মার্কিন গায়ক জাস্টিন বিবার যখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ২৫ বছরে বিয়ে করবেন বলে ঘোষণা দেন, তখন যুক্তরাষ্ট্রেরই আরেক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব- উপস্থাপক ও অভিনেত্রী অপরা উইনফ্রে তাঁকে পরামর্শ দেন, ‘২৫ বছর বয়স আসলে খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। কারণ তুমি সত্যিকার অর্থে কেমন এটা বুঝতে বুঝতেই ২০ বছর লেগে যাবে।’
বিয়ে ও পরিবার এমন এক সামাজিক ব্যাপার, যার জন্য শুধু মানসিক প্রস্তুতি থাকলেই হয় না, প্রাকৃতিকভাবে শরীরকেও প্রস্তুত হতে হয়। মনোচিকিৎসক আহমেদ হেলাল এ বিষয়ে বলেন, ‘মূলত বিয়ের জন্য বয়সটা গুরুত্বপূর্ণ না, শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতিটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা হলফ করে বলা সম্ভব না যে, যেহেতু আজ ১৭ বছর ১১ মাস ২৯ দিন হয়েছে সেহেতু কাল আপনার বিয়ের বয়স হবে। বিজ্ঞান বলে, ১৮ বছর বয়স হলে মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়। তাই এই বয়সকে আমি বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স মনে করি।’
বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী বিয়ের ক্ষেত্রে পুরুষের জন্য কমপক্ষে ২১ বছর, আর নারীর জন্য ১৮ বছর করা হয়েছে। এর কম বয়সে বিয়ে করাকে আইনি সমর্থন দেওয়া হয় না এবং তা ‘বাল্যবিবাহ’ হিসেবে পরিগণিত হয়। অথচ জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) কর্তৃক প্রকাশিত ২০১৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ১৮ বছরের আগে ৬৬ শতাংশ মেয়ে এবং একই বয়সের ৫ শতাংশ ছেলের বিয়ে হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো, ১৮ বছরের নিচে বিয়ে মানে বাল্যবিবাহ, কিন্তু ১৮ বছর হলেই কী সে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হয়? এ বিষয়ে মনোচিকিৎসক আহমেদ হেলাল বলেন, ‘কোনো মানুষ ১৮ বছর হওয়ার আগেও মানসিকভাবে সাবালক হতে পারে আবার কেউ ২৫ বছর বয়সেও মানসিকভাবে প্রস্তুত নাও হতে পারে।’ তাই বিয়ের জন্য মানুষ মানসিকভাবে কখন প্রস্তুত হয় তা সঠিকভাবে বলার কোনো উপায় নেই। বিয়ে মানে নতুন সম্পর্ক, নতুন পরিবেশ ও নতুন দায়িত্ব। এই বিষয়গুলো যখন কেউ উপলব্ধি করতে পারবে, তখনই সে বিয়ের জন্য প্রস্তুত হবে। না হলে বিয়ের পর এই বিষয়গুলো তার জন্য অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর এ কারণে অনেককে বিচ্ছেদের মতো ঘটনারও সম্মুখীন হতে হয়।
কোন বয়সে বিয়ের জন্য মানুষ শারীরিকভাবে প্রস্তুত হয়, সে সম্বন্ধে স্কয়ার হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ রেহেনুমা জাহান বলেন, ‘১৮ বছর হওয়ার আগ পর্যন্ত মেয়েদের ইউটেরাস, ওভারি, পেলভিস পরিপক্ব হয় না। এই সময়ের মধ্যে বিয়ে হলে সন্তান নেওয়ার সময় মেয়েদের নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। ছেলেদের ক্ষেত্রেও তাই। ২১ বছর না হওয়া পর্যন্ত তাদের অর্গানগুলো পরিপক্ব হয় না। তবে আমি মনে করি, ৩০ বছরের মধ্যেই মানুষের বিয়ে করে, সন্তান নিয়ে ফেলা উচিত।’
কোন দেশে বিয়ের বয়স কত?
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিয়ের ন্যূনতম বয়স ১৮ বছরকেই ধরা হয়। তবে দেশ ভেদে এই বয়স কমবেশিও হয়ে থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইনের বরাত দিয়ে মুক্ত বিশ্বকোষ উইকিপিডিয়া জানিয়েছে এ বিষয়ে কিছু তথ্য। সে জায়গা থেকে বাছাই করা দেশের বিয়ের বয়স সংক্রান্ত একটি তালিকা নিচে দেওয়া হলো :
বিয়ের বয়সের ওপর বিচ্ছেদ নির্ভর করে?
কম বয়সে বিয়ে করলে বিচ্ছেদের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে সেটা তো আগেই বলা হয়েছে কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি বয়সে বিয়ে করলেও এই বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটার শঙ্কা বেড়ে যায়। মার্কিন সেই গবেষণা থেকে জানা যায়, ৩২ বছরের পর বিয়ে করার কারণে প্রতি বছর ৫ শতাংশ করে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা বাড়ছে যুক্তরাষ্ট্রে। অথচ এর আগের গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে যে, যাঁরা দেরিতে বিয়ে করেন তাঁদের বিবাহবিচ্ছেদের হার অনেক কম ছিল। ‘এটা অনেক বড় একটি পরিবর্তন’, বলেন যুক্তরাষ্ট্রের উটাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নিকোলাস ওলফিঙ্গার। নিকোলাস আরো বলেন, ‘আমার জানা মতে, সাম্প্রতিক সময়ে ৩০ বা এর বেশি বয়সে বিয়ের কারণে বিবাহবিচ্ছেদের ঝুঁকি অনেকাংশে বেড়ে গেছে।’
গবেষণার বিশ্লেষণে নিকোলাস বলেন, ‘৩২ বছরের আগে যাঁরা বিয়ে করেছেন তাঁদের ক্ষেত্রে অদ্ভুতভাবে প্রতিবছরে অন্তত ১১ শতাংশ বিবাহবিচ্ছেদের আশঙ্কা হ্রাস পেয়েছে।’ ধারণা করা হয়, অপেক্ষাকৃত কম বয়সে বিয়ে করলে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নিতে পারে সহজে। আর তাদের মধ্যে অহংবোধ অতটা বেশি কাজ করে না, যতটা কাজ করে ৩২ বছরের পর। তাই বেশি বয়সের পর বিয়ে করলে দম্পতির ভেতর বোঝাপড়াটা কম হওয়ার শঙ্কা থাকে বা মানিয়ে নেওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। আর এ কারণেই বিচ্ছেদের হারটাও বেশি হয় বেশি বয়সের বিয়েতে।
সবশেষে নিকোলাস বলেন, ‘যাই হোক বিবাহবিচ্ছেদ নিয়ে যতই মতভেদ থাকুক না কেন, বর্তমানে প্রতিবছর অন্তত ৫ শতাংশ বিবাহবিচ্ছেদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।’ তবে গবেষকরা মনে করেন ২০ ও ৩০ বছরের মাঝামাঝি বিয়ে করাটাই উত্তম। এই সীমার আগে করলে বেশি তাড়াতাড়ি হয়ে যায় আর এর পরে করলে বেশি দেরি হয়ে যায়। (এনটিভি)
নিউজ ডেস্ক : আপডেট ৯:২৭ এএম, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬, বুধবার
ডিএইচ