Home / চাঁদপুর / চাঁদপুরে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব
চাঁদপুরে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব

চাঁদপুরে রোটা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব

আইসিডিডিআরবিতে ১৫ দিনে দেড় সহস্রাধিক রোগী ভর্তি

চাঁদপুরে রোটা ভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে গেছে। ফলে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিন’ই মতলব আইসিডিডিআরবিতে শতাধিক রোগী ভর্তি হচ্ছে। এসব রোগীর মধ্যে শিশুর সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

আবহাওয়া পরিবর্তন অর্থাৎ শীতের আবির্ভাবের সাথে সাথে রোটা ভাইরাস (ডায়রিয়া) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০০ থেকে ১২০ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী আইসিডিডিআরবিতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। তবে চিকিৎসা নিতে এসে কোনো রোগী মারা যায়নি বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।

হাসপাতালের দেয়া তথ্যানুযায়ী গত ১ নভেম্বর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিনে মতলব আইসিডিডিআরবিতে ১ হাজার ৬শ’ ৮৯ জন ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৩০ জন রোগী ভর্তি হচ্ছে। ভর্তিকৃত রোগীদের মধ্যে শূন্য থেকে ২ বছর বয়সী ১ হাজার ২শ’ ১৮ জন, ৩ থেকে ৫ বছর বয়সী শিশু ১২২ জন এবং ১৫ বছরের ঊর্ধ্বে বিভিন্ন বয়সী ৩শ’ ৬ জন। গত ১৫ দিনের মধ্যে ৭ নভেম্বর সর্বোচ্চ ১শ’ ৩১ জন রোগী ভর্তি হয়।

গত বছরের তুলনায় এ বছর রোগী ভর্তি হয়েছে বেশি। ২০১৪ সালের ১ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিনে ডায়রিয়া আক্তান্ত রোগী ভর্তি হয়েছিল ১ হাজার ২শ’ ১৯ জন। গড়ে প্রতিদিন ভর্তি হওয়া ৮১ জন। প্রতি বছরের নভেম্বর, ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসেই আবহাওয়াজনিত কারণে অর্থাৎ শীতের সাথে সাথে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী বেড়ে যায়।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা আরো বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। হাসপাতালের ৩টি কক্ষে ধারণক্ষমতা ৭০ রোগীর। বারান্দাসহ ১৫০ রোগী চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের ৩টি কক্ষই ডায়রিয়া রোগীতে ঠাসা। স্থান সংকুলান না হওয়ায় বারান্দায় বেড বিছিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

চাঁদপুর জেলা সদর, ফরিদগঞ্জ, হাইমচর, হাজীগঞ্জ, কচুয়া, শাহরাস্তি, মতলব উত্তর ও দক্ষিণ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাঞ্ছারামপুর, কুমিল্লা জেলার বরুড়া, ব্রাহ্মবাড়িয়া, বুড়িচং, চান্দিনা, চৌদ্দগ্রাম, কুমিল্লা সদর, কুমিল্লা সদর উত্তর, দাউদকান্দি, দেবিদ্বার, হোমনা, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ, মুরাদনগর, নাঙ্গলকোট, তিতাশ উপজেলা, কক্সবাজার সদর, ফেনী, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্ডিয়া, লক্ষ্মীপুর জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি উপজেলা, মুন্সীগঞ্জ জেলা সদর, নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ, চাটখিল, সোনাইমুড়ী এবং শরীয়তপুর জেলার ভেদরগঞ্জ ও নড়িয়া থেকে আসা ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিচ্ছে।

গত ১৫ দিনে চাঁদপুর সদর, হাজীগঞ্জ, ফরিদগঞ্জ, কুমিল্লার বরুড়া, লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার রোগী বেশি ভর্তি হয়েছে।

হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মুদাফ্ফগঞ্জ উপজেলার শিশু মারিয়া আক্তারের (৫) মা, চান্দিনা উপজেলার পর্শি করের (১) মা পপি কর ও রায়পুর উপজেলার রাবেয়া আক্তারের (১) মা রেহানা আক্তার জানান, এ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবার মান খুবই ভাল। ডাক্তাররা রোগীদের অতি যতœসহ সেবা দিচ্ছে। হাসপাতাল থেকে রোগীদের জন্য ওরস্যালাইন, সুজি ও বেবিজিংক ট্যাবলেট সরবরাহ করছে।

আইসিডিডিআর’বির সিনিয়র মেডিসিন অফিসার ডা. চন্দ্র শেখর দাস জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়েছে, এটি শীতকালীন ডায়রিয়া। ভাইরাসজনিত কারণে, দুষিত খাবার ও দুষিত পানি পান করা, ময়লা মুখে দেওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় শিশুরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। তবে এসব রোগীদের নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সাথে সাথে সুস্থ করে তুলতে চিকিৎসকরা তাদের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকেন। ৫ জন ডাক্তার, ৬ জন সিনিয়র নার্স, ২০ জন স্বাস্থ্য সহকারী ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকেন। ভর্তি হওয়া রোগীদের সুস্থ হয়ে ওঠতে ৫ থেকে সর্বোচ্চ ৭ দিন সময় লাগে।

শূন্য থেকে ৬ মাস বয়সী শিশুদের পরিমাণমতো খাবার স্যালাইনের পাশাপাশি মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো, ৭ মাস থেকে ৫ বছর বয়সী শিশুদের পরিমাণমতো খাবার স্যালাইন, একটি করে বেবিজিংক ট্যাবলেট এবং বাড়তি খাবারের মধ্যে সুজি, খিচুরি, ডাবের পানি, চিড়াসহ তরল খাবার খাওয়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

এছাড়া ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে বাসা-বাড়িতে তৈরি ওরস্যালাইন মিশিয়ে পরিমাণমতো খাওয়াতে হবে। ডায়রিয়া আক্রান্ত শিশু যদি পানির মতো পাতলা মলত্যাগ করে, বুকের দুধ টেনে খেতে না পারে এবং অতিমাত্রায় পিপাসা ও ঘনঘন বমি, জ্বর বা পায়খানার সাথে রক্ত দেখা দিলে দ্রুত নিকটস্থ স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়ে ভর্তি করার পরামর্শ দেন তিনি।

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

||আপডেট: ০২:৪২ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০১৫, মঙ্গলবার

এমআরআর