শুরু হয়ে গেলো স্বপ্নের পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণযজ্ঞ। শনিবার (১২ ডিসেম্বর) পদ্মার জাজিরা পাড়ে নদীশাসন ও মাওয়া পাড়ে পাইলিং কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ নির্মাণযজ্ঞ শুরু হয়।
স্বপ্নের এ সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। প্রথমে তিনি বেলা সোয়া ১১টার কিছুক্ষণ পর মাওয়ায় নদীশাসন কাজের উদ্বোধন করেন, এরপর দুপুর একটার কিছুক্ষণ আগে সুইচ অন করে উদ্বোধন করেন পাইলিংয়ের। প্রধানমন্ত্রী সুইচ অন করার সঙ্গে সঙ্গেই বিশাল ও ভারী হ্যামার দিয়ে শুরু হয় প্রমত্তা পদ্মার গভীরে পাইলিং কাজের।
বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করতে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে বেলা ১১টা ১৬ মিনিটে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের নাওডোবায় পৌঁছান। হেলিকপ্টার থেকে নেমেই ফলক উন্মোচনের মধ্য দিয়ে পদ্মা নদীশাসনের কাজের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর মোনাজাতে পদ্মাসেতু প্রকল্পের সফলতা কামনা করেন তিনি। ফলক উন্মোচনের পর শুরু হয় পদ্মার নদীশাসনের কর্মযজ্ঞ।
এরপর পাশে আয়োজিত সুধী সমাবেশে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। এতে তিনি প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। বক্তৃতা করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, শরীয়তপুর-১ (জাজিরা) আসনের সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হক প্রমুখও।
পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজে বিভিন্ন বাধা-বিপত্তির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার বক্তৃতায় বলেন, পদ্মাসেতু নির্মাণ আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। অনেকে এগিয়ে এসেও হঠাৎ পিছিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজের প্রকল্প হাতে নিলে বিশ্ব ব্যাংক এগিয়ে আসে। কিন্তু হঠাৎ কোনো কারণ ছাড়া তারা দুর্নীতির অভিযোগ আনে। যদিও আমরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বিএনপি সরকারের সময়ের দু’টি দুর্নীতির কাগজ দেখায়।
বাংলাদেশ একদিন পুরোপুরি স্বাবলম্বী হবে আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারও কাছে হাত পেতে নয়। আমরা স্বাবলম্বী হয়ে চলবো। বাঙালি কারও কাছে মাথা নত করেনি, করবেও না। বাঙালি জাতিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। আজও তা-ই প্রমাণিত হয়েছে। পদ্মাসেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেছি আমরা।
এরপর প্রধানমন্ত্রী পদ্মাসেতুর পাইলিং কাজের উদ্বোধন করতে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া পাড়ে চলে আসেন। এখানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দুপুর ১২টা ৫৭ সুইচ পাইলিংয়ের অন করার মাধ্যমে মূল সেতুর নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর এখানেও সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, শত বাধার মুখেও বাংলাদেশ প্রমাণ করেছে, তারা পারে। অনেক ঝড়-ঝাপ্টা-চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, ভিক্ষা চেয়ে নয়, হাত পেতে নয়, বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু তৈরি করছে। বাংলাদেশ পারবে। আমি বিশ্বাস করি। লাখো শহীদ রক্ত দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেছে। এখন এ স্বাধীন দেশের মানুষই পদ্মাসেতু নির্মাণ করবে।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার পর অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জানান, তিনি সুইচ অন করতেই সেতুর পাইলিং শুরু হয়ে গেছে প্রমত্তা পদ্মার গভীরে।
পদ্মাসেতু নির্মাণ কাজের উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী মাওয়ায় তার জন্য নির্ধারিত ঘর ‘পদ্মা-১০’ এ বিশ্রাম নিচ্ছেন। বিকেলে প্রধানমন্ত্রী মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের উত্তর মেদেনীমণ্ডলে আয়োজিত জনসভায় বক্তৃতা করবেন। তার আগমন উপলক্ষে ইতোমধ্যেই জনসভাস্থলে সমবেত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
নিউজ ডেস্ক || আপডেট: ০৪:৩৫ পিএম, ১২ ডিসেম্বর ২০১৫, শনিবার
এমআরআর