বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে সৌদি আরবে গিয়েছিলেন বিধবা রিনা আক্তার (৩১)। কিন্তু সংসারের দায়িত্বের নেয়ার পরিবর্তে তাকে নিয়েই এখন উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে তার বিধবা মা ও ছোটবোন। গৃহকর্তার নির্যাতনের স্বীকার হলেও তাকে অপরাধী বানিয়ে এখন রাখা হয়েছে সৌদির এক জেল হাজতে।
বড় বোনের এমন ঘটনার পর লেখা পড়ার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরতে হয়েছে ছোট বোন লিজা আক্তারের। তিনি জানান, এসব অভিযোগ সৌদিআরবস্থ বাংলাদেশি দূতাবাসসহ জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোকে (বিএমইটি) অবহিত করার দুই মাস পার হলেও তারা কোন প্রকার সুরাহার আশ্বাস দিতে পারেনি তাদের অসহায় পরিবারকে।
বিএমইটিতে আসা অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, রংপুর সদরের নিউজুম্মা পাড়ার বাসিন্দা মোছা. রিনা আক্তার (পার্সপোর্ট নং- বিএফ ০০৯৪৭৫২)। স্বামী হঠাৎ মারা যাওয়ার পর তিন বছরের এক শিশু সন্তান নিয়ে উঠে পরে বাবার বাড়িতে। তার বাবাও মারা যাওয়ায় সংসারের অভাব ঘোচাতে সরকারি ভিসায় গত ২৫ জুন গৃহকর্মীর কাজে সৌদি আরব যান তিনি। কিন্তু সেখানে গিয়েও সরল হয়নি তার ভাগ্যের বক্ররেখা। সৌদি আরবের তার গৃহকর্তা তাকে দিয়ে বাসার কাজের পাশাপাশি অনেক অতিরিক্ত কাজ করায় এবং সেইসঙ্গে চলে শারীরিক নির্যাতন। এমনকি বন্ধু-বান্ধব ডেকে এনেও শারীরিক নির্যাতন চালায় তার গৃহকর্তা। এসবে অস্বীকৃতি জানালে নির্যাতনের মাত্রা আরো বাড়তো।
এমন নির্যাতনের এক পর্যায়ে গত ২১ আগস্ট জোহরের নামাজের সময় তার মালিক তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেন। তিনি চিৎকার করে রাস্তায় চলে আসলে, বাংলা ভাষায় চিৎকার শুনে সেখানে থাকা এক বাংলাদেশি এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরে পুলিশকে ফোন করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন ২২ আগস্ট সেই বাংলাদেশির মাধ্যমে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন রিনা আক্তার।
এব্যাপারে কথা হয় রিনার ছোট বোন লিজা আক্তারের সঙ্গে। ফোনে রিনার নাম শুনতেই আগ্রহ নিয়ে বলছিলেন, ‘-আপনি কি ঢাকা থেকে বলছেন! আমার বোনের কি কোনো সংবাদ আছে?’ লিজা এখন অর্নাস পড়াশুনার পাশাপাশি সংসারের হাল ধরেছেন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন, ‘সেখানকার (সৌদি) এক বাংলাদেশি ভাইয়ের মাধ্যমে গত ২২ আগস্ট এ নির্যাতনের কথা জানতে পারি। সেইসময় আমার বোনের প্রায় অর্ধেক শরীর পুড়ে গিয়েছিল বলে শুনেছি। এরপর থেকে তার (রিনা) সঙ্গে আমাদের কোন যোগাযোগ নাই। তবে গত সপ্তাহে আমরা আরেক সৌদিপ্রবাসীর মাধ্যমে যোগাযোগ করে জানতে পারি যে, সেই মালিক উল্টা তার বিরুদ্ধে আত্মহত্যার চেষ্টা মামলা করেছে। তাই সেই মামলার আসামি হিসেবে রিনা এখনো সৌদির এক জেল হাজতে আছে। তবে কোন জেলে আছে তা আমরা জানতে পারিনি।’
লিজা অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা প্রথমে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এসব অভিযোগ পাঠিয়েছি। তারা বলছেন, ‘দেখছি।’ এমনকি আমরা মোবাইল ফোনে (মোবাইল নং- ০০৯৬৬৫৩৪৮৮০৫৩৬) অ্যাম্বাসির সারোয়ার আলম (সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর) নামের একজনের যোগাযোগ করলে তিনি আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। এজন্য পরবর্তীতে আবারও গত ২১ সেপ্টেম্বর বিএমইটির মাধ্যমে আবেদন করা হয়। কিন্তু তারা এখনো কোনো কিছু জানাননি অথবা কোনো আশ্বাসও দেননি। এদিকে আবার আমার মা বৃদ্ধা-অসুস্থ। আবার ওই বোনের একটা তিন বছরের ছোট বাচ্চাও আছে। পাশাপাশি আমার পড়া-লেখা। সেই সঙ্গে এসব চিন্তা। সব মিলিয়ে সব সময় উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন পার করতে হচ্ছে আমাদের।’
এ ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব খন্দকার মো. ইফতেখার হায়দার বলেন, ‘আমরা অভিযোগ শুনামাত্র যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছি। কিন্তু ভিন্ন দেশ হওয়ায় অনেক আইনি জটিলতা থাকে। তাই অভিভাবকদের অভিযোগ অনুযায়ী তৎক্ষনাত পদক্ষেপ নিতে পারছি না। তবে এটা সত্য যে আমরা আমাদের দায়িত্বে কোনো বিলম্ব করি না।’ (বাংলামেইল)
নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট : ০৫:১০ পিএম, ০১ ডিসেম্বর ২০১৫, ঙ্গলবার
ডিএইচ