চাঁদপুর টাইমস ডেস্ক:
বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক মা হচ্ছেন ৭৬ বছরের ওমকারি সিং। তার ছেলের বয়স মাত্র ছয়। সবে স্কুলে যেতে শুরু করেছে সে। ছোট্ট ছেলেটিকে নিয়ে স্বপ্নের যেন শেষ নেই। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে ছেলের বিয়ে দিতে চান। সেজন্যই আরো ১৫/২০ বছর বেঁচে থাকতে চান বর্ষিয়ান ওমকারি।
উত্তর প্রদেশের বাসিন্দা ওমকারি ২০০৮ সালে একসঙ্গে তিন ছেলেমেয়ের জন্ম দেন। একজন ৭০ বছর বয়সী এক নারীর মা হওয়ার এই ঘটনাটি তখন গোটা বিশ্বে আলোড়ন তুলেছিল। তিনি ছেলের নাম আকাশবাণী আর যমজ মেয়েদের নাম রেখেছিলেন বারাসাত।চার বছর বয়সে মেয়ে দুটি মারা যায়। তবে ছেলে আকাশবাণী সুস্থ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে ওঠছে।
এত বয়সে মা হওয়ার কারণে লোকের কম গঞ্জনা সইতে হয়নি ওমকারিকে। এখনো অপরিচিত লোকজন মা-ছেলেকে একসঙ্গে দেখলে জানতে চায়,‘এটা কি তোমার নাতি?’ তিনি তাদের বলেন,‘না, আমার ছেলে।’ তখন প্রশ্নকারীদের চোখ কপালে ওঠে যায়।
তবে ছেলে আর ৮৯ বছরের স্বামী চরনকে নিয়ে সুখেই আছেন ওমকারি।তিনি বলেন,‘আমার ছয় বছরের একটি ছেলে আছে এজন্য আমি ভীষণ সুখি। মা হওয়ার এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করার নয়।
আকাশবাণীও খুব আমুদে ছেলে। সারাক্ষণ হৈ হুল্লোর আর আনন্দ স্ফূর্তিতে বাড়ি মাথায় তুলে রাখে। এই চঞ্চল ছেলের দেখভাল করতে বেশ কষ্ট হয়, বিশেষ করে ওর স্কুলে যাওয়ার সময়টিতে। ওমকারি বলেন,‘আমি তো ওকে ঠিকমত গোসল করাতে পারি না। ওকে জামা কাপড় পরাতেও বেশ কষ্ট হয়। ওকে খাওয়ানোও কম ঝামেলার বিষয় নয়। কী করব বলুন, বয়স হয়েছে না!’
ও্ই গ্রামের আর এক মা ভীরমতি বলেন,‘ওমকারি এ বয়সে মা হয়েছে এটা তো দারুন বিষয়। আমার মতে সে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা পরষ্পরকে ভালোবাসে এটাও চোখে পড়ার মত।’
চরন এবং ওমকারির আরো দুটি মেয়ে এবং পাঁচ জন নাতি নাতনি আছে। শুরু থেকেই তারা ছেলে সন্তানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ৭০ বছর বয়সে এসে ওমকারির সেই চেষ্টা সফল হয়। তখন তার বড় মেয়ে কামলা ৫০য়ের কোঠায় পৌঁছে গেছে।’
আইভিভিএফ চিকিৎসা পদ্ধতির মাধ্যমে গর্ভবতী হন ওমকারি। এই ব্যয়বহুল চিকিৎসা চালাতে গিয়ে এক প্রকার সর্বশান্ত হয়ে যান এই দম্পতি। গোয়ালের বলদ বিক্রি, জমি বন্ধক, জমা টাকা তুলে আনা- একটি পুত্র সন্তানের জন্য কীনা করেছেন তারা।
এ সম্পর্কে ওমকারি সিং বলেন, ‘ছেলে ছাড়া জীবনের কী মূল্য আছে, বলুন! ছেলে না থাকলে এই ঘরবাড়ি কে দেখাশোনা করবে?’
৭৬ বছরের এই বৃদ্ধা জানেন, ছেলে সন্তানের মুখ দেখলেও সময় তার অনুকূলে নয়। তারপরও আশা কমে না। স্বপ্ন দেখেন আরো আনেক দিন বেঁচে থাকার। অন্তত ছেলের বিয়েটা স্বচোখে দেখে যেতে চান। তবে বেশিদিন বেঁচে থাকতে না পারলেও চিন্তা নেই। তার অবর্তমানে মেয়েই দেখবে আকাশবাণীকে।
তিনি বলেন,‘ছেলেকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়ার ইচ্ছা আছে আমার। আমরা দুই বুড়োবুড়ি দাঁড়িয়ে থেকে ছেলের বিয়ে দেব।’ সেদিনটি না আসা পর্যন্ত বেশিরভাগ সময় ছেলের সান্নিধ্যে কাটাতে চান ওমকারি আর চরন। এতেই তারা সুখি।
ভিডিও দেখুন
https://www.youtube.com/watch?feature=player_embedded&v=I_nZ7SkVKlA