Home / উপজেলা সংবাদ / শাহরাস্তি / চাঁদপুরে স্বামীর দায়ের করা যৌতুক মামলায় স্ত্রী কারাগারে
স্বামীর

চাঁদপুরে স্বামীর দায়ের করা যৌতুক মামলায় স্ত্রী কারাগারে

স্বামীর দায়ের করা যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারা মামলায় স্ত্রীকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরাস্তির আমলী আদালত, চাঁদপুর। ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরাস্তির আমলী আদালতের বিচারক তন্ময় কুমার দে এই আদেশ দেন।

মামলার আসামি কামরুন নাহার (৩২) চাঁদপুর শাহরাস্তি উপজেলার বেরনাইয়া গ্রামের মজিবুর রহমানের স্ত্রী। তার স্বামী মজিবুর রহমান বিগত ২০ জুলাই ২০২৫ বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, শাহরাস্তির আমলী আদালত, চাঁদপুরে যৌতুক নিরোধ আইনের ৩ ধারায় সি আর-৩৭১/২০২৫ নং মামলা দায়ের করেন। শাহরাস্তির আমলী আদালতের বিচারক তন্ময় কুমার দে উক্ত মামলায় বিগত ২১/৮/২০২৫ তারিখে আসামী কামরুন নাহার এর বিরুদ্ধে সমন দেন। সমন জারির পরেও আসামি আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় বিগত ০৫/১০/২০২৫ তারিখে বিচারক আসামির বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ান জারি করেন। আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানার নির্দেশের পর শাহরাস্তি থানা পুলিশ আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে কামরুন নাহার এর অবস্থান নির্ণয় করে ৩ নভেম্বর সন্ধায় শাহারাস্তির কালি বাড়ি এলাকা থেকে তাকে আটক করে। পরে পুলিশ ৪ নভেম্বর মঙ্গলবার আসামীকে আদালতে প্রেরন করেন। ঐদিন আসামি কামরুন নাহার আদালতে জামিন চাইতে গেলে বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শাহরাস্তির আমলী আদালতের বিচারক তন্ময় কুমার দে তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাদী পক্ষের আইনজীবী ছিলেন চাঁদপুর বারের বিজ্ঞ সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল মোল্লা।

স্ত্রী কামরুন নাহার এর বিরুদ্ধে যৌতুক নিরোধন আইনের -৩ ধারায় দায়ের করা মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২৪ সালের ১৯ জুন শাহরাস্তি উপজেলার উল্লাশ্বর গ্রামের আবুল কালামের কন্যা কামরুন নাহার এর সঙ্গে একই উপজেলার বেরনাইয়া গ্রামের আবুল কাশেমের পুত্র মজিবুর রহমানের সাথে ২ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য্যে বিবাহ হয়। বিবাহের সময় মজিবুর রহমান ও তার অভিভাবকগন কামরুন নাহার কে প্রায় ৪ লক্ষ টাকার স্বর্ণ অলংকার দেন এবং মেহমানদারী করাতে ২.৫ লক্ষ টাকা খরচ করেন। বিবাহের পর থেকে স্ত্রী কামরুন নাহার তার স্বামীকে নগদ অর্থ, জমিজামা লিখে দিতে ও শহরে তার নামে ফ্ল্যাট কিনে দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। কামরুন নাহার সুকৌশলে তার স্বামী মজিবুর রহমানের নিকট থেকে বিগত ৯/০৮/২০২৪ইং তারিখে ১,৯৭,০০০/-(এক লক্ষ সাতানব্বই হাজার) টাকা এবং ১০/০২/২০২৫ইং তারিখে ১,৬০,০০০/-(এক লক্ষ ষাট হাজার) টাকা ব্যক্তিগত প্রয়োজনের কথা বলে ফেরত দেওয়ার অঙ্গীকারে করে আর ফেরত দেয়নি।

