বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল পাইলিং ও নদীশাসন কাজের উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ইতিহাসের উজ্জ্বল অংশীদার হলো বাংলাদেশ। ২০১৮ সালের মধ্যেই ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতু যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে আশা করছে সরকার।
বাংলাদেশ আজ উন্নতির এক ধারপ্রান্তে চলে এসেছে। ঠিক এমন সময় একটা কথা না বললেই নয়, পতি যখন সৌরজগতের গ্রহ-নক্ষত্রে দূরত্ব পরিমাপ করেন, স্ত্রীর দিন তখন কাটে বালিশের কাভারের মাপ নিয়ে। বাঙালি নারী শুধু সেলাইয়ের গজ-ফিতার মাপই জানেন। কথাটি দুঃখ করে বলেছিলেন বেগম রোকেয়া। তবে আজ ইশরাত জাহান ইশিকে দেখলে বোধ হয় বেগম রোকেয়ার দুঃখ ঘুচত। দেখতে পেতেন, বাঙালি নারী এখন শুধু গৃহস্থালির মাপজোখই করেন না, পদ্মা সেতুর মাপজোখও করেন।
গত শনিবার মাওয়ায় পদ্মা নদীর পাড়ে সেতুর কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে দেখা হয় ইশরাত জাহানের সঙ্গে। বয়স সবে মাত্র ২০ বছর। দিনাজপুর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ থেকে সদ্য পাস করা প্রকৌশলী। মাস তিনেক হলো চাকরি নিয়েছেন পদ্মা সেতুর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনে (এমবিইসি)।
পদ্মার পাড়ে ধু-ধু বালুচরে প্রায় আধা কিলোমিটার লম্বা এক কারখানা। গুদামঘরের মতো এই কারখানায় দিনরাত চলছে সেতুর পাইলিং পাইপ তৈরির কাজ। চীন থেকে আনা বিশাল বিশাল ইস্পাতের পাতগুলোকে এক হাজার ৫০০ টন ক্ষমতার বেন্ডিং মেশিনে মুড়িয়ে সিলিন্ডার বানানো হচ্ছে। ছোট সিলিন্ডারগুলোকে আগুনের উত্তাপে জোড়া লাগিয়ে পাইলিং পাইপ বানানো হচ্ছে। প্রতিটি সিলিন্ডার যেন সঠিক মাপের হয়, তা নিশ্চিত করাই ইশরাত জাহানের চাকরি।
তার ওপর ইশরাতই একমাত্র বাঙালি নারীকর্মী। আরও তিন চীনা নারীকর্মী থাকলেও তারা না জানেন বাংলা, না জানেন ইংরেজি। ইশরাতকে ভাব বিনিময় করতে হয় তাদের সঙ্গে। মাথায় হেলমেট, হাতে গ্গ্নাভস আর পায়ে বুট পরে কাজে লেগে গেলেন। সেই থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা একই রুটিনে কাজ করছেন। কিন্তু ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কন্যা ইশরাত স্বপ্নেও ভাবেননি পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ পাবেন।
এখানে কাজ করা যে সহজ নয়, তাও বললেন। জানালেন, একমাত্র নারীকর্মী হওয়ার কিছু সমস্যা তো আছেই। পরিবার-পরিজন ছেড়ে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডের ডরমেটরিতে থাকেন। তিন চীনা নারীকর্মী থাকলেও, তাদের সঙ্গে ‘ইয়েস’ ‘নো’ ‘ভেরি গুড’ ছাড়া আর কোনো আলাপের জো নেই।
পরিবেশ যেমন হোক, নিজের কাজ নিয়ে খুবই উচ্ছ্বসিত ইশরাত। বললেন, ‘প্রতিটি পাইলিং পাইপের মেজারমেন্ট আমার হাতে করা। মাপে এক মিলিমিটারও এদিক-সেদিক হয়নি। দেশের সবচেয়ে বড় প্রকল্প পদ্মা সেতুতে আমার অবদান আছে এটা তো মানুষকে বলতেও ভালো লাগে। সেতু হয়ে গেলে বলতে পারব, আমিও ছিলাম সেতুর কাজে।’
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৮:০৮ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৫, শনিবার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur