ফরিদপুরের ধর্ষিতা কিশোরী চম্পা আত্মহত্যা করেছে মর্মে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট প্রদান করায় ডাক্তারকে ‘জ্ঞানপাপী’ বলে উল্লেখ করেছেন আদালত। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর বিচারক আবদুর রহমান চম্পা ধর্ষণ ও হত্যা মামলার রায় ঘোষণাকালে এ কথা উল্লেখ করেন। মঙ্গলবার ফরিদপুরের জাকিয়া আক্তার চম্পা নামে নবম শ্রেণীতে পড়ুয়া এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৪ জনের ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলো মো. শামিম মণ্ডল, মো. বাবুল হোসেন ওরফে রাজিব হোসেন ওরফে বাবু হোসেন মাতুব্বর, জাহিদুল হাসান ওরফে জাহিদ হাসান এবং আকাশ মণ্ডল। এদের মধ্যে বাবুল হোসেনক ওরফে রাজিব হোসেন ওরফে বাবু হোসেন মাতুব্বর ও আকাশ মণ্ডল পলাতক রয়েছেন।
ফরিদপুর জেলার কানাইপুর গ্রামে ২০১২ সালের ১৩ ডিসেম্বর এই ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি সংঘটিত হয়। মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, চম্পা কানাইপুর পুরদিয়া হাইস্কুলের নবম শ্রেণীতে লেখাপড়া করত। আসামি শামীম চম্পাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে রাস্তাঘাটে উত্যক্ত করত। এ বিষয়টি চম্পা তার পরিবারকে জানালে শামীমের এ প্রস্তাব নাকচ করে তাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়। এরপর ঘটনার রাতে (সন্ধ্যা ৭টা ৩০মিনিটে) চম্পাকে তার চাচাত বোন পপির গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান থেকে আসামিরা মামলার সাক্ষীগণের সামনে থেকে ডেকে নিয়ে যায়।
রাত ৯টা অবধি চম্পা গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ফিরে না এলে তাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন তার পরিবারের সদস্যরা। এরপর ১৪ ডিসেম্বর ভোর সাড়ে ৬টায় কাশিমাবাদ গ্রামের সোহরাব শেখের মেহগনি বাগানে ঝুলন্ত অবস্থায় চম্পার লাশ পাওয়া যায়।
এ ঘটনায় ১৫ ডিসেম্বর মো. হাসিবুল ইসলাম বাদী হয়ে ফরিদপুর কোতয়ালী থানায় উল্লেখিত আসামিদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন এবং দণ্ডবিধি আইনে এই মামলাটি দায়ের করেন।
দণ্ডিত আসামি বাবুল হোসেন ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট স্বীকারোক্তিতে জানান, সে ঘটনার রাতে শামীম মণ্ডল চম্পাকে ডেকে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে সে (বাবুল) ও অপর দুই আসামি জাহিদ ও আকাশও তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।
ধর্ষণের পর দণ্ডিতরা ঘটনাস্থলে বসে চম্পাকে গলাচেপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে তার লাশ মেহগনি গাছে উঠিয়ে কাপড়ের ফাঁস দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে যার যার বাড়ি চলে যান।
২০১৩ সালের ২০ মে এ মামলায় চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবুল খায়ের। মামলাটিতে মোট ৩২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৩০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
মামলাটিতে দুটি ধারাতেই আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক দুটি ধারাতেই তাদের দণ্ডিত করেছেন। দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় উল্লেখিত আসামিদের প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ড এবং বিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ মামলার অপর আসামি মৌসুমির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হয়।
নিউজ ডেস্ক ||আপডেট: ০৮:১১ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার
এমআরআর
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur