Home / সারাদেশ / কথিত সাধক বাবার গান-বাজনা বন্ধকালে হামলার শিকার পুলিশ
কথিত সাধক বাবার গান-বাজনা বন্ধকালে হামলার শিকার পুলিশ

কথিত সাধক বাবার গান-বাজনা বন্ধকালে হামলার শিকার পুলিশ

কুমিল্লার মুরদানগর উপজেলায় একটি ভুয়া মাজারে গানবাজনা বন্ধ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বাতে উপজেলার রাজাবাড়ি গ্রামে।

স্থানীয় সুত্র জানায়, চলমান এসএসসি পরীক্ষার এ সময়টিতে যখন পরীক্ষাথীদের পড়াশোনার জন্যে একটি নিরিবিলি পরিবেশ জরুরি এমন পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার রাতে উপজেলার রাজাবাড়ি গ্রামের ছালাম শাহর মাজার নামে একটি ভূয়া মাজারে গান বাজনার আয়োজন করা হয়।
এ উপলক্ষে সেখানে স্থাপন করা হয় দুই ডজন উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন মাইক, সাউন্ডবক্স। তার উপর ঢাক-ঢোল তো আছেই।

সব মিলিয়ে মাইক আর বাদ্যযন্ত্রের বিকট শব্দে আশেপাশের পরিবেশ ভয়াবহ শব্দ দূষণে পরিণত হয়।

এলাকাবাসীর অভিযোগ আর প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকতাদের নির্দেশে বিষয়টিতে বিশেষ নজর দেন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকতা (সহকারী কমিশনার, ভূমি) আলী আজগর।

তিনি স্থানীয় চেয়ারম্যনকে ফোন দেন এবং বাঙ্গরা বাজার থানার ওসিকেও ব্যবস্থা গ্রহণের জন্যে বলেন। পরে এসআই গোলাম মোস্তফার নেতৃত্বে ৪ জন পুলিশ পাঠান ওসি।

রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মাইক বন্ধ করার নির্দেশ দিলে গান-বাজনা বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক মিনিট যেতে না যেতেই আয়োজকদের লেলিয়ে দেয়া লোকজন হামলা করে পুলিশ সদস্যদের ওপর। দৌড়ে পুলিশ সদস্যরা প্রয়াত ছালাম শাহর ছোট ভাই প্রয়াত আব্দুর রৌফ এর ঘরে আশ্রয় নেন। পুলিশ সদস্যদের তাড়া করতে বাড়ির দরজার গ্রিল ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করতে চেষ্টা চালায় তারা।

এ অবস্থায় পুলিশ সদস্যরা নিরাপদে ঘরে বসে থাকেন, অন্যদিকে আবারো গান বাজনা চালু করেন আয়োজকরা। রাতভর চলে গান-বাজনা।

এলাকাবাসী জানায়, বছর দুয়েক আগে মারা যান ছালাম শাহ নামের ওই কথিত সাধক। তাকে সমাহিত করা হয় রাজাবাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গাজীপুর গ্রামে, কোম্পানীগঞ্জ-নবীনগর সড়কের পাশে। সেখানে ভক্তরা তার মাজারও তৈরি করে। সেখানে প্রায়শই ওরশ পালন করে আসছেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে, ওরশের নামে সেখানে মাদক-জুয়ার আসরসহ নানান অনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে সেখানে।

এদিকে সে মাজারে প্রয়াত ছালাম শাহর পরিবারের সদস্যদের কতৃত্ব না থাকায়, তারা এক কিলোমিটার দূরে রাজাবাড়ি গ্রামে আরেকটি কাল্পনিক মাজার তৈরি করে সেখানেও ওরশের নামে নানান অনৈতিক কমকাণ্ড শুরু হয়।

তারই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার রাতে গানের আয়োজন করে।

এ ব্যপারে ওই গ্রামের বাসিন্দা জাহাঙ্গীর আলম ইমরুলের কাছে জানতে চাইলে তিনি কাল্পনিক ও ভূয়া মাজারটি নিয়ে মন্তব্য করতে রাজে হননি। তবে তিনি বলেন, ওরশের নামে এভাবে বিকট শব্দে গান-বাজনা এ এলাকায় নতুন নয়। বলতে পারেন, এলাকায় এটি মহামারী আকার ধারণ করেছে।

বিশেষ করে পাবলিক পরীক্ষার সময় এধরনের গান-বাজনা একেবারে বন্ধ করা না গেলও, অন্তত: শব্দ কমিয়ে করা যেতে পারে।

বাঙ্গরা বাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোয়াজ্জেম হোসেন পুলিশের ওপর হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আমি ফোর্স পাঠিয়েছি, তারা গিয়ে গান-বাজনা বন্ধ করে দিয়েছে। তবে পরে চলে থাকলেও চলতে পারে, তবে তা মাইক ছাড়া।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে রাজাবাড়ি ও গাজীপুর গ্রামের কয়েকজন বলেন, আমরা সারারাত গান শুনেছি। মাইকেই গান হয়েছে।

তবে পুলিশের নীরব ভূমিকার সমালোচনা করে তারা বলেন, পুলিশের ঘরে বসে থাকার বিষয়টি সন্দেহজনক। আয়োজকদের সাথে গোপন যোগসাজসে, সুবিধাগ্রহণের মাধ্যমে জনতার হামলা নাটক সাজিয়ে পুলিশ ঘরে বসে ছিলো। এদিকে গান-বাজনা চলেছে।

আকুবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুবকরের সাথে কয়েক দফায় যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার মোবাইল ফোনটি বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে কোন বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

তবে পুলিশ পাঠানোর পর তাদের উপর জনরোষের বিষয়টি শোনেছেন স্বীকার করে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকতা (সহকারী কমিশনার, ভূমি) আলী আজগর বলেন, আমি এসআই সাহেবের মোবাইল ফোন দিয়েই আয়োজক কমিটির আব্দুল মতিনকে এ বিষয়ে কথা বলেছি।

কুমিল্লা কসেরপন্ডেন্ট : আপডেট ৯:১০ পিএম, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬, বুধবার

ডিএইচ/এমআরআর