Home / জাতীয় / রাজনীতি / হেলিকাপ্টারে এলেন ‘মহান’ সেই এমপি লিটন
হেলিকাপ্টারে এলেন ‘মহান’ সেই এমপি লিটন

হেলিকাপ্টারে এলেন ‘মহান’ সেই এমপি লিটন

এবারের চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। আড়াই মাস আগে তাকে নিয়ে ছিল দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড়। পুলিশ অভিযান চালাচ্ছিল তাকে আটকের জন্য। আর তার হাতে নির্যাতনের শিকার শত শত মানুষ জানাচ্ছিল অভিযোগ। দাবি করছিল কঠিন শাস্তির।

কিন্তু আড়াই মাস পর এসে সেই তারই জন্য ছুটছে মানুষ। কেউ অভিনন্দন জানাতে, কেউবা তাকে একনজর দেখতে। প্রশাসনের হর্তাকর্তারা পর্যন্ত অধীর অপেক্ষায় বসেছিলেন তার জন্য।

তবে কাউকে নিরাশ করেননি সেই ‘মহান অতিথি’। সুদূর ঢাকা থেকে উড়ে এলেন হেলিকপ্টারে। নামলেন বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করা সুধীজনও আস্বস্ত হলেন অবশেষে।

এতোক্ষণ যার কথা বলা হচ্ছিল তিনি গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য মো. মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন। গত ২ অক্টোবর ভোরে কোনো কারণ ছাড়াই গোপালচরণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র সৌরভের ওপর গুলিবর্ষণ করেছিলেন এই অতিথি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় গুলিবিদ্ধ শিশুটিকে ভর্তি করাতে হয়েছিল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

নিষ্পাপ শিশুকে গুলি করে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে এমপি লিটনের বিরুদ্ধে শিশুর বাবা সাজু মিয়া সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা মামলা করেন। পরে ১৪ অক্টোবর পুলিশ ঢাকার উত্তরা থেকে এমপি লিটনকে আটক করে। পরদিন আদালত তাকে পাঠান কারাগারে। প্রথম দফায় ৮ নভেম্বর এমপি লিটনকে দেয়া হয় অন্তর্বর্তী জামিন। এরপর জামিনে মেয়াদ বাড়িয়ে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত করা হয়।

এমপি লিটনের নির্বাচনী এলাকা সুন্দরগঞ্জে এবার মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। আর এসব কর্মসূচিতে প্রধান অতিথি করা হয় ঢাকায় অবস্থান করা বিতর্কিত সেই এমপি লিটনকে।

বুধবার প্রথম প্রহরে স্থানীয় শহীদ স্মৃতি স্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর ভোর থেকে সবাই অপেক্ষা করতে থাকেন প্রধান অতিথি এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের জন্য। সুন্দরগঞ্জ আব্দুল মজিদ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি উপস্থিত না থাকায় আমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ করা সময়সূচি অনুযায়ী অনুষ্ঠান শুরু করতে পারছিলেন না আয়োজকরা। এক পর্যায়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন স্থানীয় লোকজন আর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। অনেকেই অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করে চলে যান।

এভাবে ধৈর্য্যের পরীক্ষা দিতে দিতে অবশেষে বেলা ১১টার দিকে হঠাৎ হেলিকপ্টারের শব্দ কানে আসে। ছুটাছুটি শুরু হয়। উৎসুক হয়ে ওঠে আয়োজকরাও। হেলিকপ্টার দেখতে আশপাশ এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসতে থাকে। মাঠে হেলিকপ্টারটি অবতরণ করতেই দরজা খুলে বের হয়ে আসেন এমপি লিটন। তাকে ফুল দিয়ে সাদরে বরণ করে নেয় দলীয় নেতাকর্মী, স্থানীয় প্রশাসন ও সাধারণ জনতা।

এমপি লিটন সাংবাদিকদের জানান, বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকা যাবে না বলেই শত কাজের মাঝেও তিনি সময় বের করে হেলিকপ্টার নিয়ে ছুটে এসেছেন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে।

এদিকে, সুন্দরগঞ্জবাসী এই প্রথম দেখলেন একজন এমপি হেলিকপ্টার নিয়ে উড়ে এলেন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। এর আগে এমন ঘটনা তারা দেখেনি। অনেককেই বলতে শোনা গেছে, যিনি মাতাল হয়ে যাকে তাকে গুলি চালাতে পারেন, যার ভয়ে সবাই তটস্থ, যার শাস্তি দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল মানুষ, সেই ব্যক্তেই সুন্দরগঞ্জে এলেন রাজকীয় ভাবে।

এমপি লিটন প্রধান অতিথির আসন গ্রহণের পর শুরু হয় বিজয় দিবসের মূল অনুষ্ঠান। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিশু সংগঠন প্রদর্শন করে শারীরিক কসরৎ।

প্রসঙ্গত, গত ২ অক্টোবর ভোরে এমপি লিটনের পিস্তলের গুলিতে মারাত্মকভাবে আহত হয় শিশু শাহাদত হোসেন সৌরভ (৯)। তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে শিশু সার্জারি বিভাগে ২৪ দিন চিকিৎসা নিয়ে গত ২৬ অক্টোবর দুপুরে সে বাড়ি ফেরে। এ ঘটনায় সৌরভের বাবা বাদী হয়ে ৩ অক্টোবর এমপি লিটনকে একমাত্র আসামি করে সুন্দরগঞ্জ থানায় মামলা করেন। একইদিনের বাড়ি-ঘর ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগে ৬ অক্টোবর সুন্দরগঞ্জ থানায় আরও একটি মামলা করেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সর্বানন্দ ইউনিয়নের উত্তর সাহাবাজ গ্রামের প্রতিবেশী হাফিজার রহমান।

সৌরভ গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ঢাকাসহ সারাদেশে এমপি লিটনকে গ্রেপ্তার দাবিতে আন্দোলন গড়ে ওঠে। তার নিজ এলাকা সুন্দরগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও প্রগতিশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা তার অপকর্মের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে।

এরপর ১৪ অক্টোবর রাতে উচ্চ পর্যায়ের সবুজ সংকেত পেয়ে রাজধানীর উত্তরার বোনের বাসা থেকে এমপি লিটনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরের দিন ভোরে তাকে মাইক্রোবাসে করে গাইবান্ধা ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়। এরপর তাকে গাইবান্ধা অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। বিচারক অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাইনুল হাসান ইউসুফ শুনানি শেষে জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

১৫ অক্টোবর থেকে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত এমপি লিটন গাইবান্ধা কারাগারে আটক ছিলেন।

নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট : ০১:৩০ পিএম, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫, বৃহস্পতিবার
ডিএইচ