছে আমার মন প্রাণ।’’
‘প্রাইমারী স্কুুল শেষে যখন মাধ্যমিক উচ্চ মাধ্যমিকে পা রাখে তখনেই ক্লাস পাকি দিয়ে অলি গলিতে নির্জন ছায়াতে বসে একটা সিগারেটের ভাগ বিনিময়ের মাধ্যমে শুরু হয় এ কাল। এভাবে চলতে চলতে পড়ালেখার প্রতি অনাগ্রহ তৈরি হয়। এরই মাঝে পারিবারিক দৃষ্টিভঙ্গি এদের প্রতি অসেচতন থাকার কারণে বড় একটা সুযোগ কাজে লাগিয়ে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে আড্ডায় মাতিয়ে ‘একটা দুইটা টানে’র বিনিময়ে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। উঠতি বয়সে পারিবারিক সচেতনতা আর পড়ালেখার উন্নতি অবনতি যাচাই বাচাই এ সবটা যদি সঠিক পন্থার মাধ্যমে রাখা যেতো তবেই এ মাদকের ভয়াল থাবা থেকে আরোগ্য পাওয়া যেতো।
পারিবারিক এ অবহেলা আর নিজেদের অনীহার কারণে স্বল্প করে মিশতে থাকে মাদকে রোগাক্রান্তে থাকা মানুষদের সাথে। এছাড়াও পারিবারিক আর্থিক অসেচতনতার কারণে তরুণ উঠতি বয়সেই পড়ালেখার ভারসাম্যহীন রক্ষা করতে না পারায় বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছায় প্রহর গুণতে থাকে। এ কালেই দেখা মিলে যায় ওইসকল নেশাক্রান্ত তরুণদের সাথে।
এ রকম অসংখ্য তরুণ রয়েছে ফরিদগঞ্জ উপজেলায়, যারা অর্থ ও পারিবারিক মাত্রাতিরিক্ত শাসনের কারণে পড়ালেখা বাদ দিয়ে বিদেশে যাবচার অপেক্ষায় প্রহর গুণছেন। এরই মাঝে ভাগ্য কাউকে ডেকে নিচ্ছেন আর বাকিরা অন্ধ বিশ্বাসের ওপর ভর করে দিন পার করছেন। আবার কেউ মাদক নামের ভয়াল থাবায় জড়িয়ে গেছেন এবং এর চালান দিচ্ছেন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে।
তবে অবাক করা ব্যাপার হলো, যারা প্রথমে এ ভয়াল নেশায় সঙ্গীদের মাধ্যমে জড়িয়ে ছিলেন, তারা কিন্তু এখন আর পকেটের টাকা দিয়ে এ নেশা সেবন করতে হয় না। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন পয়েন্টে এ দ্রব্য পৌঁছে দিলে নিজেদেরও কিছু অর্থ উপার্জন হল, অন্য দিকে নিজেরা সেবন করার মাধ্যমে মৃত্যু যন্ত্রণাকে সাথে করে সামনের দিকে নিতে সহজ হলো।
মোটামোটিভাবে মাসের প্রতিটা দিনেই পুলিশের অভিযানে দু’একজন করে মাদক ক্রেতা বিক্রেতা ও সেবনকারী আটক হচ্ছে। তবে এদেরকে তো আর বছরের পর বছর জেলে রাখা সম্ভব নয়। কোনভাবে বের হওয়ার পরপরেই পুনরায় আবার জড়িয়ে পড়ে সেই মৃত্যুরকূপের ব্যবসা এবং সেবনে।
ফরিদগঞ্জ উপজেলায় অসংখ্য স্পট রয়েছে, যেখানে রাতে নয়; দিনের বেলায়ও মাদকদ্রব্য প্রচার হওয়া থেকে শুরু করে যেখানে সেবন করার নিদারুণ ব্যবস্থা রয়েছে। আর এ সকল মাদক স্পট থেকেই এসকল মাদকদ্রব্য গ্রামেগঞ্জে অলি গলিতে ছড়িয়ে পড়তে সহজ হচ্ছে সেই অবহেলায় জর্জরিত মাধ্যমিক ছাত্র ও বেকার যুবকদের কাছে। সহজভাবেই বলা যায়, এ মাদক স্পটগুলো সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে সরকার দলীয় কিছু কথিত নামধারী নেতা-কর্মী। যার কারণে পুলিশকে অনেক সময় কোল টানতে হয়, আর অযতেœ অবহেলা অনীহায় থাকা উঠতি বয়সের যুবকদের কাছে এটা খুব কাছের দ্রব্য হিসেবে সহজ হয়ে যায়।
ফরিদগঞ্জ করেসপন্ডেন্ট|| আপডেট: ০৭:০২ অপরাহ্ন, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, বুধবার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur