চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে বিষপানে আত্মহত্যা করেছে প্রেমিক যুগল। বুধবার সকালে থানা পুলিশ দু’জনের মৃতদেহ ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করেছেন। এ ঘটনায় হাজীগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
এর আগে মঙ্গলবার গভীররাতে প্রেমিক যুগলের মৃতদেহ তাদের স্ব স্ব বাড়ি থেকে উদ্ধার করে পুলিশ ।
উপজেলা ৫ নং সদর ইউনিয়নের বাউড়া গ্রামের ভূঁইয়া বাড়ির আঃ হামিদের ছেলে নবীর হোসেন (২০) ও পাশ্ববর্তী বাড়ির আজিজ উল¬াহর মেয়ে রেহানা আক্তার (১৪) সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিলো। কিন্তু মেয়ের পরিবারের বাঁধার কারণে গত মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে ভূইয়া বাড়ির পাশের পুকুর পাড়ে প্রেমিক নবীর ও প্রেমিকা রেহানা বিষপান করে।
স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে হাজীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নেয়া হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে কুমিল¬া মেডিকেল হাসপাতালে নেয়ার সময় রাতে পথিমধ্যে উভয়ে মারা যায়।
হাজীগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক মনিরুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে আমরা ছেলের লাশ আর মেয়ের বাড়ি থেকে মেয়ের লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি।
আত্মহত্যাকারী এই প্রেমিক বাউড়া গ্রামের ছৈয়াল বাড়ীর আবদুল হাকিমের ছোট ছেলে নবির হোসেন। সে নবম শ্রেনী পর্যন্ত পড়ালেখা করে দিনমজুরের কাজ করছিল। আর প্রেমিকা হাজী বাড়ীর আজিজুল¬াহর ছোট মেয়ে রেহানা আক্তার। সে হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ছিল।
প্রেমিক নবীর হোসেনের ভাই কবির হোসেন জানায়, ২৩ নভেম্বর সোমবার সন্ধ্যায় এলাকায় একটি মাহফিল হয়। ওই মাহফিল থেকে প্রেমিকা রেহানা আক্তার কাকে দিয়ে ফুসকা এনেছিল। এই ফুসকা তার ভাই নবীর হোসেন দিয়েছে অযুহাত তুলে মেয়েকে বেদম মারধর করেছিল মা, ভাই মাঈনুদ্দিন ও রাহিম। ওইসময় রেহানা পায়ে গুরুতর আঘাত পায়। তখন মেয়েটি তার মা-বাবাকে আত্মহত্যা করবে বলে হুমকী দিয়েছিল। বিষয়টি মঙ্গলবার সকালে নবীর হোসেন আমাকে খুলে বলেছে। তখন ভাইকে ধৈর্য্য ও শান্ত থাকার অনুরোধ করি। কিন্তু মেয়েটির প্ররোচনায় দুইজনে একসাথে আত্মহত্যার পথ বেচে নিয়েছে।
ভাই কবির হোসেন আরো জানায়, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিষপান করা অবস্থায় নবীর আমাকে ফোন দিয়ে বলেছেÑ ‘ভাই আমি আর রেহানা একসাথে বিষ খেয়েছি। মরে যাচ্ছি, মাফ করেদিস। দোয়া করিস। ’
তবে এ বিষয়ে মেয়ের ভাই রাহিম বলেন, এসব বানোয়াটে কথা। সোমবার এমন কোন ঘটনা ঘটেনি। ছেলে নবীর হোসেন বিষ কিনে এনে আমার বোনকে খবর দিয়ে নিয়ে গেছে। তাদের সর্ম্পকের বিষয়টি ছয় মাস পূর্ব থেকে পরিবারবর্গ জানতে পেরেছে বলেও তিনি জানান।
জানতে চাইলে প্রেমিক নবীর হোসেনের মা পারুল বেগম বলেন, আমার ছেলেকে মেয়ের ভাইয়েরা হাজীগঞ্জ বাজারে একাধিকবার মারধর করেছে। তারা সামান্য অযুহাতে মেয়েকেও একাধিকবার মেরেছিল। গ্রাম্য শালিশে দুই বছর পর তাদের বিবাহ হবে বলে একটি স্টাম্প করা হয়। অথচ শালিশীগণ ওই স্টাম্পে কারো সাক্ষর রাখা হয়নি।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. শাহআলম জানান , মেয়েটি দুইবার ছেলের বাড়ীতে পালিয়ে গেছে। শেষ বার মেয়ের বাবা ও ভাই পুলিশের স্বরণাপন্ন হয়। তখন মেয়েকে ছেলের বাড়ী থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি। তখন উভয় পক্ষের সিন্ধান্ত মোতাবেক পূর্ণ বয়স হবার পর অর্থ্যাৎ ২ বছর পর পারিবারিকভাবে তাদের বিবাহ হবার সিন্ধন্ত নেয়া হয়।
তিনি আরো বলেন, মেয়ের ভগ্নিপতি মো. সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন। তবে দুই জনের আত্মহত্যার পিছনে কারো প্ররোচণা রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
৫নং সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মামুনুর রহমান মজুমদার বলেন, ছেলে মেয়ের সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে উভয় পরিবারের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছিলো বলে আমি শুনেছি।
এ ঘটানায় বাউরা গ্রামের দুই বাড়িতে হাজার হাজার মানুষ ভীড় জমায় ।
স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।। আপডেট: ০৪:৫৫ পিএম, ২৫ নভেম্বর ২০১৫, বুধবার
ডিএইচ/এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur