চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কা দেখিয়ে এক মাষ্টার পরিবারের বিরুদ্ধে আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যায়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩ নং সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার শাহাদাত হোসেন সরেজমিন তদন্তে গেলে এর সত্যতা উঠে আসে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের বাসারা মাষ্টার বাড়ীর মৃত ফজলুল হকের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবুল কালাম মাষ্টার, তার স্ত্রী ছায়েরা বেগম ও ছোট ভাই মোস্তফা কামালকে বিবাদী করে একই বাড়ীর মৃত খলিলুর রহমানের মেয়ে মনোয়ারা মিনু বেগম আদালতে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন।
চলতি বছরের জুলাই মাসে চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা শান্তি ভঙ্গের আশঙ্কা দেখিয়ে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন জনৈক বাদী মনোয়ারা মিনু। যার মামলা নং ৮৭৭/২৫।
মামলার আরজিতে উল্লেখ করেন, নালিশী ভূমি বাসারা মৌজা বিএস ২৫৩ নং খতিয়ানের বিভিন্ন দাগে বিবাদী পক্ষ প্রবেশ করে গাছ গাছালি কেটে নেওয়ার আশংকা রয়েছে। এমনকি নালিশী ভূমিতে জোরপূর্বক প্রবেশ করে যেন গাছ গাছালি কেটে নিতে না পারে সে জন্য শান্তিরক্ষার নিমিত্তে ১৪৫ চেয়ে নিষেধাজ্ঞা কামনা করেন বাদী মনোয়ারা মিনু গং।
গত ১৮ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার এমন অভিযোগের দায়িত্ব পেয়ে সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার শাহাদাত হোসেন সরেজমিন তদন্তে যান। সেখানে সাবেক চেয়ারম্যান প্রার্থী সেলিম মিয়া, আবুল খায়ের মাষ্টার, সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম ও বর্তমান ওয়ার্ড মেম্বার মো. সুমনসহ এলাকার সালিসদারগণের উপস্থিতিতে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠকে বাদীপক্ষ অভিযোগ অনুযায়ী কোন দলিল উপস্থাপন করতে পারেনি।
বাদীপক্ষের দাবি অনুযায়ী ৩০০৮ দাগে আরজিতে উল্লেখ করেছেন ২৩ শতাংশ ভূমি অথচ মাঠ পর্চা ও ওয়ারিশ সনদ অনুযায়ী পাবে ১৫ শতাংশ ভূমি। বিএস ৩০০৯ দাগে বাগান দাবি করে ৯ শতাংশ অথচ মাঠ পর্যায়ের জরিপ অনুযায়ী পাবে ৬ শতাংশ ভূমি। ৩০১০ দাগে বাড়ীর অংশে দাবি ১৮ শতাংশ কিন্তু মাঠ পর্চা জরিপ অনুযায়ী পাবে ১৭ শতাংশ ভূমি।
উপস্থিত সালিসদারদের নিয়ে তহসিলদার শাহাদাত হোসেন সরেজমিনে উভয় পক্ষের নিধারিত দখলীয় অংশে সীমানা নির্ধারন করেন। উভয় পক্ষের ভোগদখলে কোন দ্বিমত পোষণের অভিযোগ পায়নি। এমনকি বাদী পক্ষের অভিযোগ অনুযায়ী গাছ গাছালি কেটে নেওয়ার এমন কোন আশংকা প্রমানিত হয়নি।
বরং দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আবুল কালাম মাষ্টার প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে বাসায় পড়ে আছেন। এ সুযোগে তার বসত ঘরের সামনে অবৈধ ভাবে স্থাপনা উঠিয়ে তাকে এক ঘরে করে রেখেছে। বাড়ীর মূল চলাচলের পথ আবদ্ধ করে রেখেছে। বাড়ীতে মাষ্টার ও তার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ থাকে না। তাদের আত্মীয় স্বজনরা বাড়ীতে প্রবেশ করলে তাদেরকে উদ্দেশ্য করে গালমন্দ করে। যে কারনে বাড়ির অপথে স্কুলের পাশ দিয়ে শুঁড়ু পথ ব্যবহার করে যাতায়াত করতে বাধ্য হয়েছে। যথারীতি বাদীপক্ষ মনোয়ারা মিনু গংরা মাষ্টারকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ, হুমকি দুমকি পদর্শন করে আসছে। এসব অভিযোগ ইউনিয়ন পরিষদে দায়ের করেও তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমানে মান সন্মান ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন মাষ্টার দম্পতি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সুমন মিয়া বলেন, তহসিলদারের সাথে আমরা সালিসদারগণ উভয় পক্ষের কথা শুনেছি এবং ভোগ দখল সঠিক পেয়েছি। বিবাদী আবুল কালাম মাষ্টারের বিরুদ্ধে আনিত শান্তি ভঙ্গ আশংকার অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যে প্রনোদিত।
এ বিষয়ে আবুল কালাম মাষ্টার বলেন, পুরো বাড়ীর তিনের দুই অংশের মালিক আমি আর খলিলুর রহমান গং তিনের এক অংশের মালিক। আমরা গত প্রায় তিন যুগ ধরে শান্তিপূর্ণ ভাবে বসবাস করে আসছি। ইতিপূর্বে প্রতিপক্ষ খলিলুর রহমান গংগদের বলে আসছি বাড়ী ভাগের জন্য। অথচ তারা সমাধানের পথ বেচে না নিয়ে বরং আমার চলাচলের পথে বাধা দিয়ে বিভিন্ন সময় গাছ গাছালি কেটে নিয়ে গেছে। এখন আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার পরিবারের সুনাম নষ্ট করে মানহানীর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। আমরা তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছি। তাই সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে সু-দৃষ্টি কামনা করছি।
বিবাদী মনোয়ারা মিনু বেগম বলেন, আমার দুই ভাই বিদেশে আছে যে কারনে আমাদের জায়গায় যেন প্রবেশ করে গাছ গাছালি কাটতে না পারে সে জন্য আমরা আদালতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে ১৪৫ দায়ের করেছি।
সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়ন ভূমি অফিসের তহসিলদার শাহাদাত হোসেন বলেন, আমি স্থানীয় ইউপি সদস্যসহ সালিসদারদের উপস্থিতিতে বিরোধকৃত ভূমি সরেজমিন তদন্ত করেছি। এখানে বাদীপক্ষ যে শান্তিভঙ্গের আশংকা নিয়ে মামলা করেছে এমন কোন আশংকা চোখে পড়েনি। বিবাদী পক্ষ বাড়ী মাপে আগ্রহী থাকলেও বাদীপক্ষ মনোয়ারা মিনু গংগদের চার দিনের মধ্যে তাদের সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছি।
প্রতিবেদক: জহিরুল ইসলাম জয়/
২২ ডিসেম্বর ২০২৫
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur