চট্টগ্রামের হালিশহরে ইয়াছিন আরাফাত আবির নামে পাঁচ বছরের এক শিশুকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে চারজনের ফাঁসির আদেশ দিয়েছে আদালত। একই রায়ে শিশু অপহরণের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত চারজনকে আবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। বেখসুর খালাস দেয়া হয়েছে অভিযুক্ত রাবেয়া নামে এক নারীকে।
মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালের বিচারক মহিতুল হক এনাম চৌধুরী এ রায় প্রদান করেন।
ট্রাইব্যুনালের পিপি অ্যাডভোকেট আইয়ূব খান বলেন, ‘শিশু আবীরকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে অভিযুক্ত পাঁচ আসামির মধ্যে রাবেয়া ছাড়া অন্য চারজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যু কার্যকর করার আদেশ দিয়েছে আদালত। একই রায়ে শিশু অপহরণের দায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত চারজনকে আবার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও প্রত্যেককে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে।’
ফাঁসির দণ্ডিতরা হলেন, ফারুক (২৫), সুজন (২৪), ইদ্রিস মিয়া (২৮) ও আনোয়ার (২৪)। আর ইদ্রিসের স্ত্রী রাবেয়া বেগমকে (২৩) বেখসুর খালাস দেয়া হয়। এদের মধ্যে জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক রয়েছেন সুজন।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ১৭ ডিসেম্বর বিকেলে হালিশহর আবাসিক এলাকার বি-ব্লকের বাসিন্দা রিয়াজ উদ্দিনের ছেলে আবির তার বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধূলার করার সময় অপহরণের শিকার হয়। আবির স্থানীয় প্রাণহরি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। পরদিন ১৮ ডিসেম্বর আবিরের লাশ সীতাকুন্ডের ফৌজদারহাট এলাকা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এদিনই শিশু আবীরের পিতা রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে নগরীর হালিশহর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ২০১৩ সালের ২৪ অক্টোবর পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট আদালতে জমা দেয়া হয়। ২০১৪ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এ মামলার বিচার শুরু হয়ে এটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে আসলে ২৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ২১ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মঙ্গলবার রায় প্রদান করা হয়।
এ ঘটনার সাত মাস পর দণ্ডিত চারজন ও খালাসপ্রাপ্ত রাবেয়াকে গ্রেপ্তার করে হালিশহর থানা পুলিশ। এসময় তারা পুলিশকে ও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানিয়েছেন, নগরী থেকে পাঁচ বছরের শিশু ইয়াছিন আরাফাত আবিরকে অপহরণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। ঘুমের ওষুধ খাওয়ানোর পরও কান্না থামাতে ব্যর্থ হয়ে অপহরণকারীরা আবিরের মুখে চাদর চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলে।
জানা গেছে, আসামি ফারুক রিয়াজ উদ্দিনের ভবনের ভাড়াটিয়া ছিল। পরিচয়ের সূত্র ধরে সুজন ও ইদ্রিস ফারুকের বাসায় প্রায়ই আসা যাওয়া করত। তিনজন মিলে আবিরকে অপহরণ করে তার বাবার কাছ থেকে টাকা পয়সা আদায়ের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আবিরকে কৌশলে ফারুক সিএনজি অটোরিকশায় তুলে ইদ্রিসের বাসায় নিয়ে যায়। এরপর ইদ্রিসের স্ত্রী রাবেয়াকে আবিরের মা সাজিয়ে অটোরিকশায় করে অলংকার মোড়ে নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার পথে জুসের সঙ্গে তাকে ঘুমের ট্যাবলেট খাওয়ানো হয়। অংলকার মোড়ে যাবার পর অটোরিকশায় উঠে আনোয়ার।
অন্যদিকে সুজন অলংকার মোড় থেকে সিলেট যাবার জন্য তিনটি টিকেটও কিনে। টিকেটের সময় অনুযায়ী বাস ছাড়ার আগ পর্যন্ত সময়ে তারা অটোরিকশা নিয়ে ঘোরাঘুরি করতে থাকে। তারা কুমিরা এলাকায় গেলে আবির শব্দ করে কান্নাকাটি শুরু করে। বারবার কান্না থামানোর চেষ্টা করেও অপহরণকারীরা ব্যর্থ হয়। এরপর অটোকিশার ভেতরেই চাদর চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়।
নিউজ ডেস্ক ।। আপডেট: ০৪:২৫ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার
ডিএইচ
Chandpur Times | চাঁদপুর টাইমস Top Newspaper in Chandpur