বাংলাদেশে এই প্রথম সম্পূর্ন লেজারের সাহায্যে স্বল্প খরচে কোন ধরনের কাটা ছেঁড়া ছাড়াই ভ্যারিকোস ভেইন বা আঁকাবাঁকা শিরার চিকিৎসা শুরু হয়ছে।
ভ্যারিকোস ভেইন মানইে এক সময় ছিল বড় অপারেশন। দীর্ঘ সময় ধরে পুরো পায়ে কাটাছেঁড়া করে অপারেশন করা হত। লেজারের মাধ্যমে কোন ধরণের কাটাছেঁড়া ছাড়াই এখন এ রোগ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকা সম্ভব হচ্ছে।
আঁকাবাঁকা শিরা বা ভ্যারিকোস ভেইন কি?
রক্তনালীর একটি সাধারণ রোগ। নামটি আমাদের কাছে খুব পরিচিত না হলেও এ জাতীয় সমস্যায় আমাদের দেশের প্রচুর সংখ্যক লোক ভুগে থাকেন। এ রোগে পায়ের শিরাগুলো চামড়ার নিচে ফুলে উঠে এবং বাহির থেকে দেখতে আঁকাবাঁকা মনে হয়। প্রথম দিকে শুধু অস্বস্তি লাগলেও সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে পরবর্তীতে নানা উপসর্গ দেখা দেয়।
ভ্যারিকোস ভেইন কেন হয় ?
আমাদের পায়ের শিরাগুলো দুই সারিতে অবস্থান করে। প্রথম সারি থাকে একটু ভিতরের দিকে এবং অন্য সারি থাকে ত্বকের ঠিক নিচেই। এই দুই সারির মাঝে আবার সংযোগকারী আন্ত-শিরা থাকে। কোন কারনে ভিতরের রক্তনালীতে চাপ বেড়ে গেলে তার প্রভাব আন্ত-শিরার মাধ্যমে বাইরের শিরার মধ্যেও সঞ্চারিত হয়। শিরার মধ্যস্থিত ভালভ-এর কারনে এই পরিবর্তন আমরা সহজে বুঝতে পারি না। কিন্তু কোন কারনে এ ভালভ্ ঠিকমতো কাজ না করলে কিংবা শিরার গাত্র দূর্বল হয়ে পড়লে তখন প্রেসার বাড়ার সাথে সাথে পায়ের রক্তনালী গুলোও ফুলে উঠে। একেই ভ্যারিকোস ভেইন বলে। সাধারনত এই রোগ পায়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।
কাদের বেশি হয় ?
কাদের বেশি হয়, সে সম্পর্কে সঠিক কোন ধারনা পাওয়া না গেলেও দেখা গেছে যাদের জন্মগতভাবে শিরার ভালভ্ গুলো দূর্বল কিংবা শিরার গাত্র দূর্বল তাদের ক্ষেত্রে এই রোগ বেশি হয়ে থাকে। পাশাপাশি এ জাতীয় লোকজন যদি দীর্ঘক্ষন দাঁড়িয়ে কাজ করেন তবে ভ্যারিকোস ভেইন হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই জন্য ভ্যারিকোস ভেইনকে একসময় ট্রাফিক পুলিশের রোগ বলা হতো। তবে ট্রাফিক পুলিশ হলেই যে এ রোগ হবে এমন কোন কথা নেই।
এছাড়া গর্ভাবস্থা, পেটে বড় কোন টিউমার অথবা পানি জমলেও শিরার উপর চাপ পড়ে। তখনও ভ্যারিকোস ভেইন হতে পারে। তবে এসব সমস্যা কেটে গেলে ভ্যারিকোস ভেইন এমনিতেই ভালো হয়ে যায়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা
চোখে দেখেই প্রায় নিশ্চিত ভাবে ভ্যারিকোস ভেইন নির্ণয় করা সম্ভব। তারপরেও চিকিৎসার সুবিধার্থে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে একটি হলো ডুপলেক্স স্ক্যান (কম্পিউটার পরীক্ষা)। এই স্ক্যানারের সাহায্যে ত্বকের গভীরে অবস্থিত শিরাগুলোর গতি প্রকৃতি সম্পর্কে একটি স্বচ্ছ ধারনা পাওয়া যায়। এ পরীক্ষাটি অপারেশনের পরিকল্পনার জন্যও জরুরী।
চিকিৎসা
আগে মনে করা হতো ভ্যারিকোস ভেইন বা আঁকা বাঁকা রোগের চিকিৎসা মানেই অপারেশন। আর অপারেশন মানেই কাটা ছেঁড়া, সেলাই, ড্রেসিং ইত্যাদি। কিন্তু বাংলাদেশে এই প্রথম স্বল্প খরচে সর্বাধুনিক পদ্ধতি লেজারের সাহায্যে কসমেটিক উপায়ে এই রোগের চিকিৎসা করা হয়।
জটিলতা
সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করালে এই রোগীরা নানা জটিলতার শিকার হতে পারেঃ
১। আক্রান্ত স্থানের চারপাশ কালো হয়ে যাওয়া
২। আক্রান্ত স্থানে আলসার হওয়া
৩। পায়ের চামড়া শক্ত হয়ে যাওয়া
৪। হঠাৎ করে আক্রান্ত স্থান দিয়ে রক্তপাত হওয়া
৫। রক্তনালী বন্ধ হওয়ার সমস্যা বা থ্রম্বোসিস হওয়া ইত্যাদি।
লেজার কি?
লেজার এক ধরনের লাইট যার মাধ্যমে আঁকা বাঁকা শিরা স্বাভাবিক করে দেয়া হয়। ফলে চিকিৎসার দিন থেকেই আঁকা বাঁকা রক্তনালী আর দৃশ্যমান হয় না।
লেজারের মাধ্যমে চিকিৎসা করার সুবিধা:
– কোন কাঁটা ছেঁড়ার দরকার হয় না, সেলাই নাই।
– অপারেশন পরবর্তী সময়ে সামন্য ব্যথা হয়।
– এতে কোন দাগ থাকে না।
– দ্রুত সময়ে বাড়ী ফেরা যায়।
– দ্রুত কর্মস্থলে যোগদান করা যায়।
– এক সাথে দুই পায়ের আঁকা বাঁকা শিরার চিকিৎসা করা যায়।
দু’টি গুরুত্বপূর্ন তথ্য:
১। ভ্যারিকোস ভেইনের রোগীরা চাকুরী নিয়ে বিদেশ যেতে পারেন না।
২। ভ্যারিকোস ভেইনের রোগীরা প্রতিরক্ষা রাহিনীতে চাকরীর অযোগ্য বলে ঘোষিত হন।
তবে, চিকিৎসা করালে বিদেশ যাওয়া বা চাকরী পেতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হয় না।
চিকিৎসা ব্যায়ঃ
প্রায় প্রচলিত অপারেশনের সমান। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তুলনায় প্রায় ৪ ভাগের ১ ভাগ, সিঙ্গাপুরের তুলনায় ৫০ ভাগের ১ ভাগ!
লেখকঃ ডাঃ এসএমজি সাকলায়েন রাসেল
ভাসকুলার সার্জারি বিশেষজ্ঞ সার্জন
ভাসকুলার সার্জারি বিভাগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
saklayendmc@gmail.com
।।আপডেট : ০৭:৪০ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০১৫, শুক্রবার
ডিএইচ