কুমিল্লায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে ফের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালানো হয়েছে। এ সময় দুই ইঞ্চি ব্যাসের ৬১ পিস পাইপ, একটি জেনারেটর, একটি গাড়ি ও কিছু যন্ত্রাংশ জব্দ করা হয়। তবে জড়িতদের বিরুদ্ধে কোনো আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়নি প্রশাসন।
সোমবার দুপুরে বুড়িচং উপজেলার ময়নামতি এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়।
ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা যায়, ময়নামতি ইউনিয়নের জিয়ারপুর থেকে মোকাম ইউনিয়নের বারকোট গ্রাম পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে অবৈধভাবে গ্যাস লাইন স্থাপন করা হচ্ছে- এমন গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক মো. হাসানুজ্জামান কল্লোল ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় অবৈধ পাইপ অপসারণ ও জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন তিনি। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে সোমবার দুপুর থেকে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফজলুল জাহিদ পাভেলের নেতৃত্বে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের সহকারী প্রকৌশলী জসীম উদ্দিন আহমেদসহ প্রশাসন ও পুলিশ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ময়নামতি এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগ সিন্ডিকেটের কিছু সদস্যের নাম উল্লেখ করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এদের মধ্যে রয়েছেন- ময়নামতি ইউনিয়নের নামতলা গ্রামের শফিকুর রহমান, আওরঙ্গ সম্রাট, ঝুমুর গ্রামের মৎস্যজীবী লীগ নেতা আ. জলিল ভূঁইয়া, জিয়ারপুর গ্রামের মনিরুল, মোকাম ইউনিয়নের বারকোট গ্রামের আবু মেম্বর এবং ময়নামতি ইউনিয়নের গণেশপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ।
তাদের নেতৃত্বে অবৈধভাবে গ্যাস সরবরাহের লক্ষ্যে ময়নামতির জিয়ারপুর থেকে মোকাম ইউনিয়নের বারকোট গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ১২শ’ ফুট এলাকায় পাইপ স্থাপন করা হয়।
তবে তাদের বিরুদ্ধে কেন আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হয়নি- জানতে চাইলে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফজলুল জাহিদ পাভেল জানান, ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় তারা পালিয়ে গেছেন। সে কারণে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে সাজা দেয়া যায়নি। তবে তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
এর আগে, গত ১৯ অক্টোবর মুরাদনগর উপজেলার কামাল্লায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অভিযান পরিচালনা করেন মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মনসুর উদ্দিন। এছাড়া গত ১৩ অক্টোবর চার হাজার ফুট অবৈধ পাইপ লাইন বিচ্ছিন্ন করেন চান্দিনা উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
প্রসঙ্গত, এক ইঞ্চি ব্যাসের পাইপ থেকে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে দুই ইঞ্চি ব্যাসের পাইপের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করায় গ্যাসের চাপ কমে যাবে। ফলে বৈধ গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এছাড়াও মাটি থেকে সাড়ে তিন ফুট গভীরে গ্যাস লাইন স্থাপনের নিয়ম থাকলেও অনেক স্থানে সরাসরি রাস্তার ওপর এবং রাস্তার সর্বোচ্চ ছয় ইঞ্চির ভেতর পাইপ স্থাপন করায় যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও দালাল চক্র বাখরাবাদ গ্যাস ডিসট্রিবিউশন দেবিদ্বার জোনাল অফিস, কুমিল্লার বাখরাবাদ গ্যাস অফিসের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা, কতিপয় নামধারী সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অবৈধভাবে গ্যাসের আবাসিক সংযোগ দেয়ার কাজে লিপ্ত রয়েছে। এর মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
কুমিল্লা কসেরপন্ডেন্ট ।। আপডেট: ০৭:২১ পিএম, ২৩ নভেম্বর ২০১৫, সোমবার
ডিএইচ