স্ত্রী কামরুর নাহার বিভিন্ন পরপুরুষের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে আসক্ত ছিল। সারাক্ষন মোবাইলের ইমোতে ও হোয়াটসঅ্যাপে কথোপকথনে ব্যস্ত থাকত। কামরুন নাহার বিবাহের সময় তার স্বামীকে আগে একটি বিয়ে হয়েছে বললেও তার স্বামী জানতে পারে যে ইতিপূর্ব তার স্ত্রী তিনটি বিবাহ হয়েছে। স্ত্রী কামরুন নাহার ১০ শতাংশ জায়গা তার স্বামীর দুইটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তার নিজ নামে লিখে দিতে ও শহরে একটি ফ্ল্যাট যৌতুক হিসেবে কিনে দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। এই নিয়ে সংসারে চলতে থাকে চরম পর্যায়ে দাম্পত্য কোলাহল। ব্যবসায়িক কাজে রাখা স্বামীর ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা কাউকে না বলে সে বাপের বাড়ি চলে যায়। স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করলেও স্ত্রী কামরুন নাহার সবাইকে গালাগালি করে কাউকে পাত্তা দেয়নি।

স্বামী মজিবুর রহমানের পক্ষের চাঁদপুর বারের সিনিয়র আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল মোল্লা বলেন যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮ এর ৩ ধারায়-

যদি বিবাহের কোনো এক পক্ষ, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে, বিবাহের অন্য কোনো পক্ষের নিকট কোনো যৌতুক দাবি করেন, তাহা হইলে উহা হইবে এই আইনের অধীন একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কিন্তু অন্যূন ১ (এক) বৎসর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হইবেন। স্ত্রী যদি যৌতুক দাবি করে তাহলে স্ত্রীর বিরুদ্ধে যৌতুকের মামলা দায়ের করতে কোনো আইনি বাধা নেই। আমরা তাই করেছি। আদালত আমাদের মামলা আমলে নিয়েছে।

এ বিশেষার শাহরাস্তি উপজেলার বেরনাইয়া গ্রামের স্থানীয়রা জানান কামরুন নাহার সংসার করতে এসে এই ভাবে সংসারে অশান্তি করাটা ঠিক করে না। তার মধ্যে এত চাহিদা। এর আগেও তিনটা সংসার ভেঙ্গেছে। এসব মহিলার আইনের মাধ্যমে উপযুক্ত বিচার হোক।

এদিকে চাঁদপুরের সুশীল সমাজের দাবি বর্তমানে পুরুষ শাসিত সমাজে পুরুষরা নারী দ্বারা নির্যাতিত। সমাজে পুরুষ নির্যাতন বর্তমানে একটি ভয়ঙ্কর রূপে পরিণত হয়েছে। সমাজে নারী কর্তৃক পুরুষ নির্যাতিত বা নিগৃহীত হলে সেটা অনেকে লোক লজ্জ্বায় প্রকাশ করে না বা সমাজ সেটাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করে না। সমাজে অনেক পুরুষই স্ত্রীর যন্ত্রণায় নীরবে কাঁদেন। লোকচক্ষুর আড়ালে গিয়ে চোখ মোছেন; কিন্তু দেখার কেউ নেই। বলারও কোন উপায় নেই। সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, নৈতিক স্খলন, লোভ-লালসা, উচ্চবিলাসিতা, পরকীয়াই হচ্ছে এর মুল কারন।আমরা অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই মুজিবুর রহমানকে ।সে আইনগত ভাবে অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছে। মাননীয় আদালতকেও ধন্যবাদ সঠিক সিদ্ধান্ত দেয়ার জন্য। এই জঘন্য অপরাধের জন্য একজনকে শাস্তি দিয়ে আরও দশজনকে সতর্ক করে দেয়ার জন্য। আর আদালত প্রমাণ করে দিল আইন সবার জন্য সমান।

প্রতিবেদক: কবির হোসেন মিজি/
৫ নভেম্বর ২০২৫