ভোটকেন্দ্র প্রবেশ করতে সাংবাদিকদের অনুমতি নিতে হবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার। অনুমতি না দিলে ভোট কেন্দে প্রবেশ করতে পারবে না। অনুমতি পেলেও ৫ জনের বেশি সাংবাদিক একসঙ্গে কেন্দ্রে যেতে পারবেন না।
যাওয়ার অনুমতি মিললেও ১০ মিনিটের বেশি ভোটকেন্দ্রে থাকা যাবে না। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে ভোটকক্ষে প্রবেশে সাংবাদিকদের জন্য ৫টি নির্দেশনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মঙ্গলবার এসব নির্দেশনা বিভিন্ন জেলায় রিটার্নিং অফিসারদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাংবাদিকদের প্রতি নির্দেশনাগুলো হলো :
(১) ‘ভোটকেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া ভোটকক্ষে প্রবেশ করা যাবে না,
(২) কোন প্রকার নির্বাচনী উপকরণ স্পর্শ বা অপসারণ করা থেকে বিরত থাকবেন,
(৩) সাংবাদিকরা ভোটে প্রার্থী বা কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষে বা বিপক্ষে যে কোন ধরনের কর্মকা- থেকে বিরত থাকবেন,
(৪) সাংবাদিকরা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করতে পারবেন না এবং
(৫) নির্বাচন অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য সংবিধান, নির্বাচনী আইন ও বিধিবিধান মেনে চলবেন।’
ইসি কর্মকর্তারা জানান, ‘সাংবাদিকদের ভোটের সংবাদ সংগ্রহ নিয়ে কখনোই ঝামেলা হয়নি। শুধু গত সিটি নির্বাচনে কেন্দ্রে যেতে অনেক জায়গায় বাধা দেয়ার ঘটনা ঘটে। এরপরই ভোটকেন্দ্রের সংবাদ সংগ্রহ নিয়ে নির্দেশনার কথা ওঠে।’
আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় ভোট সামনে রেখে গত শনিবার অনুষ্ঠিত আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় ভোটের সংবাদ প্রচারে কড়াকড়ি আরোপের প্রস্তাব করেছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা।
গত ২৮ এপ্রিলের তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় সাংবাদিকদের প্রথমবারের মতো ভোটকেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়।
ওইদিন বেলা ১১টা পর্যন্ত বেশিরভাগ কেন্দ্রেই সাংবাদিকদের ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। বেশ কয়েকজন সাংবাদিক লাঞ্ছিতও হন। গোলযোগ ও অনিয়মের কারণে তিনটি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। তবে ভোটে সাংবাদিকদের বাধা ও নাজেহালের ঘটনায় ইসির তদন্ত কমিটি শেষ পর্যন্ত কাউকে চিহ্নিত করতে পারেনি। বরং সাংবাদিকদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ সীমিত করা উচিত বলে তদন্ত কমিটি সুপারিশ করে।
সিটি নির্বাচনের পর ৩০মে অনুষ্ঠিত মাগুরা উপনির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার অনুমতি এবং কেন্দ্রে অবস্থানের সময় বেঁধে দেয়াসহ বেশ কয়েকটি নির্দেশনা দেয় কমিশন। আগামী ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩৪ পৌরসভায় ভোট হবে। এতে ৩ হাজার ৫৫৮টি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। যেখানে ২০ হাজারের বেশি ভোটকক্ষ স্থাপন করা হবে।
ইসির নির্দেশনা সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, প্রথম নির্দেশনার জন্য ভোটকক্ষের ভেতরের কোন বিশৃঙ্খলার খবর পরিবেশনে অসুবিধা হবে। এক্ষেত্রে অনুমতি পেতে বিলম্ব হলে প্রকৃত ঘটনা জানাতে পারবে না গণমাধ্যম। দ্বিতীয় নির্দেশনার কারণে ব্যালট পেপার বা বাক্স বা নির্বাচনী উপকরণ দুর্বৃত্তরা নষ্ট করলেও সে সংবাদের গভীরতা বা প্রমাণযোগ্যতা কমে যাবে।
তৃতীয় নির্দেশনার মাধ্যমে সাংবাদিকদের অনেকটা হুঁশিয়ারিই দেয়া হয়েছে। কেননা, যেকোন সংবাদেই কোন না কোন পক্ষ উপকৃত হয়। অথচ এতে বলা হয়েছে, সাংবাদিকরা ভোটে প্রার্থী বা দলের পক্ষে-বিপক্ষে কোন কর্মকা- চালাতে পারবেন না। চতুর্থ নির্দেশনার কারণে কোন ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা বা নির্বাচনী দায়িত্বরত কর্মকর্তা অনিয়ম করলেও তাকে কিছু বলা যাবে না।
এক্ষেত্রে অনিয়মকারী কর্মকর্তাকে সুরক্ষা দেয়ারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পঞ্চম নির্দেশনায় সরাসরি আইন লঙ্ঘনের পরিণতির ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ নির্দেশনা না মানার অভিযোগ এনে সংবিধান ও আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ থাকছে।
সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে এত বাধা নিষেধ থাকলে নিরপেক্ষভাবে সাংবাদিকতা করা কি সম্ভব এমন প্রশ্ন বিশেষজ্ঞদের। আর সাংবাদিকরা যদি সময়মতো ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে না পারে তাহলে সঠিক চিত্র দেখানোও তার পক্ষে সম্ভব হবে না। তাহলে সংবাদিকতা কি মুষ্টিমেয় লোকের হাতে বন্দি, না কারচুপিকে বৈধতা দেয়ার জন্য এত কড়াকড়ি করতে হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে এমন প্রশ্ন সাধারণ মানুষের।
ডেস্ক ।। আপডেট : ০২:৪৮ পিএম, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫, বুধবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur